অস্ট্রেলিয়া আগামী বছরের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেঁধে দিয়েছে। মোট ২ লাখ ৭০ হাজার শিক্ষার্থী নেবে দেশটি। শিক্ষার্থী সংখ্যা বেঁধে দেওয়ায় অনেকে অস্ট্রেলিয়ায় পড়ার সুযোগ পাবেন না ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও। অস্ট্রেলিয়ায় যাঁরা পড়তে যেতে চান কিন্তু সুযোগ পাবেন না, তাঁদের গন্তব্য হতে পারে নিউজিল্যান্ড। কম ভিসা ফি, সাশ্রয়ী জীবনযাত্রার খরচ এবং স্বীকৃত যোগ্যতাসহ নিউজিল্যান্ড অস্ট্রেলিয়ার বিকল্প দেশ হতে পারে উচ্চশিক্ষার জন্য। অনেকের কাছে উচ্চশিক্ষার জন্য আকর্ষণীয় বিকল্প হতে পারে নিউজিল্যান্ড।
রেকর্ড অভিবাসন এবং আবাসনে চাপের কারণে অস্ট্রেলিয়া ২০২৫ সালে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেঁধে দিয়েছে। কেন নিউজিল্যান্ড আসন্ন সময়ে উচ্চশিক্ষার জন্য পছন্দের গন্তব্য হতে পারে, তার ৭টি কারণ রয়েছে।
স্টুডেন্ট ভিসা আবেদন ফি সাম্প্রতিক সময়ে বাড়িয়েছে নিউজিল্যান্ড। এ বছরের ১ অক্টোবর প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে ভিসা ফি, ৩৭৫ থেকে বেড়ে ৭৫০ নিউজিল্যান্ডের ডলার হয়েছে ভিসা প্রক্রিয়াকরণ ফি। ভিসা ফি বাড়ানো সত্ত্বেও অস্ট্রেলিয়ার ভিসা ফি থেকে এখনো নিউজিল্যান্ডের ফি উল্লেখযোগ্যভাবে কম। আন্তর্জাতিক ছাত্রদের ভিসা আবেদন প্রক্রিয়াকরণে গড় সময় ৩১ কার্যদিবস (প্রায় ছয় সপ্তাহ), নিউজিল্যান্ড এ কাজ সহজ করতে দ্রুততম স্টুডেন্ট ইমিগ্রেশন ভিসানীতি চালু করেছে।
জীবনযাত্রার খরচের কারণেও দেশটি অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম। নিউজিল্যান্ডে বসবাসের গড় খরচ ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ নিউজিল্যান্ড ডলারের মধ্যে। ওয়েলিংটন এবং অকল্যান্ডের মতো শহরে জীবনযাত্রার খরচ বেশি। বিশ্বের অন্য শহরগুলোর সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার শহরের তুলনায় নিউজিল্যান্ডের শহরের জীবনযাপন খরচ অনেক কম।
পড়াশোনার জন্য বিদেশের অন্য জনপ্রিয় গন্তব্যের তুলনায় নিউজিল্যান্ডের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো মানের সঙ্গে আপস না করেই সাশ্রয়ী মূল্যে শিক্ষা প্রদান করে। টিউশন ফি এবং জীবনযাত্রার খরচ তুলনামূলক অনেক কম।
এ ছাড়া নিউজিল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ডিগ্রির কোর্স অফার করে বিশ্বের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ধারাবাহিকভাবে ভালো জায়গায় আছে। জনপ্রিয় কোর্সের মধ্যে রয়েছে আর্টস অ্যান্ড মিডিয়া হসপিটালিটি, ফিশিং, ফরেস্ট্রি অ্যান্ড মাইনিং, কনস্ট্রাকশন, ইনফ্রাস্ট্রাকচার, ব্যবসা, স্বাস্থ্য, আইটি এবং টেলিকমিউনিকেশন, শিক্ষা, সামাজিক বিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং। নিউজিল্যান্ডের একটি প্রতিষ্ঠানের পড়াশোনা বিশ্বব্যাপী সুযোগের দরজা খুলে দিতে পারে শিক্ষার্থীদের জন্য।
বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোর তুলনায় নিউজিল্যান্ডে তুলনামূলকভাবে শিক্ষাব্যবস্থার খরচ কম রয়েছে এবং মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদান করা হয়। টিউশন ফি এবং জীবনযাত্রার অন্য খরচ তুলনামূলক সস্তা। তাই দেশটি উপমহাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য সাশ্রয়ী শিক্ষা গন্তব্য হিসেবে জায়গা করে নিচ্ছে। তা ছাড়া এমন অনেক স্কলারশিপ আছে, যেগুলো শুধু নিউজিল্যান্ড আন্তর্জাতিক ছাত্রদের জন্যই দিয়ে থাকে এবং এসব স্কলারশিপ শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার অন্য খরচ কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।
নিউজিল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের গবেষণা উদ্যোগের জন্য বিশ্বে পরিচিত, বিশেষ করে পরিবেশবিজ্ঞান, কৃষি এবং বায়োটেকনোলজির মতো ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যতমও। দেশটি উদ্যোক্তা এবং নতুন প্রযুক্তিকে উৎসাহিত করে আসছে নিয়মিত। এর ফলে শিক্ষার্থীদের অত্যাধুনিক প্রকল্পগুলোতে জড়িত হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে।
নিউজিল্যান্ড বিদেশি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ধাপ ও পড়াশোনার সময়ের ওপর নির্ভর করে তিন বছর পর্যন্ত দেশে থাকার এবং কাজ করার অনুমতি দেয়। এর ফলে শিক্ষার্থীরা নিউজিল্যান্ডে নানা কাজে সুযোগ পান।
নিউজিল্যান্ড হলো বিশ্বের নিরাপদ দেশগুলোর মধ্যে একটি, সেখানে বিদেশিদের স্বাগত জানানো হয় বন্ধুত্বপূর্ণভাবে। একাডেমিক প্রোগ্রাম ছাড়াও নিউজিল্যান্ড নানা ক্ষেত্রে উত্সাহী শিক্ষার্থীদের অনেক সুযোগ করে দেয়। শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত উদ্দীপক হিসেবে কাজ করতে পারেন।
সামগ্রিকভাবে সহজ ভিসাপ্রক্রিয়া, কোর্সের পর ওয়ার্ক পারমিটের প্রাপ্যতা এবং নিরাপদ পরিবেশসহ নানা কারণে অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে নিউজিল্যান্ড একটি কার্যকর বিকল্প হতে পারে। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জন্য বিদেশ গন্তব্যের ক্ষেত্রে আদর্শ হতে পারে নিউজিল্যান্ড। বিশ্বব্যাপী শিক্ষার গতিধারা ক্রমাগত পরিবর্তিত হচ্ছে—এ পরিপ্রেক্ষিতে নিউজিল্যান্ড আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে আরও জনপ্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।