পূজা-পার্বণ বা উৎসব অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-স্বজন বা পরিবার নিয়ে হয়তো আপনি কোন রেস্টুরেন্টে খেতে গেছেন। খুব স্বাভাবিকভাবেই সেখানে গেলে আপনার সামনে ওয়েটার এগিয়ে আসবে বিভিন্ন খাবারের মূল্য তালিকা নিয়ে। এটা সাধারণ ব্যাপার যে সেই তালিকা দেখে আপনি নির্দিষ্ট পরিমাণ খাবারের অর্ডার করবেন।
হয়তো আপনি রেস্টুরেন্টে কোনো চিকেনের পদ অর্ডার করেছেন। কিন্তু দেখা গেল ওয়েটার যখন আপনার কাছে খাবারটি নিয়ে এলো তখন হয়তো দেখলেন সেটি মটনের। স্বাভাবিকভাবেই আপনি একটু অবাক হবেন। চিংড়ি, ভেটকি বা তপসের হয়তো কোন কিছু অর্ডার করলে আপনার মিলতে পারেন নিরামিষ কোন পদ। এক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই আপনার মন মানসিকতা পরিবর্তন হতে বাধ্য।
কিন্তু আমাদের আজকের এই প্রতিবেদনে এমন একটি রেস্টুরেন্টের নাম আমরা ঘোষণা করতে যাচ্ছি যেখানে এই ভুল খাবার পরিবেশন করাটাই নিয়ম। আপনি ওয়েটারকে দেখে এক ধরনের খাবার অর্ডার করলেন কিন্তু পাতে এলো সম্পূর্ন ভুল এক খাবার।তবে ভুল পদের জন্য সেই রেস্তরাঁয় কোনও অশান্তি করা যায় না। বরং হাসিমুখে খাবারের থালা হাতে তুলে নেন গ্রাহকেরা। রেস্তরাঁ কর্মীদের সঙ্গে মিলেমিশে হাসিঠাট্টায় কাটিয়ে দেন বাকিটা সময়। সঙ্গে চলে ‘ভুল’ খাবারের পেটপুজো।
না এটা কোন গল্পকথা নয় বা সাহিত্য থেকে তুলে আনা কোন বিষয়বস্তু নয়। খোদ জাপানি এরকম একটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে যেখানে যা কিছু আপনি অর্ডার করুন না কেন আপনার পাতে আসবে বিপরীত একটি খাবার। এখানে যে সমস্ত মানুষরা এখানে খেতে আসেন তারা ভেবে পান না কি ধরনের খাবার তাদের পাতে আসতে চলেছে।জাপানের এই অদ্ভুত ধরনের রেস্তোরাঁর নাম ‘রেস্টুরেন্ট অফ মিসটেকেন অর্ডার্স’। নামেই লুকিয়ে রয়েছে তার কারসাজি। অর্ডার অনুযায়ী ভুল খাবারই এই রেস্তরাঁর ‘ট্রেন্ড’। কিন্তু কেন এমন হয়?
আসলে রেস্তরাঁর ‘ভুল’গুলি একটিও ইচ্ছাকৃত নয়। তা সেখানকার কর্মীদের বাধ্যবাধকতা। কারণ তাঁরা প্রত্যেকেই ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত। তাঁদের ভুলে যাওয়ার রোগ আছে। এ প্রসঙ্গে বিশেষ উল্লেখযোগ্য ডিমেনশিয়া গোটা জাপানেই একটি গুরুতর সমস্যা। দেশটিতে জন্মের হার অত্যন্ত কম। ফলে সমাজে বয়স্কদের আধিক্য রয়েছে। আর বয়স্ক নাগরিকদের অধিকাংশ ডিমেনশিয়া রোগে আক্রান্ত।এই ডিমেনশিয়ার আঁচলের নীচেই জাপানের ‘রেস্টুরেন্ট অফ মিসটেকেন অর্ডার্স’। রেস্তরাঁটির মালিক শিরো ওগুনি। ইচ্ছা করেই তিনি ডিমেনশিয়া আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে এই রেস্তোরাঁ চালু করেছেন। তাদের দিয়েই খাবার পরিবেশন করা হয় এবং তাদের দিয়েই রান্না করা হয়ে থাকে।
জাপানে এই রোগে রোগা অধিকাংশ বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা যাতে হাসিখুশি ভাবে বাকি জীবনটা সুন্দরভাবে কাটাতে পারেন। তার জন্য রেস্তোরাঁ এই বিশেষ ব্যবস্থা। তবে এখানে খেতে আসা গ্রাহকরা কোনদিনই রেস্তোরায় কোন ঝামেলা বা গন্ডগোল করেননি। হাসিমুখে তারাও এই সকল খাবারগুলি গ্রহণ করে যা তারা অর্ডার করেনি। রাধুনী থেকে শুরু করে ওয়েটার এবং খেতে আসা সমস্ত সাধারণ ক্রেতারা সব সময় খুশি হয়েই ভুলে ভরা এই আহার গ্রহণ করেন।
Like this:
Like Loading...