শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৬ পূর্বাহ্ন

দুবলার চরে রাস পূজা

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৪

সুন্দরবন সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের দুবলার চরের আলোর কোলে আজ বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী শত বছরের ঐতিহ্যবাহী রাস পূর্ণিমার পূজা ও পুণ্যস্নান। তবে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের স্বার্থে অন্যান্য বারের মতো এবারও পুণ্যার্থী ছাড়া অন্য কেউ ওই সময় সুন্দরবনে ভ্রমণ করতে পারবেন না। এ ছাড়া এবারও এ উৎসবকে কেন্দ্র করে হচ্ছে না রাসমেলা। ২০২১ সাল থেকে রাসমেলা বন্ধ রয়েছে।

এদিকে, বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে এবারও রাস পূর্ণিমার আড়ালে পূণ্যার্থীর ছদ্মবেশে অসাধু ব্যক্তিরা সুন্দরবনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে হরিণ শিকারের টার্গেট নিয়েছে। তবে হরিণসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণী শিকার রোধে বন বিভাগ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের টহল কার্যক্রম বৃদ্ধিসহ কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করেছে।

বন বিভাগ জানিয়েছে, তিথি অনুযায়ী আজ বৃহস্পতিবার থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী দুবলারচরের আলোর কোল এলাকায় রাস পূর্ণিমার পূজা ও পুণ্যস্নান অনুষ্ঠিত হবে। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে সুন্দরবন উপকূলজুড়ে নেওয়া হচ্ছে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা।

দর্শনার্থী ও তীর্থযাত্রীদের জন্য বন বিভাগ নির্দিষ্ট পথ নির্ধারণ করে দিয়েছে। এসব পথে বন বিভাগ, পুলিশ, বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল দল তীর্থযাত্রী ও দর্শনার্থীদের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বন কর্মকর্তা কাজী মোহাম্মদ নুরুল করিম বলেন, ‘এবারও রাসমেলা হচ্ছে না। রাস পূর্ণিমার পূজা ও পুণ্যস্নান উপলক্ষে দুবলার চরে যাওয়ার জন্য সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বন বিভাগের পাস পারমিট নিয়েছে। সে ক্ষেত্রে নির্ধারিত রুট ব্যবহার করতে হবে। বন বিভাগের নির্দেশনা মানতে হবে।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পূজা ও পুণ্যস্নানের জন্য তীর্থযাত্রীরা নৌকায় করে দুবলার চরে যান। দর্শনার্থী ও তীর্থযাত্রীদের ১৪ থেকে ১৬ নভেম্বর এ তিন দিনের জন্য সেখানে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। প্রবেশের সময় অ্যান্টি পয়েন্টে লঞ্চ, ট্রলার ও নৌকার প্রবেশ ফি, অবস্থান ফি এবং লোকের সংখ্যা অনুযায়ী বিধি মোতাবেক রাজস্ব আদায় করে পাস দেওয়া হবে।

পাসের অনুমতি পেতে জাতীয় পরিচয়পত্রের কপিসহ তীর্থযাত্রীদের আবেদন করতে হবে। প্রতিটি অনুমতিপত্রে পথ উল্লেখ করা হবে। তীর্থযাত্রীরা পছন্দমতো একটি পথ ব্যবহার করতে পারবেন। বৃহস্পতিবার দিনের ভাটায় যাত্রা শুরু করতে হবে। শুধু দিনের বেলায় চলাচল করা যাবে।

এ ছাড়া আরও জানা গেছে, বন বিভাগের চেকিং পয়েন্ট ছাড়া কোথাও লঞ্চ, ট্রলার ও নৌকা থামানো যাবে না। ট্রলারে প্রয়োজনীয় সংখ্যক লাইভ জ্যাকেট সংরক্ষণ করতে হবে।

এদিকে, একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এবারও রাস পূর্ণিমায় অংশ নেওয়ার নামে এক শ্রেণির শিকারি ছদ্মবেশে হরিণ শিকারের টার্গেট করে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে প্রবেশের পরিকল্পনা চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে কিছু ব্যক্তি জেলের ছদ্মবেশে সুন্দরবনের গহিনে হরিণ শিকারের টার্গেট নিয়ে অনুপ্রবেশ করেছে। গত সপ্তাহে চাঁদপাই রেঞ্জ এলাকা থেকে হরিণ শিকারের ফাঁদ ও ট্রলারসহ ২০ জনকে আটক করেছে বন বিভাগ।

খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, ‘প্রতি বছর রাসমেলায় কয়েক হাজার মানুষ সুন্দরবনের দুবলার চরে সমবেত হন। তবে এ সময় হরিণ শিকারও বেড়ে যায়, যা বন বিভাগের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এজন্য ২০২২ সাল থেকে রাসমেলায় হিন্দু সম্প্রদায় ব্যতীত অন্যদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এবার যাতে হরিণসহ অন্য কোনও ধরনের বন্যপ্রাণী নিধন না হয় সেজন্য বন বিভাগ সজাগ দৃষ্টি রেখে টহল ব্যবস্থা জোরদার করেছে।’

জানা গেছে, গত তিন বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও মেলার অনুমতি নেই। কেবল রাস পূজা ও স্নানের জন্য সনাতন ধর্মাবলম্বীরা অনুমতি পাবেন। তীর্থযাত্রীদের বন বিভাগের নিদের্শনা মেনে চলতে হবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com