শরৎকাল মানেই কাশফুলের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। সাদা ও তুলোর মতো ফুলগুলো বছরের এই সময় দেশের বিভিন্ন নদীর পাড়ে কিংবা মাঠের ধারে উঁকি দেয়। প্রকৃতিপ্রেমীরা প্রকৃতির এই রূপ উপভোগ করতে ছুটে যান সেসব স্থানে।
তবে এখন শুধু প্রকৃতিপ্রেমীরা নন, সেলফিপ্রেমীরাই বেশি ঢুঁ মারছেন কাশবনে। সেলফি তুলে ফেসবুকে পোস্ট দিতে না পারলে যেন ঘুম হয় না অনেকেরই! বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের মাঝে কাশফুল একটি সোশ্যাল মিডিয়া ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে।
কাশফুলের সৌন্দর্য এখন শুধু প্রকৃতির নয়, সোশ্যাল মিডিয়ার অন্যতম ট্রেন্ডও বটে। সেলফিপ্রেমীদের ভিড়ে কাশফুল এখন পর্যটকদের কাছে এক নতুন আকর্ষণ। প্রকৃতি, প্রযুক্তি ও পর্যটন একসঙ্গে মিলে তৈরি করছে এক নতুন অভিজ্ঞতা। যা আমাদের সংস্কৃতি ও সৌন্দর্যকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করছে।
শিক্ষার্থী ও ফটোগ্রাফি প্রেমী আতিকুল রহমান বলেন, ‘কাশফুলের সৌন্দর্য আমাকে সবসময় মুগ্ধ করে। আমার কাছে কাশফুল হলো এক ধরনের প্রশান্তি। যখন শরতের মেঘলা আকাশ আর কাশফুলের ঢেউ মিলে যায়, তখন নিজেকে ধরে রাখতে পারি না।’
প্রযুক্তি পেশাজীবী মো. মিরাজ বলেন, ‘আমি সবসময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ক্যামেরায় বন্দি করতে ভালোবাসি। তবে এখন মনে হয়, কাশফুলের আসল সৌন্দর্য যেন সেলফির মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ছে। সবাই শুধু ছবি তুলছে আর পোস্ট করছে, প্রকৃতিকে উপভোগ করার সময়টা যেন কমে যাচ্ছে।’
পর্যটন উদ্যোক্তা সোহেল হাফিজ বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এই সেলফি ট্রেন্ড পর্যটন শিল্পের জন্য বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। কাশফুল দেখতে অনেকেই এখন ঢাকার আশপাশের জায়গা যেমন- আশুলিয়া, পুবাইল কিংবা জাহাঙ্গীরনগরে ভিড় করছেন।’
কাশফুলের সঙ্গে সেলফি তোলা ও তা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা সাম্প্রতিক সময়ে বেশ জনপ্রিয় ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে, বিশেষ করে শরৎকালে। ট্রেন্ডটি বেশ কয়েকটি কারণে বিশেষভাবে নজর কেড়েছে সবার-
কাশফুলের সাদা ও তুলোর মতো পুষ্পরাজি শরৎকালের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে বিশেষভাবে উজ্জ্বল করে তোলে। এর সঙ্গে সেলফি তোলার মাধ্যমে মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে নিজেদের একাত্মতা প্রকাশ করে।
কাশফুলের সৌন্দর্যের মধ্যে দাঁড়িয়ে তোলা ছবি, বিশেষ করে নীল আকাশ ও মেঘের পটভূমিতে, সোশ্যাল মিডিয়ায় অসংখ্য লাইক ও কমেন্ট কাড়ছে।
অনেকেই তাদের সেলফি পোস্টে বিভিন্ন হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করছেন, যেমন #কাশফুল, #শরৎ, #কাশফুল_সেলফি, #naturephotography, ইত্যাদি।
এই হ্যাশট্যাগগুলো ব্যবহার করে তারা পোস্টের মাধ্যমে নিজেদের ছবি আরও বড় পরিসরে ছড়িয়ে দিতে পারছেন। এতে করে কাশফুলের ট্রেন্ডটিও সোশ্যাল মিডিয়ায় আরও বেশি প্রচার পাচ্ছে।
কাশফুল এখন ইনফ্লুয়েন্সারদের ও সাধারণ সেলফিপ্রেমীদের কাছে বিশেষ ফটোশুট লোকেশন হয়ে উঠেছে। অনেকেই ফ্যামিলি গেট টুগেদার, বন্ধুদের আড্ডা, এমনকি প্রি-ওয়েডিং ফটোশুটেও কাশফুলের মধ্যে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে পছন্দ করছেন। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক- সব প্ল্যাটফর্মেই এই ছবি ছড়িয়ে পড়ছে।
কিছু জায়গায় কাশফুলের সঙ্গে সেলফি নিয়ে চ্যালেঞ্জও শুরু হয়েছে। ‘কাশফুলের সঙ্গে সেরা সেলফি’ নামে ফেসবুকে অনেক গ্রুপ ও পেজে চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা তাদের ছবি শেয়ার করছেন। এতে অনেকের মধ্যেই সৃজনশীলতা ও প্রতিযোগিতার মনোভাব তৈরি হচ্ছে।
কাশফুলের সেলফি ট্রেন্ডের কারণে দেশের বিভিন্ন কাশফুল ঘেরা স্থানে পর্যটকদের আগমন বেড়েছে। সেলফি প্রেমিকরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধারণ করার পাশাপাশি নিজেদের পোস্টের মাধ্যমে সেসব জায়গাকেও জনপ্রিয় করে তুলছেন।
এই সোশ্যাল মিডিয়া ট্রেন্ড শুধু ব্যক্তিগত আনন্দের জন্য নয়, বরং পর্যটন, ব্যবসা ও সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।