শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৭ পূর্বাহ্ন

লিসবোয়া

  • আপডেট সময় বুধবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৪

পয়সা বাঁচানো আমার জীবনের প্রধান লক্ষ্য তাই পাবলিক ট্র্যান্সপোর্টেশন আমার একমাত্র ভরসা। পাবলিক ট্র্যান্সপোর্টেশনের আরেকটা ব্যাপার হল একটি শহরকে একটু অন্য আলোয় দেখা। টুরিস্টদের জন্য ইয়োরোপের প্রতিটা শহর বিশেষভাবে সাজানো হয়েছে॥ তাই শুধু হোটেল এবং দর্শনীয় স্থানগুলোতে গেলে কিন্তু কিছুটা জাদুঘরে যাওয়ার মত হয়।

আমি দেখতে চাই শহরের আসল রূপ। আমি মিশে যেতে চাই প্রতিদিন কাজে যাওয়া মানুষটির সাথে। খেতে চাই রাস্তার পাশের যে কোনও খাবার। আর এজন্যই পাবলিক ট্র্যান্সপোর্টেশনের বিকল্প নেই। তবে এই পাবলিক ট্র্যান্সপোর্টেশনের নারি নক্ষত্র বুঝতে পারাটাও একটা বিশাল হোমওয়ার্ক। একেকটা শহর একেক রকম।

পর্তুগালের লিসবন শহরের ট্র্যন্সপোর্টগুলো খুব মজার। আমি ডে পাস কিনেছিলাম যা দিয়ে সর্বত্র বিতরন করতে পেরেছি। লিসবন পাহাড়ী এলাকা। খুব উঁচু নিচু, আর যেখানেই এই উঁচু নিচু ব্যাপারগুলো আছে সেখানেই ব্যবস্থা আছে ছোট্ট ট্রামের। হলুদ রঙের এই ক্ষুদে রেলগাড়িগুলো পাহাড়ের উপরে উঠিয়ে দেবে। চড়তে খুব মজা।

আর যদি হাতে থাকে কিছু শত বছরের পুরাতন রেসিপিতে তৈরী ঐতিহ্যবাহী পর্তুগিজ ডিমের টার্ট আর কাস্টার্ড তাহলে তো আর কথাই নেই।

শহর ঘুরতে বেড়িয়ে গিয়েছিলাম। আরকো দা রুয়া অগাস্টা এবং ঘোড়ার পিঠে রাজা হোসে প্রথমের একটি বড় মূর্তি দেখতে। মূল উদ্দেশ্য,  Praça do Comércio যা হল লিসবনের মধ্যে ভ্রমণের জন্য একটি মূল পরিবহন কেন্দ্র। স্কোয়ারের উত্তরে ট্রাম 15E পেয়েছি যা দিয়ে পরে বিখ্যাত বেলেমে গেছি।

লিসবোয়া

এটি সমগ্র ইউরোপের সবচেয়ে সুন্দর স্কোয়ারগুলির মধ্যে একটি, দক্ষিণ দিকে বিশাল জায়গা মোহনার দিকে খোলা। বিমান চলাচলের আগ পর্যন্ত, সমুদ্রপথে আগত দর্শনার্থীদের জন্য এটি ছিল লিসবনের দুর্দান্ত অভ্যর্থনা হল যা ধীরে ধীরে ডকিং জাহাজগুলো তাদের সুবিধাজনক পয়েন্ট থেকে এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে সক্ষম হত। পর্তুগাল পরিদর্শন করার সময় রাজা এবং রাষ্ট্রপ্রধানরা এখানে ডকে নামতেন। ১৭৫৫ সালের ভূমিকম্পের আগে এটিকে টেরেইরো দো পাকো (রয়্যাল ইয়ার্ড) বলা হত। ১৬ শতক থেকে যখন রাজা ম্যানুয়েল সাও জর্জ (সেন্ট জর্জ) কে তাঁর দুর্গ থেকে আদালত স্থানান্তর করা হয় তখন রয়্যাল প্যালেসটি স্কোয়ারের পশ্চিম দিকে অবস্থিত ছিল। ১৫৮০ সালে, পর্তুগালের ফিলিপ প্রথম ফিলিপ্পো টেরজি এবং হুয়ান হেরেরা (এসকোরিয়ালের স্থপতি) এর কাজের সাথে একটি নতুন স্কোয়ার নির্মাণের আদেশ দেন।

পরবর্তীতে ভূমিকম্পে সবকিছু ধ্বংস হয়ে যায়। স্কোয়ারের জ্যামিতিক কেন্দ্রে এবং নদীর দিকে মুখ করে, ঘোড়া জেন্টিলের উপর বসানো হোসে I-এর একটি মূর্তি রয়েছে, যা ভাস্কর মাচাদো ডি কাস্ত্রোর কাজ। ১৭৭৫ সালের ৬ জুন, রাজার জন্মদিনে সমস্ত যথাযথ আড়ম্বর এবং পরিস্থিতির সাথে এটি উন্মোচন করা হয়েছিল। কাস্টমস বিল্ডিংয়ের একটি জানালা দিয়ে তিনি বিচক্ষণতার সাথে ঘটনাটি দেখেছিলেন। উদযাপনটি তিন দিন স্থায়ী হয়েছিল এবং এতে লিসবনের সমস্ত লোকের জন্য একটি বিশাল ভোজ অন্তর্ভুক্ত ছিল।

লিসবোয়া

নদীর ধারে একটি পাদদেশে, রাজকীয় ঢালের উপর উত্থাপিত পম্বলের একটি মূর্তি রয়েছে। উভয় দিকের ভাস্কর্য চিত্রগুলি পর্তুগালের বিদেশী সম্পদের স্পষ্ট ইঙ্গিত করে, একটি ঘোড়া সহ ট্রায়াম্ফ এবং একটি হাতির সাথে খ্যাতির প্রতিনিধিত্ব করে। পিঠের পিছনের দিকে, স্বল্প ত্রাণে, ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থাকা একটি শহরের প্রতি রাজকীয় উদারতার একটি রূপক উপস্থাপন রয়েছে যেখানে বাণিজ্য এই রাজকীয় উদারতার স্বভাবের জন্য রাখা অর্থে ভরা একটি সিন্দুক খুলেছে। এটি শহরের জন্য একটি রেফারেন্স এবং সবচেয়ে সংস্কৃতিপূর্ণ গন্তব্য।

এলাকাটি নানা ধরনের খাবার এবং শপিং এর জন্য বিখ্যাত। স্কোয়ারের শেষে বিশাল গেট দিয়ে ঢুকেই পেয়ে গেলাম আমাদের কিছু বাঙালী ভাইকে। কিছু সুভেনিয়র বিক্রি করছেন। তাদের চমতকার ব্যাবহার মুগ্ধ করল।

স্কোয়ারের পাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে দেখলাম সমুদ্র থেকে সদ্য ধরে আনা মাছ রান্না করে সার্ভ করছে রেস্টুরেন্টে। দেখে আমার পেটুক মন আনচান করে উঠল। পর্তুগালের একমাত্র দুঃখ হল সেই মাছ আর আমার খাওয়া হল না। এখনও স্বপ্নে দেখছি সুস্বাদু সেই মাছ আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

ভুল বলেছি, আমার বর্তমান জীবনের সবচেয়ে দুঃখময় ঘটনাটিও এই লিসবন শহরেরই ঘটেছে। এখন চিন্তা করে পারছি না একে ভালোবাসব না ঘৃণা করব? মনে হয় ভালোই বাসব। ভালোবাসা ঘৃণার চেয়ে অনেক বেশি উদার।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com