শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩১ অপরাহ্ন

ভার্জিনিয়ায় এক বাংলাদেশির সাফল্যের গল্প হোমলেস থেকে সিনেটর

  • আপডেট সময় বুধবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৪

বাংলাদেশ থেকে বেশ কয়েক বছর আগে পরিবারের সাথে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন সাদ্দাম সেলিম। এখানে তাঁর পরিবারের সদস্যরা ভাড়া বাসা থেকে উৎখাত হোন। বাসস্থান না পেয়ে অনেকটাই কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হোন। স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় অনেকটাই গৃহহীন অবস্থায় কোনরকম একটি ঘরে থাকতে হয় সেলিম ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের। এরপর ভাই ও পরিবারের সদস্যদের আয় দিয়ে কোন মতে একটি অ্যাফোর্ডেবল হাউজিংয়ের বাসা ভাড়া নেন।

এর মধ্যেই নিজের পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি কাজ করে পরিবারের ব্যায় ভার বহন করেছেন। এত প্রতিকূলতায় থমকে যাননি তিনি। নিজের জীবন সংগ্রামে লক্ষ্য অর্জনের দিকেই অদম্য স্পৃহা নিয়ে এগিয়ে গেছেন। অনেক চরাই উৎরাই পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসার ১৫ বছরের মধ্যে নিজেকে নিয়ে গেছেন সাফল্যের অনন্য উচ্চতায়। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির অন্যতম সাংবিধানিক পদ সিনেটর হিসেবে ২০২৩ সালে নির্বাচিত হোন।  বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত নতুন প্রজন্মের পথিকৃৎ হিসেবে তিনি স্থান করে নিয়েছেন বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রে।

জানা গেছে, বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলার নবগ্রামের মোহাম্মদ সেলিমের পুত্র সাদ্দাম সেলিম। ২০০৮ সালে মা-বাবার সাথে ইমিগ্রেন্ট হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন সেলিম ও তাঁর বড় ভাই এবং বোন। যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর ওয়াশিংটন ডিসিতে হ্রাসকৃত ভাড়ার একটি বাড়িতে বসতি গড়েছিলেন সাদ্দামের বাবা। এমনি অবস্থায় হঠাৎ একদিন দেখেন যে, বাড়ি থেকে তাদের সকল আসবাবপত্র ছুড়ে রাস্তায় ফেলা হচ্ছে। কারণ ভবনটির মালিকনা পরিবর্তন হয়েছে এ এটিকে পুননির্মাণের জন্য তাদের ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয়। চোখের সামনেই এমন পরিস্থিতি অসহায়ের মত দাঁড়িয়ে থেকে তা অবলোকনের বিকল্প কিছুই ছিল না। বাংলাদেশে  থেকে সাদ্দাম পরিবার স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় এসেও গৃহহারা হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে পরিচিত একজন প্রবাসী তাদেরকে নিজ বাসার বেসমেন্টে আশ্রয় দেন।

সেখানে প্রায় দু’বছর বসবাসের পর স্বল্প আয়ের লোকজনের জন্যে অ্যাফোর্ডেবল হাউজিং প্রকল্পে একটি জরাজীর্ণ বাসায় উঠেন তারা। বাবা মোহাম্মদ সেলিমের ও মায়ের স্বল্প আয়ে কোনভাবেই সম্ভব হচ্ছিলোনা জীবন যাত্রার ব্যায় নির্বাহে। সেলিম ও তাঁর ভাই মিলে দুজন পড়াশুনার পাশাপাশি কাজ শুরু করেন। এভাবেই সংসারের হাল ধরে নিজের পড়াশুনা চালিয়ে যান সেলিম। তিনি ফলস চার্চ হাইস্কুল থেকে বিশেষ কৃতিত্বের সাথে গ্র্যাজুয়েশনের পর ২০১০ সালে নর্দার্ন ভার্জিনিয়া কম্যুনিটি কলেজ থেকে এসোসিয়েট ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে সেখানকার জর্জ ম্যাসোন ইউনিভার্সিটি থেকে এরপর ২০১২ সালে পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশনে ব্যাচেলর এবং ২০১৫ সালে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন সাদ্দাম। পড়াশুনা শেষ করে ডেমোক্রেট দলের রাজনীতিতে যোগ দিয়ে তিনি সিনেটর হোন।

২০২৩ সালে ৭ নভেম্বর ভার্জিনিয়ার সিনেট ডিস্ট্রিক্ট-৩৭ থেকে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে সিনেটর নির্বাচিত হোন সাদ্দাম সেলিম। ভার্জিনিয়া স্টেটের ডিস্ট্রিক্ট-৩৭ এই নির্বাচনী এলাকার সিংহভাগ ভোটারই বিভিন্ন কমিউনিটির। সেখানে মাত্র ৩ শতাংশ ভোটার বাংলাদেশী। সেখান থেকে একজন বাংলাদেশী হিসেবে তাঁর বিজয় এ এক অন্যরকম বিজয়।

শুক্রবার সিনেটর সাদ্দাম সেলিম নিউইয়র্কে টাইম টেলিভিশনের জনপ্রিয় টক শো ‘টাইম এক্সক্লুসিভ’ এর স্বাক্ষাতকারে বলেন, আমরা প্রথমে এদেশে এসে অনেকটা হোমলেস অবস্থায় দিন পার করেছি। বাবা মায়ের আয় দিয়ে একটি দিনযাপিত করা অসম্ভব গয়ে পড়েছিলো। আমি আর আমার ভাই মিলে পড়াশুনার পাশাপাশি কাজে নেমে পড়ি। প্রথমে একটি অ্যাফোর্ডেবল হাউজিং প্রকল্পের ঘরে ভাড়া থাকি আমরা। পরে আমাদের নিজস্ব বাড়ি হয়। কঠিন মুহূর্তে আমরা নিজেদের লক্ষ্য থেকে সরে যাইনি। আমিসহ আমার ভাই ও বোন পড়াশুনা চালিয়ে যাই।আমার বড় ভাই ও বোন এখন নিজেদের জায়গায় প্রতিষ্ঠিত।

সেলিম আরো বলেন,  আমরা ইমিগ্র্যান্টরা শুধু আয়-উপার্জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে পছন্দ করি। কম্যুনিটিতে অনেক মেধাবি আছেন যারা এদেশে বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, গবেষক, শিক্ষক হতে চান। কিন্তু অনেকেই নিজের মধ্যেই সীমিত রেখে চলছেন। এদেশের রাজনীতির সাথে কেউ জড়াতে চাননা। কারণ বহুজাতিক রাজনীতিতে টিকে থাকতে হলে অনেক ঝুঁকি রয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ কেউ হয়তো নিতে চান না। জীবনে কিছু পেতে হলে চ্যালেঞ্জতো নিতেই হবে। আমি একজন বাংলাদেশী হিসেবে কমিউনিটির কল্যাণে কাজ করতেই রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়েছি। এরকম যদি নতুনরা এগিয়ে আসেন চেলেঞ্জ নিয়ে তাহলে স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় কমিউনিটি আরো বেশি সমৃদ্ধি পাবে। তার এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনে বাংলাদেশীর যাতে স্থান করে নিতে পারেন সেজন্য তার পক্ষ থেকে সকল সহযোগিতা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

বাসস্থান, গণপরিবহন ব্যবস্থার সহজতর, সল্প আয়ের মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে কাজ করবেন এবং কমিউনিটির প্রসার ও কল্যাণ সহ অভিবাসীদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে তিনি কাজ করে যাবেন বলেও জানান সিনেটর সেলিম।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com