জার্মানি, পৃথিবীর অন্যতম প্রধান শিল্পোন্নত দেশ। ১৬ টি রাজ্য নিয়ে গঠিত ইউরোপের ৭ম বৃহত্তম এই দেশটি বিভিন্ন কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ আমেরিকা, কানাডা, জাপান বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার পাকিস্তান, ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের কাছে উচ্চ শিক্ষার কাঙ্খিত গন্তব্য হিসেবে পরিনত হয়েছে। এর মধ্যে প্রধান উল্লেখযোগ্য কারণ গুলো হলো; নামকরা সব বিশ্ববিদ্যালয়, যুগোপযোগী আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা, ইতিহাস ও ঐতিহ্য, শিল্প ও সংস্কৃতি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সাম্প্রতিক সময়ে অনুমোদিত সহজ নাগরিকত্বের সুযোগ সুবিধা।
জার্মানিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৯০% পাবলিক এবং মাত্র ১০% প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে টিউশন ফি থাকলেও সামান্য কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বাকি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে অধ্যায়নে টিউশন ফি এর তেমন কোন ঝামেলা নেয়। তবে এক জন শিক্ষার্থীকে প্রতি সেমিস্টারে বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে ২৮০ থেকে ৩৭০ ইউরো পর্যন্ত সেমিস্টার কন্ট্রিভিউশন ফি পরিশোধ করতে হয়, যার মধ্যে অধ্যায়নরত বিশ্ববিদ্যালয়ের আশে পাশে একটি নিদিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত যাতায়াতের সেমিস্টার টিকিটের খরচ অন্তর্ভুক্ত থাকে।
পড়াশোনার পাশাপাশি ঐ শিক্ষার্থী বছরে ১২০ দিন ফুলটাইম (দৈনিক ৮ ঘন্টা) ও ২৪০ টিন হাফটাইম (দৈনিক ৪ ঘন্টা) কাজ করার সুযোগ পেয়ে থাকেন। সাপ্তাহে ২০ থেকে ৩০ ঘন্টার পাশাপাশি এক জন শিক্ষার্থী চাইলে সেমিস্টার ভ্যাকেশনে ফুলটাইম কাজ করতে পারেন। প্রতি ঘন্টা সর্বনিম্ন ১২ ইউরো করে পড়াশোনার পাশাপাশি নিয়মিত কাজ করলে মাসে প্রায় ৮০০ থেকে ১২০০ ইউরোর বেশি আয় করতে পারেন, যা বাংলা টাকায় প্রায় ১ লক্ষ ১০ হাজারেরও বেশি। যাবতীয় সব ধরণের খরচ মিটানোর পর সে চাইলে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজারেরও বেশি টাকা দেশে পরিবারের জন্য পাঠাতে পারেন। বিদেশি ডিগ্রি অর্জনের পাশাপাশি এক জন নিয়মিত শিক্ষার্থী পড়াশোনা শেষে জার্মানিতে জব নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ পেয়ে থাকেন, যা উন্নত জীবন ব্যবস্থার রঙিন স্বপ্ন বাস্তবায়ন।
বিদেশি দক্ষ কর্মীদের জার্মানির শ্রম বাজারে প্রতি আকৃষ্ট করতে গত ১৯ই জানুয়ারি রোজ শুক্রবার পূর্বের খসড়া দ্বৈত নাগরিকত্ব আইনটি ৬৩৯ ভোটের মধ্যে ৩৪২টি হ্যাঁ ভোট পেয়ে জার্মান পার্লামেন্টে চূড়ান্ত অনুমোদন পায়। উক্ত আইন অনুযায়ী এক জন অধিবাসী কমপক্ষে পাঁচ বছরের বেশি সময় বিশেষ ক্ষেত্রে তিন বছর ধরে জার্মানিতে নিয়মিত বসবাস করে থাকলে সে কিছু শর্ত সাপেক্ষ জার্মান নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে পারবেন, যা আগের আইনে প্রায় ৮ বছর অপেক্ষা করতে হতো। এর পাশাপাশি সে চাইলে এক সাথে দু’দেশের নাগরিক হওয়ার মাধ্যমে দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে পারবেন, যার সুযোগ পূর্বে ছিল না। ধারণা করা হচ্ছে উক্ত আইনটি আগামী এপ্রিল থেকে কার্যকর হতে পারে।
উল্লেখ্য, ধারাবাহিক ভাবে জার্মান উচ্চ শিক্ষার বিষয়ে পরবর্তীতে আমাদের বেশ কয়েকটি তথ্য বহুল প্রতিবেদন থাকবে। উক্ত প্রতিবেদন গুলোতে জার্মান উচ্চ শিক্ষা বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা ও তথ্য প্রদান করা হবে।