বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৯ অপরাহ্ন

ভিসা কড়াকড়ি: বাংলাদেশিদের অভাবে কলকাতার ব্যবসায়ীদের হাহাকার

  • আপডেট সময় রবিবার, ১০ নভেম্বর, ২০২৪

চলতি বছরের জুলাই থেকে বাংলাদেশি পর্যটকদের অভাবে বড় ধরনের লোকসান গুনছে কলকাতার বিভিন্ন হোটেল ও খুচরা দোকানের ব্যবসায়ীরা। অনেকে বলছেন, করোনা মহামারির পর এমন দশায় আর কখনো পড়তে হয়নি তাদের।

সেন্ট্রাল কলকাতার দুই বর্গকিলোমিটারজুড়ে শতাধিক হোটেল ও তিন হাজারেরও বেশি দোকান রয়েছে। পর্যটকনির্ভর এই বাণিজ্যিক এলাকা মিনি বাংলাদেশ নামে পরিচিত। মূলত বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রভাব বেশ বাজেভাবেই পড়েছে এই এলাকার ব্যবসায়।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া বলছে, বাংলাদেশি পর্যটকের অভাবে কলকাতার মিনি বাংলাদেশ এলাকার বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড প্রায় ৭০ শতাংশ কমে গেছে।

গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে ভারতীয় ভিসা কার্যক্রমের ছন্দপতন ঘটে। সীমিত পরিসরে এই কার্যক্রম শুরু হলেও ভারত জানিয়ে দিয়েছে যে, চিকিৎসার জন্য ও জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অন্যান্য ভিসা তারা ইস্যু করবে না। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশিদের কলকাতা ভ্রমণ ব্যাপক হারে কমে যায়। আর তাতেই ধস নামে মিনি বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্রেতার অভাবে বর্তমানে মারকুইস স্ট্রিট, সাডার স্ট্রিট, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, রফি আহমেদ কিদওয়াই রোড, রয়ড স্ট্রিট ও এলিয়ট রোডের ১২০টি হোটেলের মাত্র ১০-১৫ শতাংশ কক্ষে অতিথি আছে। অথচ গত বছর এই সময়ে হোটেলগুলোর ৮০ শতাংশ কক্ষ ভরা ছিল।

কলকাতা হোটেল ও রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মনতোষ সরকার বলেন, জুলাই থেকে মারকুইস স্ট্রিটে আমার হোটেলের ৩০টি কক্ষের মধ্যে মাত্র চার বা পাঁচটি কক্ষ বাংলাদেশি অতিথিদের দখলে আছে। অথচ বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলন ও শেখ হাসিনার পতনের আগে সেখানে আমার হোটেলের ২৬-২৮টি কক্ষেই বাংলাদেশি অতিথিরা ছিলেন।

তিনি আরও বলেন, ছোট কয়েকটি হোটেল সাময়িকভাবে বন্ধও হয়ে গেছে, কারণ তারা মাত্র এক বা দুজনের বেশি অতিথি পাচ্ছিল না। ২০২১ সালে করোনা মহামারির সময় লকডাউনের কারণে আমরা যে অবস্থার মুখোমুখি হয়েছিলাম, এখন সেরকম পরিস্থিতিই তৈরি হয়েছে।

প্রায় নির্জন একটি হোটেলে অবস্থান করা চট্টগ্রামের রেজেন বিশ্বাস বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের পর ভারত সরকারের নতুন ভিসা নিষেধাজ্ঞার কারণে কলকাতায় বাংলাদেশিদের আগমন ব্যাপক হারে কমে গেছে। আগে এই হোটেলের কক্ষগুলোও বাংলাদেশিদের আনাগোনা ও আড্ডায় সরগরম থাকত।

রেজেন বিশ্বাস বলেন, ‘আমার আগে থেকেই ভিসা ছিল, তাই আমি কলকাতায় আসত পেরেছি। কিন্তু এখন যারা আবেদন করছেন, তাদের জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন ছাড়া ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সম্ভবত বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে, যা ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে এত কঠোর হতে বাধ্য করেছে। ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে বর্তমান ভিসাগুলোর বৈধতা শেষ হয়ে গেলে এখন যে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ অতিথি পাচ্ছে কলকাতা, তাও আর পাবে না।’

নিউমার্কেটের দোকানদাররা, যারা সাধারণত কলকাতার বিভিন্ন অংশের তুলনায় বাংলাদেশ থেকে বেশি ক্রেতা পান, তারাও হতাশ। তারা আশঙ্কা করছেন, বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা চলতে থাকলে ও ভারত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে থাকলে কলকাতার এই অঞ্চলের অর্থনীতি ভেঙে পড়বে।

নিউ মার্কেটের চকো নাট নামের একটি দোকান কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের বিক্রি দিনে সাড়ে ৩ লাখ রুপি কমে ৩৫ হাজারে নেমেছে। তারা চকলেট, বাদাম, মসলা ও প্রসাধনী বিক্রি করে ও একচেটিয়াভাবে বাংলাদেশি গ্রাহকদের জন্য সরবরাহ করতেন।

দোকানটির মালিক মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘শুধু মেডিকেল ভিসায় আসা কয়েকজন গ্রাহকই এখন আমাদের দোকানে আসেন। কিন্তু ভ্রমণকারী বা যারা নিউমার্কেট থেকে পণ্য কিনে ঢাকায় বিক্রি করতেন, তাদের আগমন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।’

১২৪ বছরের পুরোনো প্রসাধনীর দোকান রয়্যাল স্টোরের পঞ্চম প্রজন্মের মালিক অজয় ​​শ বলেন, ‘পরিস্থিতি শুধু আমাদের দোকানের জন্য নয়, পুরো বাজারের জন্যই ভয়াবহ। ২০০৮-০৯ সালের দিকে স্থানীয় গ্রাহক কমে যাওয়ায় এই বাজারের চেহারা বদলে গিয়েছিল। এরপর থেকে নিউমার্কেট বাংলাদেশিদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ও প্রায় সব দোকানই তাদের চাহিদা ও রুচি পূরণ করতে শুরু করে। কিন্তু বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকট এবং ভিসা ইস্যুতে গ্রাহকের সংখ্যা কমে গেছে।’

তিনি আরও বলেন, আমরা আগে প্রতিদিন ১৫ হাজার টাকা করে কেনাকাটা করা ২৫-৩০ জন বাংলাদেশি ক্রেতা পেতাম। কিন্তু এখন আমরা দিনে মাত্র পাঁচজন বাংলাদেশি ক্রেতা পাচ্ছি। আর তাদের কেনাকাটার হারও অনেক কমে গেছে। এখন একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ মাত্র ১০ হাজার টাকা খরচ করেন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com