নগরজীবনের ব্যস্ততার মাঝে মন চায় একটু স্বস্তির নিশ্বাস নিতে। তাই তো নগরীর আশপাশে যাওয়া যেতে পারে, যা আপনার একঘেয়েমি ব্যস্ত জীবনের ক্লান্তি দূর করে দেবে। ঠিক এমনই একটি জায়গা ঢাকার সবচেয়ে কাছে ‘নুহাশ পল্লী’। অতি সহজেই পৌঁছে যেতে পারবেন আপনি। প্রিয়জন, পরিবার, বন্ধুবান্ধব নিয়ে ছুটির দিনে ঘুরে আসতে পারেন নুহাশ পল্লী থেকে।
যা আছে নুহাশ পল্লীতেঃ
মূল রাস্তা থেকে নেমে শালবনের ভিতর দিয়ে একটু এগুলেই সামনে পড়বে কয়েকটি হরেক রকমের কুটির শিল্পের তৈজসপত্র ও শিশুদের খেলনা জাতীয় জিনিসপত্রের দোকান এবং খাবারের দোকান। এরপর নুহাশ পল্লীর মূল ফটক। মূল ফটক পেরিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে সবুজ ঘাসে আবৃত বিরাট মাঠ এবং একটি বড় শেফালী গাছ। এর পাশেই রয়েছে পাকা বসত ঘর/বাংলো (হুমায়ূন আহমেদ এর প্রিয় বাস ভবন হোয়াইট হাউজ), যার সামনে দেখা মিলবে চিন্তিত হুমায়ুন আহমেদের ম্যূরাল। মূল ফটকের ডান পাশেই দাড়িয়ে আছে হুমায়ুন আহমেদের প্রথম স্ত্রী গুলতেকিন ও তার ছেলে নুহাশের ভাষ্কর্য (মা ও ছেলের ভাস্কর্য)। এখানেই আছে বিশ্রাম নেয়ার মতো একটি ছাউনি এবং অর্গানিক ফর্মে ডিজাইন করা ডিম্বাকৃতির একটি সুইমিংপুল।
এরপর একটু সামনে এগুলেই হাতের ডান পাশে রয়েছে বিভিন্ন গাছের বড় উদ্যান। উদ্যানের পূর্বদিকের খেজুর বাগানের পাশে ‘বৃষ্টিবিলাস’ নামে একটি অত্যাধুনিক ঘর রয়েছে। এর ছাদ টিনের তৈরি। এখানে বসে থেকে বৃষ্টির শব্দ শুনতেই এ আয়োজন। এছাড়া নিরিবিলি সময় কাটানোর জন্য বৃষ্টি বিলাস থেকে একটু দূরেই দিঘির পাড়ে রয়েছে ‘ভূতবিলাস’ নামে আরেকটি দুই কক্ষবিশিষ্ট আধুনিক বাংলো।
নুহাশ পল্লীর অন্যতম মূল আকর্ষণ হল প্রাচীন আদলে নির্মিত আধুনিক দুটি ঘাট বাঁধানো বৃহৎ আকারের ‘লীলাবতী দীঘি’। এ দীঘির চারপাশের পাড়জুড়ে বিভিন্ন ধরনের গাছ রয়েছে। দিঘির মাঝখানে একটি দ্বীপ আছে, যেখানে কয়েকটি নারিকেল গাছ থাকায় দ্বীপের সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি করে তুলেছে। এখানে যেতে ভূত বিলাসের পাশ দিয়েই একটি বাঁশ ও কাঠের সাকো তৈরি করা হয়েছে। যদিও সাকোটি এখন একটু নড়বড়ে হয়ে গেছে।
নুহাশ পল্লীতে রয়েছে প্রায় আড়াইশ প্রজাতির গাছ, ঔষধি গাছের বাগান, হুমায়ুন আহমেদের কটেজ, ট্রিহাউজ, কাদামাটি ও টিন দিয়ে তৈরি করা শুটিং স্টুডিও এবং দাবা খেলা ও নামাজ পড়ার কক্ষ। বৃষ্টি বিলাসের সামনের দিকে সবুজ মাঠের মাঝ বরাবর একটি বড় গাছের উপর কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ছোট ছোট দুটি কুটির ঘর, যেগুলোতে উঠার জন্য রয়েছে বিভিন্ন রঙে রাঙ্গা সিড়ি।
নুহাশ পল্লীতে হুমায়ূন আহমেদের আবক্ষ মূর্তি ও সমাধিস্থলসহ শীতল পানির সরোবরে পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে রূপবতী মৎসকন্যা। এর পাশে একটি বিরাট রাক্ষসের মূর্তিও রয়েছে।
আরো আছে কনক্রিট দিয়ে তৈরি ডাইনোসরের মতো প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীদের অনুকীর্তি, দাবার গুটির প্রতিকৃতি, হরেকরকম কবুতর ও ঘর, মাটির তৈরি ঘর ও পানির কূয়া, পদ্ম পুকুর, বসার জন্য ছাউনি, কংক্রিটের তৈরি বিশাল ব্যাঙের ছাতা, দোলনা, মাটির প্রাচীর এবং ট্রি হাউজসহ নানা রকম দৃষ্টিনন্দন সব স্থাপত্য এবং শালবন, অর্কিড বাগানসহ মোট তিনটি বাংলো।
নুহাশ পল্লী যাওয়ার উপায়ঃ
বাংলাদেশের যেখান থেকেই যেতে চাননা কেন, প্রথমে আপনি গাজীপুরের চান্দিনা চৌরাস্তায় গিয়ে নামতে পারেন। আর ময়মনসিংহের, নেত্রকোনা বা শেরপুর ওইদিক থেকে আসলে গাজীপুরের হোতাপাড়া বাসস্ট্যান্ডে নামবেন। যদি চৌরাস্তায় নামেন তাহলে ওখান থেকে বিভিন্ন মিনিবাসে চড়ে ২০-৩০ টাকা ভাড়া দিয়ে হোতাপাড়া যেতে হবে। তবে সিএনজি দিয়েও যেতে পারেন। এরপর হোতাপাড়া থেকে সিএনজি বা লেগুনা বা অটো রিক্সায় নুহাশ পল্লীতে যেতে পারবেন। এক্ষেত্রে প্রতিজনের ভাড়া পড়বে ৩০-৪০ টাকা করে। আর অটোরিকশা বা সিএনজি রিজার্ভ করে নিলে ১৫০-২০০ টাকা খরচ হবে।
টিকেট মূল্য এবং সময়সূচীঃ
নুহাশ পল্লী কোন সাপ্তাহিক বন্ধ ছাড়াই সারা বছরই দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। প্রতিদিন সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৬ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এখানে ১২ বছরের উপরে জনপ্রতি প্রবেশ মূল্য ২০০ টাকা করে নেওয়া হয়। তবে বছরের দিই দিন অর্থাৎ ১৩ নভেম্বর (হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন) এবং ১৯ জুলাই (মৃত্যুবার্ষিকী) নুহাশ পল্লী সকলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়, তখন টিকিট ছাড়াই যেকেউ প্রবেশ করতে পারে।
এছাড়া আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হল, নুহাশ পল্লী বছরের এপ্রিল থেকে নভেম্বর মাসের আগ পর্যন্ত সকল দর্শনার্থীদের জন্য প্রতিদিন খোলা থাকে। কিন্তু নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত পিকনিকের জন্য ভাড়া দেয়া হয়। প্রতিদিন পিকনিকের জন্য একটি গ্রুপে সর্বোচ্চ ৩০০ জন আসতে পারবে। সরকারি ছুটির দিনে পিকনিকের জন্য গুনতে হবে ৬০ হাজার টাকা, আর অন্যদিন ৫০ হাজার টাকা (এবার এর পরিমাণ আরো বেড়ে থাকতে পারে)।
তবে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সরকারি ছুটির দিনে পিকনিকের জন্য ভাড়া পড়বে ৫০ হাজার টাকা, অন্যদিনগুলোতে পড়বে ৪০ হাজার টাকা (এবার এর পরিমাণ আরো বেড়ে থাকতে পারে)।
থাকার ব্যবস্থাঃ
নুহাশ পল্লীতে রাত্রি যাপনের কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে বৃষ্টি বিলাস নামের বাংলোতে নুহাশ পল্লী খোলা থাকাকালীন সময়ে দর্শনার্থীদের জন্য বিশ্রামের ব্যবস্থা আছে। এছাড়া ভূত বিলাস নামক বাংলোতে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে সময় কাটানো যায়।