শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১৩ পূর্বাহ্ন

প্রবাসীদের বসবাসের জন্য ব্যয়বহুল ১০ শহর

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৪

পড়াশোনা, চাকরি কিংবা ব্যক্তিগত বিভিন্ন কারণে মানুষ প্রবাস জীবন বেছে নেয়। নিজ দেশের চেনাজানা পরিবেশ ছেড়ে ভিনদেশের অচেনা শহরে বসবাস করার সিদ্ধান্তটা যে সব সময়ই সহজে নিয়ে ফেলা যায়, তা নয়। নতুন শহরে বসবাস করতে গিয়ে প্রবাসীদের অনেক সময় নানা ধরনের সমস্যা সামলাতে হয়। অনেক বিষয় বিবেচনা করতে হয়।

কোনো শহরে বসবাসের ক্ষেত্রে যেসব বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে বিবেচনায় রাখতে হয়, সেগুলোর একটি ওই শহরে থাকার খরচ।

দেখে নেওয়া যেতে পারে বিশ্বে প্রবাসীদের বসবাসের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহর কোনগুলো? যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কনসালটিং ফার্ম মারচারের তৈরি করা ‘কস্ট অব লিভিং সিটি র‍্যাঙ্কিং ২০২৪’ তালিকায় এ বছর প্রবাসীদের জন্য সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহরগুলোর নাম উঠে এসেছে।

তালিকায় শীর্ষে থাকা ১০টি শহর হলো—হংকং, সিঙ্গাপুর সিটি, জুরিখ, জেনেভা, বাসেল, বার্ন, নিউইয়র্ক, লন্ডন, নাসাউ ও লস অ্যাঞ্জেলেস।

১. হংকং

প্রবাসীদের জন্য সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহরের তালিকার পঞ্চমবারের মতো শীর্ষস্থানে হংকংয়ের নাম উঠে এসেছে
প্রবাসীদের জন্য সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহরের তালিকার পঞ্চমবারের মতো শীর্ষস্থানে হংকংয়ের নাম উঠে এসেছেছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

প্রবাসীদের জন্য সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহরের তালিকার পঞ্চমবারের মতো শীর্ষস্থানে হংকংয়ের নাম উঠে এসেছে। প্রাণবন্ত ও সর্বজনীন জীবনযাপন–ব্যবস্থার কারণে বিদেশি কর্মীরা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটিতে যেতে আগ্রহী হন। তবে বসবাসের জায়গার স্বল্পতা আছে সেখানে। আর তাই শহরটিতে সুলভ মূল্যে বাসস্থানের ব্যবস্থা করাটা প্রবাসীদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। এ জন্য তাঁদের বেশি অর্থ গুনতে হয়। এভাবে ব্যয়বহুল শহরের তালিকায় শীর্ষস্থান দখল করেছে শহরটি।

২. সিঙ্গাপুর সিটি

কৌশলগত অবস্থান, স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ এবং ব্যবসাবান্ধব নীতিমালার কারণে সিঙ্গাপুর শহরটি অনেকের কাছে আকর্ষণের জায়গা
কৌশলগত অবস্থান, স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ এবং ব্যবসাবান্ধব নীতিমালার কারণে সিঙ্গাপুর শহরটি অনেকের কাছে আকর্ষণের জায়গাছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

ব্যয়বহুল শহরের তালিকায় হংকংয়ের পরপরই সিঙ্গাপুর সিটির অবস্থান। কৌশলগত অবস্থান, স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ এবং ব্যবসাবান্ধব নীতিমালার কারণে সিঙ্গাপুরের শহরটি অনেকের কাছে আকর্ষণের জায়গা। আবার শহরটির এমন জনপ্রিয়তার কারণে সেখানকার জীবনযাপনের ব্যয়ও বেড়ে গেছে। বিশেষ করে সীমিত ভূমি থাকায় এবং নগর-পরিকল্পনার ক্ষেত্রে কঠোর বিধিনিষেধের কারণে আবাসন খাতে খরচটা অনেক বেশি। শহরটিতে বসবাসকারী প্রবাসীদের আয়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বাসাভাড়া কিংবা মর্টগেজের অর্থ পরিশোধে খরচ হয়ে যায়।

৩. জুরিখ

প্রবাসীদের জন্য সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহরের তালিকায় জুরিখের অবস্থান তৃতীয়
প্রবাসীদের জন্য সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহরের তালিকায় জুরিখের অবস্থান তৃতীয়ছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

সুইজারল্যান্ডের বাণিজ্যিক রাজধানী জুরিখ। প্রবাসীদের জন্য সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহরের তালিকায় এর অবস্থান তৃতীয়। শহরটির প্রাচুর্য, জীবনযাত্রার উচ্চমান এবং শক্তিশালী অর্থনীতির কারণে সেখানকার জীবনযাত্রার ব্যয়ও বেশি।

৪. জেনেভা

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন এবং কূটনীতিকদের বৈশ্বিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত জেনেভা
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন এবং কূটনীতিকদের বৈশ্বিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত জেনেভাছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন এবং কূটনীতিকদের বৈশ্বিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত জেনেভা। প্রবাসীদের বসবাসের জন্য বয়বহুল শহরের তালিকায় সুইজারল্যান্ডের শহরটির অবস্থান চতুর্থ। প্রাচুর্য ও বিলাসিতার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত শহরটির ভূমির পরিমাণ সীমিত। আর এতে সেখানকার জীবনযাপন ব্যয় বেশি। জেনেভায় বসবাসকারী প্রবাসীদের বিশেষ করে শহরের প্রাণকেন্দ্রের বাসিন্দাদের উচ্চ বাড়িভাড়া গুনতে হয়। বিভিন্ন জিনিসপত্র এবং পরিষেবার জন্যও উচ্চমূল্য পরিশোধ করতে হয় তাঁদের। তবু বহুভাষী পরিবেশ ও বিশ্বমানের সুযোগ-সুবিধা থাকায় অনেকেই শহরটিতে বসবাসে আগ্রহী হন।

৫. বাসেল

প্রবাসীদের জন্য ব্যয়বহুল শহরের তালিকায় বাসেল শহরের অবস্থান পঞ্চম
প্রবাসীদের জন্য ব্যয়বহুল শহরের তালিকায় বাসেল শহরের অবস্থান পঞ্চমছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

প্রবাসীদের জন্য ব্যয়বহুল শহরের তালিকায় পঞ্চম স্থানে উঠে আসা বাসেলও সুইজারল্যান্ডেরই শহর। ওষুধ ও রাসায়নিক শিল্পের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত শহরটি বিশ্বের কর্মজীবী মানুষদের অনেকের জন্য আকর্ষণীয় একটি জায়গা। গোছানো অবকাঠামো, অত্যন্ত মানসম্পন্ন স্বাস্থ্য সুরক্ষাব্যবস্থা এবং প্রাণবন্ত সাংস্কৃতিক দৃশ্যাবলি শুধু শহরটিকে আকর্ষণের জায়গাতেই পরিণত করেনি বরং সেখানকার জীবনযাত্রার খরচও বাড়িয়ে দিয়েছে।

৬. বার্ন

সুইজারল্যান্ডের বার্ন শহরটি প্রবাসীদের জন্য ব্যয়বহুল শহরের তালিকায় ষষ্ঠ অবস্থানে আছে
সুইজারল্যান্ডের বার্ন শহরটি প্রবাসীদের জন্য ব্যয়বহুল শহরের তালিকায় ষষ্ঠ অবস্থানে আছেছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

সুইজারল্যান্ডের রাজধানী বার্ন প্রবাসীদের জন্য ব্যয়বহুল শহরের তালিকায় ষষ্ঠ অবস্থানে আছে। শহরটিতে গোছানো অবকাঠামো ও উচ্চমানের সরকারি পরিষেবা পাওয়া যায়। কূটনৈতিক সম্প্রদায়ের কাছে বার্ন একটি সমাদৃত জায়গা। এখানকার আর্থিক খাতও বেশ শক্তিশালী। আর এগুলোর কারণে শহরটির জীবনযাত্রার ব্যয়ও বেশি। শহরটিতে থাকতে প্রবাসীদের আবাসন বাবদ প্রচুর অর্থ খরচ করতে হয়।

৭. নিউইয়র্ক সিটি

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত নিউইয়র্ক সিটি তালিকায় সপ্তম অবস্থানে আছে
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত নিউইয়র্ক সিটি তালিকায় সপ্তম অবস্থানে আছেছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত নিউইয়র্ক সিটি তালিকায় সপ্তম অবস্থানে আছে। তবে শহরটির আকর্ষণীয় বহুতল ভবন, বৈচিত্র্যপূর্ণ জায়গা এবং এর বৈশ্বিক প্রভাবের কারণে বিশ্বের অনেকে শহরটির প্রতি আকৃষ্ট হয়। তবে এ জনপ্রিয়তার দামটাও চড়া। বিশেষ করে শহরটিতে বসবাসের জন্য প্রবাসীদের উচ্চমূল্য পরিশোধ করতে হয়। এখানকার প্রবাসীদের আয়ের বড় একটি অংশ উচ্চ পরিবহন খরচ ও মৌলিক চাহিদাগুলোর উচ্চ ব্যয় মেটাতে চলে যায়।

৮. লন্ডন

লন্ডন ব্রিজের ওপর দিয়ে হাঁটছেন পর্যটকেরা
লন্ডন ব্রিজের ওপর দিয়ে হাঁটছেন পর্যটকেরাছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

এ বছর প্রবাসীদের জন্য ব্যয়বহুল শহরের তালিকায় যুক্তরাজ্যের রাজধানীর অবস্থান অষ্টম। ১৭তম অবস্থান থেকে একলাফে এটি অষ্টম অবস্থানে এসেছে। শহরটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের একটি কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। শহরটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যেও সমৃদ্ধ। এখানে বসবাসকারী মানুষদের মধ্যেও বৈচিত্র্য আছে। সব মিলে শহরটিতে জীবনযাত্রায় ব্যয় অনেক বেশি। বিশেষ করে লন্ডনে বসবাসকারী প্রবাসীদের আবাসন বাবদ অনেক অর্থ খরচ করতে হয়।

৯. নাসাউ

বাহামার রাজধানী নাসাউ জনপ্রিয় পর্যটন শহর
বাহামার রাজধানী নাসাউ জনপ্রিয় পর্যটন শহরছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

বাহামার রাজধানী নাসাউ তালিকায় নবম স্থানে আছে। শহরটি জনপ্রিয় পর্যটন শহর। এটি আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের একটি কেন্দ্রও। আর সবকিছু মিলে শহরটির জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। নাসাউ শহরে থাকতে চাইলে সেখানকার আবাসন, দ্রব্যমূল্য এবং পরিষেবার উচ্চ খরচের কথা প্রবাসীদের মাথায় রাখতেই হবে।

১০. লস অ্যাঞ্জেলেস

বিনোদন, প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক জায়গা থেকে বিশ্বের কর্মজীবী মানুষদের কাছে লস অ্যাঞ্জেলেস ক্রমাগত আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে
বিনোদন, প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক জায়গা থেকে বিশ্বের কর্মজীবী মানুষদের কাছে লস অ্যাঞ্জেলেস ক্রমাগত আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছেছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

প্রবাসীদের জন্য ব্যয়বহুল শহরের তালিকায় লস অ্যাঞ্জেলেসের অবস্থান এ বছর দশম। এটি যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় শহর, যেটি শীর্ষ ১০ ব্যয়বহুল শহরের তালিকায় স্থান পেয়েছে। বিনোদন, প্রযুক্তি এবং অর্থনৈতিক জায়গা থেকে বিশ্বের কর্মজীবী মানুষদের কাছে লস অ্যাঞ্জেলেস ক্রমাগত আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। তবে শহরটির আবাসন ও পরিবহন খরচ বেশি। সেই সঙ্গে জিনিসপত্র এবং পরিষেবা বাবদও বেশি অর্থ খরচ করতে হয়। আর এ সবকিছু মিলে লস অ্যাঞ্জেলেস শহরটি বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল শহরে পরিণত হয়েছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com