মেঘমুক্ত আকাশে উঁকি দেয়ার অপেক্ষায় রয়েছে হিমালয় পর্বতমালার তৃতীয় সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা।
দিগন্তজুড়ে সবুজ চা-বাগানে মোড়ানো সমতল ভূমি এবং অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্য নিয়ে বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন এলাকা তেঁতুলিয়া পর্যটকদের আকর্ষণ করছে। পর্যটকরা এখানে বিভিন্ন স্থাপনা, জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট স্পট এবং প্রকৃতির মুগ্ধকর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।
এরইমধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা ভ্রমণপিপাসুরা পাড়ি জমাতে শুরু করেছে এই জেলা শহরে। পর্যটনের সঙ্গে জড়িত হোটেল, মোটেল ও রিসোর্টগুলোও পর্যটক বরণে নতুন রূপে সেজেছে।
শীত মৌসুমে তেঁতুলিয়ার আকাশ পরিষ্কার থাকলে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্পষ্ট দেখা যায়, যা প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ।
শীত মৌসুমে তেঁতুলিয়ার আকাশ পরিষ্কার থাকলে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্পষ্ট দেখা যায়, যা প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ।
পর্যটন নগর হিসেবে পরিচিতি এই তেঁতুলিয়ায় পিকনিক কর্নার, ঐতিহাসিক ডাকবাংলো, মহানন্দা নদী, সমতলের চা-বাগান ও বাংলাবান্ধা জিরোপয়েন্টসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান রয়েছে। অনেকেই আবার সীমান্তের তেঁতুলিয়া পিকনিক কর্নারের পাশে মহানন্দা নদীর তীরে বসে রাতের পরিবেশ উপভোগ করে থাকেন। মুগ্ধ হয়ে হারিয়ে যান প্রকৃতির মাঝে। যার কমতি নেই এখনও।
স্থানীয়রা বলছেন, অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় থেকে একমাস মেঘমুক্ত আকাশে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা দেয়ায়- এ সময়ে কয়েকগুণ হারে বাড়ে ভ্রমণপ্রেমীদের ভিড়। বর্তমানে মেঘ ও কুয়াশার কারণে এবার এখনও দেখা দেয়নি কাঙ্খিত সেই কাঞ্চনজঙ্ঘা।
তবে তেঁতুলিয়ায় এসে চলতি বছরের প্রথম শীত উপভোগ করতে পারায় খুশি অনেক পর্যটক।
উপজেলা প্রশাসন বলছে, এবার শীত ও কাঞ্চনজঙ্ঘা মৌসুমে পর্যটকদের বরণে তেঁতুলিয়ায় ৮টি সরকারি বাংলোসহ প্রায় ১৫টি আবাসিক হোটেল নুতনভাবে সাজতে শুরু করেছে।
সরেজমিনে কথা হয় তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো পিকনিক কর্নার এলাকায় স্বপরিবারে ঘুরতে আসা লুৎফর রহমানের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্টসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছি। জায়গাটা অনেক ভালো লেগেছে। এখন পিকনিক কর্নারের পাশে মহানন্দা নদীর তীরে বসে দুই দেশের পরিবেশ উপভোগ করছি। ব্যস্ত শহর থেকে এমন নির্জন এলাকায় এসে কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস নিতে পেরে খুব ভালো লাগছে।’
ইস্মেতা আক্তার নামে আরেক পর্যটক বলেন, ‘সমতলের চা-বাগান থেকে শুরু করে তেঁতুলিয়ার সব স্থান দিনভর ঘুরেছি। তবে স্থানগুলোতে কিছুটা অপরিষ্কার পরিবেশ দেখা গেছে। একটি পর্যটন এলাকা হয়েও কোন দেখভাল নেই। এতে করে কিছুটা খারাপ লাগছে।’
একই অভিযোগ করেন ঢাকা থেকে আসা আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘গতবার এসে তেঁতুলিয়া পিকনিক কর্নারে আমাদের ঐতিহ্য নিয়ে সাজানো দেখেছিলাম। কিন্তু এবার এসে সেগুলো ভেঙে পড়ে থাকতে দেখছি। খারাপ লাগছে, যেখানে পরিবারকে নিয়ে আনন্দের সময় অতিবাহিত করবো, সেখানে অবস্থা বেহাল। গুরুত্বপূর্ণ এই স্থানগুলো যত্নসহ দেখভালের অনুরোধ করছি উপজেলা প্রশাসনকে।’
স্থানীয় বাসিন্দা রতন ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এলাকায় প্রতিবছর অনেক আগেভাগে শীত নামে। অপরদিকে খালি চোখে কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বত দেখা মিলে। তাই আমাদের এখানে পর্যটকদের আনাগোনাও বাড়ে। এবারও পর্যটক আসতে শুরু করেছে।’
এদিকে শীত মৌসুমের নতুন বছরে পর্যটক বরণে সাজানো শুরু করেছে হোটেল, আবাসিক ও রিসোর্টগুলো। গেল বছরগুলোতে পর্যটকের আগমন কিছুটা কম থাকলেও চলতি মৌসুমে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন ব্যবসায়ীসহ পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টরা।
তেঁতুলিয়ার কাঠের বাড়ি গেস্ট হাউজের স্বত্বাধিকারী হুমায়ুন কবির উজ্জল বলেন, ‘তেঁতুলিয়ায় কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পর্যটকরা প্রতিবছর ছুটে আসেন। এবারও আসা শুরু হয়েছে, আমরা তাদের নতুন বিনোদন দিতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। হোটেল-মোটেলগুলো নতুন রূপে সাজাচ্ছি।
তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলে রাব্বী বলেন, সারা বছরই তেঁতুলিয়ায় পর্যটকদের আগমন ঘটে। চেষ্টা করা হয় তাদের সকল সুযোগসুবিধা দেয়ার। এবারও তার ব্যতিক্রম নেই। পর্যটকদের সুবিধায় নিরাপত্তায় নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। একইসঙ্গে হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট মালিকসহ স্থানীয় পরিবহন মালিকদের সতর্ক অবস্থায় থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কেউ যদি আইন অমান্য করে পর্যকদের হয়রানি করে তবে অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।