তিন দিন না পেরোলে আপনি বার্তার উত্তর দেন না
মনে করুন, আপনার ফোনে বার্তা এল। আপনি খুলে দেখলেন। এমন সময় অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন, উত্তর আর দেওয়া হলো না। আপনিও বেমালুম ভুলে গেলেন। এমনটা অনেক সময় হয়। তবে ভুলে গেলে চলবে না, ওদিকে আপনার উত্তরের অপেক্ষায় কেউ হয়তো ক্ষণ গুনছেন। আপনি যদি তাৎক্ষণিক উত্তর দিতে না পারেন, তবে সেই বার্তা তখন না খোলাই ভালো। পরে সময় করে উত্তর দেবেন। আবার এমন প্রশ্ন করা হয়েছে, যার উত্তর এই মুহূর্তে আপনার কাছে নেই, তখন জানিয়ে দিন আপনি পরে তাঁর সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলবেন।
ম্যাচ ডটকমের এক জরিপে দেখা গেল, অনলাইনে নারী ও পুরুষের মধ্যে সম্ভাব্য মিলন বন্ধে বড় ভূমিকা পালন করে ভুল বানান ও ব্যাকরণ। আবার এক শব্দে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে সে শব্দের সংক্ষিপ্ততম রূপ ব্যবহার করে উত্তর দেওয়াও কিন্তু প্রাপকের জন্য বিরক্তিকর। কষ্টেসৃষ্টে আর গোটা কয়েক শব্দ যোগ করে দিন না! দেখুন আলোচনা কত দূর গড়ায়।
এসএমএসে হোক বা মেসেঞ্জারে, কেউই দীর্ঘ বার্তা পড়তে চান না। আপনার বক্তব্য ছোট্ট আর মিষ্টি হলেই ভালো। বেশি যদি বলার থাকেই, তবে ফোন করে বলুন বা ই-মেইলে লিখে পাঠান। অনলাইনে কাটখোট্টা শব্দের ব্যবহার যত কম করা যায়, ততই ভালো।
সংবাদপত্রে লেখা প্রকাশের বেলায় যেমনটা হয়, একজন প্রতিবেদন তৈরি করেন, সেটা কয়েক দফা সম্পাদনা হয়, তথ্য যাচাই হয়, বানান দেখা হয়, এরপর সেটা ছাপা হরফে পাঠকের হাতে পৌঁছায়। মানুষ যখন ফেসবুকে চ্যাট করে, তখন কি আর অতশত ভাবে। সেখানে ভুল থাকতেই পারে। আপনি চেষ্টা করবেন যেন আপনার লেখায় ভুল না থাকে, তবে অযথা প্রেরকের লেখায় ভুল ধরতে যাবেন না।
আপনি লেখেন…মোছেন…লেখেন…মোছেন
হোয়াটসঅ্যাপে এমনটা বেশি হতে দেখা যায়। প্রেরক লিখছেন তো লিখছেনই। লেখা আর শেষ হয় না। পাঁচ মিনিট ধরে টাইপ করার পর দেখা গেল, লিখে পাঠিয়েছেন একলাইন। আপনি যখন কিছু লিখে পাঠাবেন, তা আগে ভেবে নিন। ভুল যে একদম হবে না, তা তো না। কিন্তু অনন্তকাল ধরে লিখবেন, কাটবেন, লিখবেন, কাটবেন—এতে প্রাপক বিরক্ত হতে পারেন। তাৎক্ষণিক বার্তা তো তাৎক্ষণিকই হতে হবে।
আবার এখন ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠানোর পরও তা মুছে ফেলার অপশন থাকে। তাই বলে বারংবার পাঠানো বার্তা মুছে ফেলাও কাজের কিছু নয়। মনে করুন, আপনি কিছু লিখে পাঠানোর পর বুঝলেন সেটা ভুল হয়ে গেছে। তিন সেকেন্ড পর সেটি মুছে ফেললেন। কিন্তু প্রাপক তা এরই মধ্যে দেখে ফেলতে পারেন, সবচেয়ে খারাপ হলো যদি অর্ধেকটা দেখার পর আপনি মুছে ফেলেন। এতে ভুল–বোঝাবুঝি তৈরি হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক অব আমেরিকার ট্রেন্ডস ইন কনজ্যুমার মোবিলিটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, অন্ধকার থিয়েটারে স্মার্টফোন ব্যবহার অন্যদের জন্য সবচেয়ে বিরক্তিকর। এর পরেই উপাসনালয় এবং রেস্তোরাঁর কথা এসেছে ওই প্রতিবেদনে। সেখানে আরও বলা হয়েছে, প্রতি দশজনে চারজন খাওয়ার সময় বার্তা পাঠান এবং প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কথার মাঝে পকেট থেকে ফোন টেনে বের করেন। কী বলবেন? রূঢ় নাকি অভদ্র?
অল্প কিছু মানুষের সঙ্গে গ্রুপ চ্যাট মানা যায়। কোনো কাজের সমন্বয়ে সেটা বেশ কার্যকরীও। তবে ইচ্ছা হলো আর বন্ধু তালিকা থেকে ইচ্ছামতো ১০০ জনকে এক করে বার্তা পাঠিয়ে দিলেন। প্রাপকদের স্মার্টফোনে দিনভর একটু পরপর টুংটুং করে বার্তা আসার নোটিফিকেশন বাজবে আর তাঁরা ফোন হাতে নিয়ে দেখবেন সেখানে দরকারি কিছু নেই। বিরক্ত কেন হবেন না বলুন? আর আপনি যদি এমন গ্রুপ চ্যাটের প্রাপক হন, তবে খুব প্রয়োজন না হলে সেখানে কিছু লিখবেন না।
মনে করুন, ফোনে নোটিফিকেশন পেলেন সাতটি নতুন বার্তা আছে। খুলে দেখলেন একজনই সাতটি বার্তায় একটি করে মোট সাতটি শব্দ লিখেছেন। আর সেই সাতটি শব্দ আসলে একটি বাক্যেরই অংশ। এমনটা করা উচিত হবে না। প্রথমত, পুরো বাক্য এভাবে পড়ে অর্থ উদ্ধার কঠিন হতে পারে। দ্বিতীয়ত, একটি শব্দ কোনো কারণে না পৌঁছালে বা আগে-পরে পৌঁছালে অর্থ ভিন্ন হয়ে যেতে পারে।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট