যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়গ্রহণকারী বাংলাদেশের দূর্নীতিবাজরা সামাজিকভাবে বয়কটের শিকার হয়েছেন। দেশের দূর্নীতিবাজদের মধ্যে যারা নিউইয়র্ক ষ্টেট সহ যুক্তরাষ্ট্রের যেসব ষ্টেটে আশ্রয় নিয়েছেন বা যাদের বিরুদ্ধে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়-প্রশ্রয় নিয়েছেন তারা প্রকাশ্যে আসছেন না বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। অপরদিকে সংশ্লিস্ট দূনীৃবিাজদের খোঁজ আর তথ্য সংগ্রহে সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ের বিভিন্ন মহল ও সংস্থা থেকে অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে।
সূত্র মতে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মরহুম মোহাম্মদ নাসিম পুত্র তমাল মনসুর, আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী, সাবেক এমপি আব্দুস সোবহান গোলাপ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী (প্রেস) সাংবাদিক আশরাফুল আলম খোকন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, সাউথ-বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান এসএম আমজাদ হোসেন, শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ এখন যুক্তরাষ্ট্রেই বসবাস করছেন এবং তারা প্রকাশ্যে জনসম্মুখে আসছেন না। তারা সামাজিকভাবে বয়কটের শিকার হচ্ছেন বলে সচেতন প্রবাসীরা জানিয়েছেন। আর তাদের গা ঢাকা দেওয়ার কারণে সঠিক কোন অনুসন্ধানও মিলছে না যে, তারা কে কোথায় অবস্থান করছেন।
নাসিম পুত্র তমাল মনসুর
বাংলাদেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ১৭৫ কোটি টাকার সরকারি ক্রয়ে দুর্নীতি এবং অর্থ পাচার করে নিউইয়র্কের ১২ অ্যাপার্টমেন্ট ক্রয়ের অভিযোগে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মরহুম মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে তমাল মনসুরের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন। এ ছাড়াও তমালের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার, প্রকল্পে অনিয়মসহ দেশে-বিদেশে বিপুল অবৈধ সম্পদ গড়ার অভিযোগ রয়েছে। গত ৩ সেপ্টেম্বর দুদকের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, তমালের বিরুদ্ধে নিউইয়র্কের জ্যামাইকায় রিয়েল এস্টেট বিজনেস এবং আফতাব স্কাই ভিউ কনডোমোনিয়াম টাওয়ারের ২৪টি অ্যাপার্টমেন্টের মধ্যে ১২টি অ্যাপার্টমেন্ট ও ৪টি পার্কিং স্পেস ক্রয় ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও তৎকালীন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী বাবার ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে দুর্নীতি-অনিয়মসহ বিভিন্ন অনৈতিক কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েন তমাল। এর মধ্যে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ১৭৫ কোটি টাকার সরকারি ক্রয়ে নিম্নমানের মালামাল সরবরাহ করে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেন বলে ঢাকা থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সাবেক মন্ত্রী মরহুম মোহাম্মদ নাসিমের পুত্র তমাল মনসুরের নিউইয়র্কে একাধিক অ্যাপার্টমেন্ট ক্রয়ের বিষয়ে ইতিপূর্বে টাইম টেলিভিশন অনুসন্ধানী রিপোর্ট প্রচার করে। সেসময় রিপোর্টটি বিভিন্ন মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করে।
আবদুস সোবহান মিয়া (গোলাপ)
ইতিপূর্বে প্রথম আলো’য় প্রকাশিত খবরে বলা হয়, আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য মো. আবদুস সোবহান মিয়া (গোলাপ) যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ৪০ লাখ ডলার ব্যয়ে একাধিক বাড়ি কিনেছেন। বিষয়টি নির্বাচনী হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেননি। এই তথ্য অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক ‘অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট’ বা ওসিসিআরপি তাদের ওয়েবসাইটে করা একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।
মো. আবদুস সোবহান মিয়া ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মাদারীপুর-৩ আসন থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। গত ২০২২ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় সস্মেলনে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে তিনি প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকের পদ পান। তিনি দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদকও ছিলেন।
২০২৩ সালের ৬ জানুয়ারী শুক্রবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মো. আবদুস সোবহান মিয়া ২০১৪ সালে প্রথম নিউইয়র্কে অ্যাপার্টমেন্ট কেনা শুরু করেন। ওই বছর নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস এলাকায় একটি সুউচ্চ ভবনে অ্যাপার্টমেন্ট কেনেন তিনি। পরের পাঁচ বছরে তিনি নিউইয়র্কে একে একে মোট ৯টি প্রপার্টি বা সম্পত্তির (ফ্ল্যাট বা বাড়ি) মালিক হন। এসব সম্পত্তির মূল্য ৪০ লাখ ডলারের বেশি (ডলারের বর্তমান বিনিময় মূল্য অনুযায়ী প্রায় ৪২ কোটি টাকা)।
মো. আবদুস সোবহান মিয়া ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মাদারীপুর-৩ আসন থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় সস্মেলনে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে তিনি প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকের পদ পান। তিনি দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদকও ছিলেন।
ওসিসিআরপির করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে পাঁচটি কনডোমিনিয়াম কিনেছিলেন আবদুস সোবহান। সে সময় ওই সম্পত্তির মূল্য ছিল প্রায় ২৪ লাখ ডলার। এ ছাড়া আশপাশের ভবনগুলোতে ৬ লাখ ৮০ হাজার ডলার মূল্যের তিনটি অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছিলেন তিনি। নিউইয়র্কে কেনা এসব সম্পত্তির নথিপত্র বলছে, সম্পত্তিগুলো নগদ অর্থে কেনা হয়েছিল। এগুলোর মালিকানায় রয়েছেন তাঁর স্ত্রী গুলশান আরাও।
ওসিসিআরপির করা প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে আবদুস সোবহান নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে আরও একটি সম্পত্তি (বাড়ি) কিনেছিলেন। ওই সম্পত্তির মূল্য ছিল প্রায় ১২ লাখ ডলার। ২০১৯ সালের ১৫ আগস্ট তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছিলেন। এর সাত মাস আগে বাংলাদেশে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। উল্লেখ্য, আব্দুস সোবহান গোলাপ এক সময় যুক্তরাষ্ট্র প্রাসী ছিলেন। বসবাস করতেন নিউইয়র্কে। ছিলেন নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা।
শিবলী-খোকন-বাবুর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
এদিকে ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থাকায় বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন ও তার স্ত্রী রেজওয়ান নুর, খুলনা-৬ আসনের সাবেক এমপি আক্তারুজ্জামান বাবু ও তার স্ত্রী শারমিন আক্তারের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত। গত ৯ অক্টোবর বুধবার দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ আস সামছ জগলুল হোসেনের আদালত এ আদেশ দেয়। এদিন দুদকের পক্ষে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আলাদা তিনটি আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে আদালত দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আবেদন মঞ্জুর করে।
শিবলী ও আক্তারুজ্জামানের নিষেধাজ্ঞা আবেদনে বলা হয়েছে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঠিকাদারি ব্যবসাসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎপূর্বক নিজ ও পরিবারের সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। তাই সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিদেশ গমন রহিত করা আবশ্যক।
অন্যদিকে আশরাফুল আলম খোকনের নিষেধাজ্ঞা আবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রেস সচিব হিসেবে কর্মরত থেকে ঘুষ নিয়ে দলের পদ বাণিজ্য, ঋণ ও মুদ্রা চোরাচালান সিন্ডিকেট পরিচালনা, ম্যাক্স গ্রুপ, নগদ ও অন্যান্য বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে সুবিধা গ্রহণ, অবৈধভাবে ভিওআইপি ব্যবসা পরিচালনাসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা উপার্জনপূর্বক নিজ ও পরিবারের অন্য সদস্যদের নামে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগটি দুর্নীতি দমন কমিশনে অনুসন্ধান চলমান রয়েছে।
আশরাফুল আলম ইতিপূবে তার কর্মস্থল ত্যাগ করে যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন এবং সপরিবারে নিউইয়র্ওে লং অইল্যান্ডেই নিজ বাসায় বসবাস করছেন বলে জানা গেছে। তবে মাঝে মধ্যে তিনি প্রকাশ্যে আসলেও বর্তমানে নিজেকে গুটিয়ে রাখছেন।
এসএম আমজাদ হোসেন
সাউথ-বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান এসএম আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে ৪৩০ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলা রয়েছে। এ ছাড়া দুদকের অনুসন্ধানে নতুন করে আরও ৮২৯ কোটি টাকা জালিয়াতির তথ্য মিলেছে। এ অবস্থায় এসএম আমজাদ হোসেন স্থল সীমান্ত দিয়ে ২০২৩ সালের ৩ নভেম্বর ভারত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন। তার সঙ্গে স্ত্রী সুফিয়া আমজাদ ও মেয়ে তাজরির আমজাদও রয়েছেন। তারা নিউইয়র্ক সিটির জ্যামাইকা ও লং আইল্যান্ডে বাসা-বাড়ী কওে বসবাস করছেন। আমজাদ হোসেনের দুর্নীতির কারণে সম্প্রতি তার সব ব্যাংক হিসাব জব্দ (অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ) করেন আদালত। সাউথ বাংলা ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদ থেকে তিনি সরে যেতে বাধ্য হন। বিদেশ আগমনের ক্ষেত্রে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট ব্যবহার করেন।
আমজাদ হোসেনের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রতিবেদনে বলা হয়, চার দেশে বিপুল পরিমাণ অর্থপাচার করেছেন আমজাদ হোসেন। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ভারতে একাধিক বাড়ি, গাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন তিনি। পাচার করা বিপুল অঙ্কের অর্থে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে প্রাসাদ গড়েছেন। আমজাদ হোসেনের নামে দুদকে নতুন করে আরও ৮২৯ কোটি টাকা জালিয়াতির তথ্য মিলেছে। এর আগে আরও ৪৩০ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ ছিল।
সব মিলিয়ে তার জালিয়াতি করা অর্থের পরিমাণ ২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এর মধ্যে ৯ কর্মচারীর নামে তার ২৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাত করেছেন-মর্মে প্রমাণ মিলেছে। বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পর আমজাদ ও তার স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ৯৩৫টি ব্যাংক হিসাব জব্দের (ফ্রিজ) আদেশ দেন আদালত। দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান এসএম আমজাদের দুর্নীতির বিষয় অনুসন্ধান করেন।
জাহাঙ্গীর আলম
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে অনুসন্ধান শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সিআইডি সূত্র জানায়, শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনে তাঁর ব্যক্তিগত স্টাফ (পিয়ন) ছিলেন জাহাঙ্গীর। যাঁর কাজ ছিল সুধা সদনে খাওয়ার পানি পরিবেশন করা। এ কারণে তাঁর নাম হয় পানি জাহাঙ্গীর। পরে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হলে জাহাঙ্গীর নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী পরিচয় দেওয়া শুরু করেন। এ পরিচয় ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের পদ, চাকরি, নিয়োগ ও বদলি–বাণিজ্য করেন জাহাঙ্গীর। নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতির পদ নিয়ে গড়েছেন কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ। প্রতারণার মাধ্যমে তিনি ৪০০ কোটি টাকার মালিকসহ গাড়ি-বাড়ির মালিক হয়েছেন বলে জানা গেছে।
গত জুলাই মাসে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের বাসার সাবেক এক কর্মীর অর্থসম্পদের বিষয়টি সামনে এনেছিলেন। সেই ব্যক্তিটি ছিলেন জাহাঙ্গীর। সেদিন শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘আমার বাসায় কাজ করেছে, পিয়ন ছিল সে, এখন ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না। বাস্তব কথা। কী করে বানাল এত টাকা? জানতে পেরেছি, পরেই ব্যবস্থা নিয়েছি।’
গত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জাহাঙ্গীর নোয়াখালী-১ আসন (চাটখিল-সোনাইমুড়ী) থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। তিনি নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার খিলপাড়া ইউনিয়নের নাহারখিল গ্রামের বাসিন্দা।
সিআইডি সূত্র আরও জানায়, বিভিন্ন মাধ্যমে তারা জানতে পেরেছে, জাহাঙ্গীরের স্ত্রী কামরুন নাহারের নামে রয়েছে ৭ কোটি ৩০ লাখ টাকার সম্পদ। যার মধ্যে ধানমন্ডিতে ২ হাজার ৩৬০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট, ১টি গাড়ি, বিভিন্ন ব্যবসায় ৭৩ লাখ টাকা বিনিয়োগ। তাঁর ব্যাংক হিসাব নম্বরে ১ কোটি ১৭ লাখ টাকা জমা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া জাহাঙ্গীরের নিজের নামে তাঁর এলাকায় ৪ কোটি টাকার কৃষি ও অকৃষিজমিদ; রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও নিউমার্কেটে দুটি দোকান; মিরপুরে সাততলা ভবন ও দুটি ফ্ল্যাট; গ্রামের বাড়িতে একতলা ভবন এবং চাটখিলে চারতলা বাড়ি রয়েছে। নোয়াখালীর মাইজদী শহরের হরিনারায়ণপুর এলাকায় তাঁর পরিবারের একটি আটতলা বাড়ি রয়েছে; যার ১৯টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ১৮টি ভাড়া দেওয়া আছে।
সিআইডি বলছে, অস্থাবর সম্পদ হিসেবে জাহাঙ্গীরের নগদ ও ব্যাংক মিলিয়ে ২ কোটি ৫২ লাখ ২ হাজার ৪৩০ টাকা, ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকার ডিপিএস, এফডিআর ১ কোটি ৩০ লাখ ৫৫ হাজার ৯৬৮ টাকা; তাঁর স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবের স্থিতি ২৭ লাখ ৯৭ হাজার ৪৫৫ টাকা, ডিপিএস ১৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা এবং অংশীদারি ফার্মে ৬ কোটি ২৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকার বিনিয়োগ আছে বলে তথ্য পাওয়া যায়। এ ছাড়া জাহাঙ্গীর আলম এ কে রিয়েল এস্টেট লিমিটেড নামে একটি ডেভেলপার কোম্পানির মালিক ও হুন্ডির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করেছেন বলে জানতে পেরেছে সিআইডি।
জাহাঙ্গীর আলমনের পরিবার ইমিগ্র্যান্ট হিসেবে আগে থেকেই নিউইয়র্কের ওজনপার্কে বসবাস করছিলেন। শেখ হাসিনার সরকার পতনের আগেভাগেই সে নিউইয়র্কে পাড়ি জমালেও তার সন্ধান মিলছে না। কারো কারো মতে সে ওজনপার্ক আর বাফেলো এলাকায় লুকয়ে থাকছেন।