শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৫ অপরাহ্ন

একদিনে উদয়পুর ঘুরে দেখার মজাদার এবং রোমাঞ্চকর এই অভিজ্ঞতা কোনওদিনও ভুলব না

  • আপডেট সময় শনিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২৪

ভ্রমণপ্রেমী মানুষ ২দিনের ছুটি পেলেই বেরিয়ে পড়তে চায়। ব্যক্তিগত ভাবে আমিও সেই তালিকা থেকে আলাদা নই । তাই উইকএন্ড আর জন্মাষ্টমীর মিলিয়ে উদয়পুর ভ্রমণের প্ল্যান করে ফেললাম। আর গুজরাটে থাকার কারণে ১দিনের জন্য উদয়পুর ভ্রমণের প্ল্যানটা রেডি করে ফেলতে বেশ সুবিধাই হলো।

ভ্রমণবৃতান্ত

Photo of একদিনে উদয়পুর ঘুরে দেখার মজাদার এবং রোমাঞ্চকর এই অভিজ্ঞতা কোনওদিনও ভুলব না... by Surjatapa Adak

রবিবার সকাল ৫.৩০ টা নাগাদ গাড়ি ভাড়া করে আমেদাবাদ থেকে বেরিয়ে পড়লাম উদয়পুরের উদ্দেশ্যে। যে কোনও ভ্রমণস্থানে প্রথমবার ভ্রমণ করার অনুভূতিটা একটু অন্যরকম হয়, মনের মধ্যে সেই ভ্রমণস্থানটিকে কেন্দ্র করে অনেক রকমের কৌতূহল লুকিয়ে থাকে। বিশেষ করে ঐতিহাসিক স্থান দর্শনের আনন্দটা বেশ রোমাঞ্চকর হয়। উদয়পুর পৌঁছলাম বেলা ১১.৩০ টা নাগাদ। হোটেলে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে উদয়পুরের ভ্রমণস্থান দর্শনের বেরোনোর আগেই শুরু হলো হঠাৎ বৃষ্টি। আমাদের হোটেলটা ছিল পাহাড়ের উপরে। এই উপর থেকে লেক সহ উদয়পুর শহরের একটা সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করা যায়। আর বৃষ্টির দিনে দূরের লেক এবং প্যালেস সহ শহরের রূপটা আরও মোহনীয় লাগল ।প্রায় ১.৩০ নাগাদ হোটেল থেকে বেরিয়ে পৌঁছে গেলাম রেস্টুরেন্টে। রাজস্থান ভ্রমণে গিয়ে রাজস্থানী খাবারের স্বাদ চেখে দেখার সুযোগটা মিস করলাম না। রাজস্থানী থালি খেয়ে উদয়পুর ভ্রমণ শুরু করলাম। প্রথমেই জানিয়ে রাখি গাড়ি সহযোগে গেলেও উদয়পুরের বিখ্যাত ভ্রমণ স্থানগুলি দর্শন করার জন্য লোকাল অটোর সাহায্য নেওয়া প্রয়োজন।

১ দিনের দর্শনীয় স্থান

১. জগদীশ মন্দির

Photo of একদিনে উদয়পুর ঘুরে দেখার মজাদার এবং রোমাঞ্চকর এই অভিজ্ঞতা কোনওদিনও ভুলব না... by Surjatapa Adak

লাঞ্চ করে প্রথমেই পৌঁছে গেলাম জগদীশ মন্দির। ইন্দো – আর্য স্থাপত্য শিল্পের অসাধারণ নিদর্শন হল জগদীশ মন্দির । এই মন্দিরটি ১৬৫১ সালে মহারানা জগৎ সিং প্রথম নির্মাণ করেন। এই মন্দিরে স্থাপিত আছেন ভগবান বিষ্ণু। সম্পূর্ণ মন্দিরে পাথরের উপর নানান দেবদেবী এবং পশুর মূর্তি খোদিত রয়েছে ।

২. গুলাব বাগ

Photo of একদিনে উদয়পুর ঘুরে দেখার মজাদার এবং রোমাঞ্চকর এই অভিজ্ঞতা কোনওদিনও ভুলব না... by Surjatapa Adak

গুলাব বাগ হল উদয়পুরের সর্ববৃহৎ বাগান। প্রায় ১০০ একর জমির উপর গঠিত এই বাগানে নানান প্রজাতির গোলাপ গাছ রয়েছে।

৩. লেক পিছোলা

Photo of একদিনে উদয়পুর ঘুরে দেখার মজাদার এবং রোমাঞ্চকর এই অভিজ্ঞতা কোনওদিনও ভুলব না... by Surjatapa Adak

পিছলি গ্রামের নাম অনুসারে এই লেকের নামকরণ করা হয়েছে। জগমন্দির এবং জগ নিবাস এই আইল্যান্ডেই অবস্থিত। এই লেকে বোট রাইড করে সূর্যাস্ত দর্শন করার প্ল্যান করতে পারেন। সময়ের অভাবে বোট রাইড, জগমন্দির, জগনিবাস দেখার সুযোগ আমার হয়নি।

৪. সহেলিওকি বাড়ী

Photo of একদিনে উদয়পুর ঘুরে দেখার মজাদার এবং রোমাঞ্চকর এই অভিজ্ঞতা কোনওদিনও ভুলব না... by Surjatapa Adak

উদয়পুরের দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম হলো – সহেলিওকি বাড়ী। মহারানা সংগ্রাম সিং দ্বিতীয় মহিলাদের বিনোদনের জন্য এই বাড়ীর নির্মাণ করেছিলেন। এখানে অনেকগুলি ঝর্ণা, মার্বেলের হাতি, পদ্মফুলের জলাশয়, এবং অনেকগুলি বাগান রয়েছে।

৫. ফতেহ সাগর লেক

Photo of একদিনে উদয়পুর ঘুরে দেখার মজাদার এবং রোমাঞ্চকর এই অভিজ্ঞতা কোনওদিনও ভুলব না... by Surjatapa Adak

এটি বেশ বৃহৎ আকৃতির একটি লেক। এটি লেক পিছোলার উত্তরদিকে অবস্থিত। এই লেকটিকে ভারতের মানচিত্রের আকারে নির্মাণ করা হয়েছে। উদয়পুরের সবকয়টি লেকই একে অপরের সাথে সংযুক্ত। পাহাড় বেষ্ঠিত এই লেকেও বোটে চেপে ভ্রমণ করার সুযোগ রয়েছে।

৬. ভারতীয় লোককলা মন্ডল

Photo of একদিনে উদয়পুর ঘুরে দেখার মজাদার এবং রোমাঞ্চকর এই অভিজ্ঞতা কোনওদিনও ভুলব না... by Surjatapa Adak

এটি মূলত একটি মিউজিয়াম। এখানে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের লোক সংস্কৃতি যেমন পুতুল, মুখোশ ইত্যাদি রয়েছে। তবে এই লোককলা মন্ডলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয়বস্তু হলো – পুতুল নাচ।

এখন প্রায় সন্ধ্যে হয়ে এসেছে। এবার হোটেলে ফেরার পালা। হোটেলে গিয়ে রাতের অন্ধকারে উদয়পুর শহর এবং প্যালেস গুলি আলোয় সেজে উঠেছে। বৃষ্টি হওয়ার কারণে আবহাওয়াও বেশ মনোরম ছিল।

Photo of একদিনে উদয়পুর ঘুরে দেখার মজাদার এবং রোমাঞ্চকর এই অভিজ্ঞতা কোনওদিনও ভুলব না... by Surjatapa Adak

হোটেলের খোলা ছাদে ক্যান্ডেল লাইট ডিনার করতে করতে উদয়পুর শহরকে উপভোগ করলাম। উদয়পুরের প্রথমদিন এখানেই শেষ।

দ্বিতীয় দিন

দ্বিতীয় দিনের শুরু করতে বেশ অনেকটা দেরি হয়ে যাওয়ার কারণে সকালে হোটেল থেকে ব্রেকফাস্ট করে চেক আউট করে পৌঁছে গেলাম উদয়পুর সিটি প্যালেস।

উদয়পুর সিটি প্যালেস

Photo of একদিনে উদয়পুর ঘুরে দেখার মজাদার এবং রোমাঞ্চকর এই অভিজ্ঞতা কোনওদিনও ভুলব না... by Surjatapa Adak

প্রায় ৪০০ বছরের প্রাচীন এই প্যালেসটি মহারানা উদয় সিং দ্বিতীয় নির্মাণ শুরু করেন। মেওয়ার সাম্রাজ্যের তথা উদয়পুর শহরের প্রধান দর্শনীয় স্থান উদয়পুর সিটি প্যালেসটি লেক পিছোলার তীরবর্তী স্থানে অবস্থিত।একটু ভালো করলে লক্ষ্য করলে বোঝা যায় এই প্যালেসে রাজস্থানী এবং মুঘল স্থাপত্যের যুগলবন্দী রয়েছে। সম্পূর্ণ প্যালেসটি বাহ্যিকভাবে গ্রানাইট এবং মার্বেলের সংযোগে গঠিত। তবে অন্দরসজ্জার ক্ষেত্রে মার্বেল, কাঁচ , রুপোর সূক্ষ কাজ চোখে পড়ে। এছাড়াও কিছু অংশে প্রাচীন ওয়াল পেন্টিং ও দেখা যায়।

এই সিটি প্যালেসের বিশেষ দ্রষ্টব্য হলো – ট্রিপলা(তিনটি )গেট, সুরাজ গোখন্ডা, মোর(ময়ূর )চক, দিলখুশ মহল, সূর্য চোপার, শীশ মহল ( কাঁচের প্যালেস ), মতি মহল, কৃষ্ণা ভিলা, শম্ভু নিবাস, ভীম নিবাস, অমর ভিলা, ফতেহ প্রকাশ প্যালেস ইত্যাদি। সম্পূর্ণ প্যালেস দর্শনের জন্য সময় লাগে প্রায় ৩ঘন্টা। তাই হাতে অনেকটা সময় নিয়ে ভ্রমণ করাই ভালো।

প্রবেশমূল্য – এই প্যালেসের প্রবেশমূল্য ৩৫০ টাকা।

সময় – প্যালেসটি সকাল ৯.৩০ থেকে বিকাল ৫.৩০ পর্যন্ত দর্শকদের জন্য খোলা আছে।

আর এখানেই আমাদের ভ্রমণের ইতি। দ্বিতীয় দিনের লাঞ্চ সেরে নানান সুখস্মৃতি মনের মধ্যে আবদ্ধ করে এই ঐতিহাসিক শহরের পুনঃদর্শনের অঙ্গীকার নিয়ে প্রায় ৬ঘন্টার দূরত্ব অতিক্রম করে ফিরে এলাম আমেদাবাদ।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com