শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১০:১৮ অপরাহ্ন

যেভাবে দেশ-বিদেশে ৫৮০ বাড়ির মালিক সাবেক ভূমিমন্ত্রী

  • আপডেট সময় শনিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২৪

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার পরিবারের নামে থাকা দেশ-বিদেশের ৫৮০ বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট/জমিসহ স্থাবর সম্পদ জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যে ৩৪৩টি, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২২৮টি ও যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে নয়টি বাড়ি।

এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুটি ব্যাংকের হিসাব ও বাংলাদেশের একটি ব্যাংকের হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও আদালতের একাধিক সূত্র এ তথ্য যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছে।

দুদকের উপপরিচালক রাম প্রসাদ মণ্ডল বুধবার সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রী রুকমীলা জামানের মালিকানাধীন স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তিগুলো ক্রোক বা অবরুদ্ধ করার জন্য আবেদন করেন। পরে শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত সাবেক মন্ত্রীর সম্পত্তি জব্দ ও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেন। দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর এ বিষয়ে শুনানি করেন। জব্দ হওয়া সম্পত্তির মধ্যে চট্টগ্রামের দুটি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে।

এতে স্থাবর সম্পদ জব্দের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের এইচএম ল্যান্ড রেজিস্ট্রি, ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস; সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ল্যান্ড ডিপার্টমেন্ট ও যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট রেজিস্ট্রার, নিউইয়র্ক অ্যান্ড ফ্লোরিডা এবং ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের ক্ষেত্রে দুবাই ইসলামিক ব্যাংক, ফার্স্ট আবুধাবি ব্যাংক এবং বাংলাদেশের জনতা ব্যাংকের কর্তৃপক্ষকে আদেশ দেন আদালত।

দুদকের আবেদন সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাজ্যে ৩৪৩টি, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২২৮টি এবং যুক্তরাষ্ট্রে নয়টিসহ অন্যান্য দেশেও বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট/জমিসহ অন্যান্য স্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন সাইফুজ্জামান। সংশ্লিষ্ট দেশের ভূমি রেজিস্ট্রি ও অন্যান্য তথ্যাদি ও রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। সম্পদগুলো তিনি ও পরিবারের নামে ২০১৫ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে কিনেছেন এবং সে সময় তিনি বাংলাদেশ সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

সাইফুজ্জামান ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। পরে তার স্ত্রী রুকমীলা জামান ২০১৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ছিলেন। এ ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে ঋণ গ্রহণ করেছেন বলেও সত্যতা পায় দুদক।

দুদক সূত্র আরও জানায়, বাংলাদেশে তার ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে আয়কর নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, বিদেশি এসব সম্পদ অর্জনের বিষয়টি বাংলাদেশের আয়কর নথিতে উল্লেখ করেননি। তিনি বাংলাদেশের আইন মোতাবেক বিদেশে সম্পদ অর্জনের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ থেকে অর্থ প্রেরণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন গ্রহণ করেননি।

সাইফুজ্জামান চৌধুরী তার নির্বাচনি হলফনামায় বিদেশে সম্পদ অর্জনের তথ্য প্রদান করেননি বলে রেকর্ডপত্রের আলোকে প্রতীয়মান হয়। অনুসন্ধানকালে সাইফুজ্জামান চৌধুরী সরকারের প্রতিমন্ত্রী/মন্ত্রী থাকাকালে ও ব্যাংকের চেয়াম্যান এবং তার স্ত্রী রুকমীলা জামানের চেয়ারম্যান হিসাবে ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুস-দুর্নীতির মাধ্যমে অপরাধলব্ধ অর্থ অর্জনপূর্বক তা স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তর করে বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহারপূর্বক বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার করে লেয়ারিংয়ের আশ্রয়ে যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাষ্ট্রে সম্পদ ক্রয়ের মাধ্যমে ইন্টিগ্রেশন সম্পন্ন করেন। একই ভাবে তিনি ও তার স্ত্রী রুকমীলা জামান সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন ব্যাংকে ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের নামে হিসাব খুলে হিসাবগুলোর মাধ্যমে অবৈধ অর্থ লেনদেন করেছেন বলে প্রতীয়মান হয়।

৭ অক্টোবর সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রী রুকমীলা জামানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। নিষেধাজ্ঞা চেয়ে করা আবেদনে বলা হয়, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রী রুকমীলা জামান দেশ ত্যাগ করতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রী রুকমীলা জামানের বিদেশ যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া আবশ্যক।

এছাড়া আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রী রুকমীলা জামানের নামে থাকা সব ধরনের ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। পরে অর্থ পাচার আইনে সাইফুজ্জামানের ভাই আনিসুজ্জামান চৌধুরী, আনিসুজ্জামান স্ত্রী ইমরানা জামান চৌধুরী ও মেয়ে আনিছা জামানের ব্যক্তিগত হিসাব ও তাদের ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে পরিচালিত হিসাবের লেনদেন প্রথম দফায় ৩০ দিনের জন্য স্থগিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

২০১৩ উপনির্বাচনে চট্টগ্রাম-১২ আসন থেকে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন সাইফুজ্জামান। এরপর ২০১৪ সালের ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি চট্টগ্রাম-১৩ আসন থেকে আবার নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।

২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি চট্টগ্রাম-১৩ আসন থেকে নির্বাচিত হন। পরে তিনি ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি ভূমি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পান। ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি চট্টগ্রাম-১৩ আসন থেকে আবার নির্বাচিত হন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com