রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৬ পূর্বাহ্ন

২৫ হাজার কোটি টাকা পাচার করে দুবাইয়ে বিশাল সাম্রাজ্য বাবা-মেয়ের

  • আপডেট সময় বুধবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৪

দেশের অর্থনীতির বারোটা বাজিয়ে নিজের আখের গুছিয়েছেন আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ওরফে লোটাস কামাল ও তার মেয়ে নাফিসা কামাল।

সূত্র বলছে, বাপ-মেয়ে ও তাদের পরিবারের সদস্যরা প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা পাচার করে  দুবাইয়ে বিশাল সাম্রাজ্য গড়েছেন। শেয়ারবাজার কারসাজিতে ব্যাপক আলোচিত-বিতর্কিত ব্যবসায়ী থেকে মন্ত্রী বনে যাওয়া লোটাস কামাল ও তার পরিবারের সদস্যদের দুবাইয়ে আবাসন খাত থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে-বেনামে বিপুল অর্থসম্পদ রয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক সূত্র বলছে, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর নামে সরকার নির্ধারিত অতিরিক্ত ফি বাবদ প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে লোটাস কামাল ও তার পরিবারের নেতৃত্বাধীন চক্র।

চক্রটি চাকরির ভুয়া প্রতিশ্রুতি দিয়ে শ্রমিকদের কাছ থেকে বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়। এর আগে ২০১০ সালে শেয়ারবাজার কারসাজি করে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেন লোটাস কামাল। এসব টাকা দুবাইয়ে পাচারের তথ্য পেয়ে তা যাচাই-বাছাই শুরু করেছে দুদকের উপপরিচালক নুরুল হুদার নেতৃত্বে তিন সদস্যের অনুসন্ধান টিম।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ ট্যাক্স অবজারভেটরির (ইইউট্যাক্স) চলতি বছরের ১৬ মে প্রকাশিত তথ্যে বলেছে, ২০২২ সালে দুবাইয়ের আবাসন খাতে ৫৩২ বাংলাদেশির প্রপার্টি মালিকানার (অফ-প্ল্যান অর্থাৎ উন্নয়ন বা নির্মাণ শেষের আগেই কিনে নেওয়া প্রপার্টির মালিকানাসহ) হিসাব পাওয়া গেছে। এ তালিকায় লোটাস কামাল ও তার পরিবারের নাম রয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্য বলছে, দুবাইয়ের আবাসন খাতে বাংলাদেশি মালিকানাধীন প্রপার্টির মূল্য ২৮ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার। অফ-প্ল্যান প্রপার্টিসহ এ সম্পদমূল্য দাঁড়ায় ৩৭ কোটি ৭৪ লাখ ডলারে।

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলামের মতে, অর্থমন্ত্রী থাকাকালে লোটাস কামাল সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে দেশের অর্থনীতিকে নিয়ে গেছেন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।

দেশের আর্থিক খাতে চরম বিশৃঙ্খলার জন্য অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা আ হ ম মুস্তফা কামালই দায়ী।
২০০৮ সাল থেকে দীর্ঘ ১৬ বছর কুমিল্লা-১০ (নাঙ্গলকোট, সদর দক্ষিণ ও লালমাই উপজেলা) আসনের এমপি ছিলেন লোটাস কামাল। শেখ হাসিনা সরকারের পতন আঁচ করতে পেরে গত ১৫ জুলাই লোটাস কামাল ও নাফিসা কামাল লাগেজ ভর্তি টাকা নিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। বর্তমান সরকার লোটাস কামাল, তার স্ত্রী কাশমিরী কামাল ও মেয়ে নাফিসা কামালের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করে, তাদের মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বা বিএফআইইউ।

লোটাস কামালের সংসদীয় এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের শাসনামলের বিগত ১৫ বছর লোটাস কামালের সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি ছিলেন সর্বস্তরের মানুষ।

টাকার অঙ্ক যিনি বেশি দিতে পারতেন তিনি হতেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বার। টাকার বিনিময়ে জুটত দলীয় পদ। ফলে প্রতিটি দপ্তর চলত কামালের ইশারায়। এডিবি, টিয়ার ও কাবিখা বরাদ্দ দিতেন নিজেদের পছন্দের লোকদের। এসব বরাদ্দের কাজ থেকে ৩০ ভাগ টাকা কেটে নিতেন। এভাবে দুর্নীতি আর অনিয়মের মাধ্যমে পাওয়া শত শত কোটি টাকা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দুবাই পৌঁছে যেত লোটাস কামাল ও তার পরিবারের কাছে। আর সেই অর্থে বিগত ১৫ বছরে দুবাইয়ে বিশাল বিত্তবৈভব গড়ে তুলেছেন লোটাস কামাল।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com