ইতিহাসে একাধিকবার দেখা গেছে, ক্ষমতাচ্যুত বা পদচ্যুত শাসকরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নেন। সাধারণত শাসকেরা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশে থেকে গেলে তাঁদের জীবনের ওপর হুমকি থাকে। এমনকি তাঁদের পরিবারও বিপদে পড়ে। তাই অনেক সময় তাঁরা বাধ্য হয়ে অন্য দেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতাচ্যুত শাসকদের গন্তব্য হয়ে উঠেছে বিশ্বজুড়ে নানা স্থান, যেখানে তাঁরা রাজনৈতিক আশ্রয় খুঁজে পান এবং নিরাপদে জীবন যাপন করেন। আসুন জেনে নিই, ক্ষমতাচ্যুত শাসকরা সাধারণত কোন কোন দেশে পালিয়ে যান এবং তাঁদের জীবন কীভাবে পরিবর্তিত হয়।
মধ্যপ্রাচ্য ও উপসাগরীয় দেশগুলো
মধ্যপ্রাচ্য ও উপসাগরীয় দেশগুলোতে অনেক ক্ষমতাচ্যুত শাসক রাজনৈতিক আশ্রয় খুঁজে পান। সৌদি আরব, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত এই ধরনের আশ্রয়দানের জন্য পরিচিত। যেমন, উগান্ডার একনায়ক ইদি আমিন ১৯৭৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সৌদি আরবে পালিয়ে যান এবং সেখানে নিজের বাকি জীবন শান্তিপূর্ণভাবে কাটান।
ইউরোপীয় দেশগুলো
ইউরোপীয় দেশগুলোও ক্ষমতাচ্যুত শাসকদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় হয়ে উঠেছে। এখানে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়া তুলনামূলক সহজ এবং রাজনৈতিক পরিবেশ অনেক বেশি স্থিতিশীল। ইরানের শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভি, যিনি ১৯৭৯ সালে ইসলামী বিপ্লবের পর দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন, প্রথমে মিশর এবং পরে যুক্তরাজ্যে আশ্রয় নেন।
ল্যাটিন আমেরিকা
ল্যাটিন আমেরিকার কিছু দেশও ক্ষমতাচ্যুত শাসকদের আশ্রয় দেয়। যেমন, হাইতির শাসক জঁ-ক্লদ দুভালিয়ে (বেবি ডক) ১৯৮৬ সালে বিদ্রোহের মুখে পালিয়ে ফ্রান্সে চলে যান। দীর্ঘদিন তিনি সেখানে বসবাস করেন এবং নিজের দেশের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে জীবনযাপন করেন।
আফ্রিকার নিরপেক্ষ দেশগুলো
আফ্রিকার নিরপেক্ষ কিছু দেশেও রাজনৈতিক আশ্রয়ের প্রচলন রয়েছে। এই অঞ্চলের রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার কারণে ক্ষমতাচ্যুত শাসকরা অনেক সময় নিজেদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে পালিয়ে যান। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, চাদের সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসেন হাব্রে ১৯৯০ সালে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সেনেগালে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
দক্ষিণ এশিয়া
দক্ষিণ এশিয়ার কিছু দেশ, বিশেষ করে পাকিস্তান ও ভারত, মাঝে মাঝে পালিয়ে আসা শাসকদের রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৭ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর প্রথমে লন্ডনে যান এবং সেখানেই আশ্রয় নেন।
পালানোর কারণ ও শরণার্থী জীবন
ক্ষমতাচ্যুত শাসকরা মূলত জীবনের নিরাপত্তা, রাজনৈতিক প্রতিশোধ বা কারাগারে যাওয়ার ভয় থেকে পালিয়ে যান। তবে দেশ ছেড়ে পালানোর পর তাঁদের জীবন সাধারণত বিলাসবহুল হলেও, তা আগের রাজনৈতিক ক্ষমতা এবং প্রভাব থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়। অনেক সময় তাঁরা দূর প্রবাসে সামাজিক এবং মানসিক বিচ্ছিন্নতায় ভোগেন এবং তাঁদের দেশ ফেরার সুযোগও প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। তবে কয়েকজন শাসক যেমন, ইথিওপিয়ার মেনগিস্তু হাইলি মারিয়াম বা জিম্বাবুয়ের রবার্ট মুগাবে, রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে নতুন দেশে একটি নিরবচ্ছিন্ন জীবন যাপন করেছেন।
ক্ষমতাচ্যুত শাসকদের পালানোর গন্তব্য নির্ভর করে তাঁদের রাজনৈতিক মিত্র, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ওপর। তাঁরা সাধারণত এমন দেশগুলোতে আশ্রয় নেন, যেখানে তাঁদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে এবং নিরাপদ জীবন যাপনের সুযোগ থাকে। এই বিষয়টি বিশ্ব রাজনীতির একটি দীর্ঘ ইতিহাস এবং জটিলতাকে তুলে ধরে।
বিবিসি বাংলা