ড. মুহাম্মদ ইউনূস: গত ৯০ বছরে বাংলার ইতিহাসে একমাত্র গ্লোবাল সেলিব্রিটি!
আপনি জানেন কি? শতকরা ৮৩% মানুষ জানেন না ড. মুহাম্মদ ইউনূস কে! অথচ, তিনি বিশ্বের ইতিহাসে মাত্র ১২ জনের মধ্যে একজন, যিনি সবচেয়ে সম্মানজনক তিনটি পুরস্কারই জিতেছেন— নোবেল পুরস্কার, প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম, এবং কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল। হ্যাঁ, ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই গৌরবের অংশীদার।
লিওনেল মেসির নাম নিশ্চয়ই শুনেছেন? কিন্তু আপনি কি জানতেন, মেসিও একবার ড. ইউনূসের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন? এটা কোনো কল্পকাহিনী নয়, সত্যি ঘটনা!
২০২০ টোকিও অলিম্পিকে ড. ইউনূস অলিম্পিক মশাল বাহক হিসেবে অংশ নেন—এ সম্মান কেবলমাত্র সবচেয়ে গৌরবময় ব্যক্তিত্বদের জন্য।
আজ, যখন বিশ্বের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রকাশিত হয়, সেখানে ড. ইউনূস নিয়মিতভাবে সেরা ১০ এর মধ্যে থাকেন। মুসলিম বিশ্বে নোবেল বিজয়ী হিসেবে তার বিকল্প খুঁজে পাওয়া কঠিন। আর তিনি আমাদের বাংলাদেশের সন্তান। প্রশ্ন হলো, এই দেশে আর কখনো ইউনূসের মতো একজন জন্মাবে কি?
সামাজিক ব্যবসার ধারণা: অর্থনীতির নতুন রূপরেখা
ড. ইউনূস শুধু পুরস্কারের জন্য পরিচিত নন, তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে যে মাইক্রোফাইন্যান্স মডেল চালু করেছেন, তা কোটি কোটি মানুষের জীবন পরিবর্তন করেছে। কিন্তু আপনি কি জানেন, ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের মালিক নন? এমনকি, তিনি ব্যাংকটিতে কোনো শেয়ারও রাখেননি।
গ্রামীণ ব্যাংক সম্পূর্ণ অলাভজনক প্রতিষ্ঠান, যার ৭৫% মালিকানা গরিব মানুষের এবং ২৫% সরকারিভাবে নিয়ন্ত্রিত।
তার সামাজিক ব্যবসা ধারণা মূলত ব্যক্তিগত লাভ নয়, বরং সামাজিক সমস্যার সমাধানের জন্য। তিনি বিশ্বাস করেন যে সম্পদের কেন্দ্রীকরণ দারিদ্র্যকে আরও গভীর করবে এবং সমাজের জন্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সামাজিক উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। তাঁর বই “A World of Three Zeros” (শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব, এবং শূন্য কার্বন নিঃসরণ) এই দর্শনের ভিত্তি গড়ে দিয়েছে।
গ্রামীণ ব্যাংকের বাইরে ইউনূসের উত্তরাধিকার
অনেকেই ধারণা করেন যে ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংক বা গ্রামীণ টেলিকম থেকে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হন। কিন্তু সত্য হলো, গ্রামীণ টেলিকমও একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান।
ড. ইউনূস এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং নিজে কোনো শেয়ার রাখেননি। তিনি অনায়াসে বিলিয়নিয়ার হতে পারতেন, কিন্তু তিনি তা করেননি।
তার প্রভাব এতটাই বিশাল যে বিশাল কোম্পানিগুলো তার আহ্বানে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে এবং দারিদ্র্য বিমোচনে অবদান রেখেছে। কিন্তু ড. ইউনূসের নিজস্ব কোনো আর্থিক অংশ নেই। তিনি ব্যক্তিগতভাবে যে কোনো শেয়ার রেখে দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিচালিত করেছেন।
বিশ্বজুড়ে ড. ইউনূস অন্যতম সেরা পেইড স্পিকার হিসেবে পরিচিত। তাঁর বক্তৃতা শোনার জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো ৭৫,০০০ থেকে ১ লাখ ডলার বা তারও বেশি খরচ করে থাকে।
২০২৪ সালে প্যারিস অলিম্পিক আয়োজন কমিটির তিনজনের মধ্যে একজন হলেন ড. ইউনূস, যাঁর সঙ্গে রয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো। এমনকি ইতালিয়ানরাও ২০২৬ অলিম্পিকে তাকে তাদের পরামর্শক হিসেবে চায়।
কিন্তু আমরা মনে করি, তিনি কেবল গ্রামীণ ব্যাংক বা গ্রামীণ টেলিকম থেকে আয় করেন। এটি একটি ভুল ধারণা। গ্রামীণ ব্যাংক ও টেলিকমের কোনো শেয়ার তার নেই এবং তিনি এখান থেকে কোনো মুনাফা নেন না।
শিক্ষা ও উদ্ভাবনের অগ্রদূত
ড. ইউনূস শুধু ব্যবসা নিয়ে সীমাবদ্ধ নন, তিনি বাংলাদেশে একটি আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। সেরা প্রফেসররা এখানে ক্লাস নিতেন, এবং বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিত্বরা বক্তৃতা দিতে আসতেন। কিন্তু তাকে অনুমতি দেওয়া হয়নি।
আমরা যতই ড. ইউনূস সম্পর্কে জানব, ততই বুঝতে পারব—একটি দেশ এবং জাতি হিসেবে আমরা সত্যিই তাঁকে প্রাপ্যভাবে সম্মান দিতে পারিনি।
একটি প্রশ্ন, আপনি কি জানতেন ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংক কিংবা গ্রামীণ টেলিকমের মতো প্রতিষ্ঠানে কোনো শেয়ার রাখেননি? আসুন, যোগ্য ব্যক্তিকে সম্মান করতে শিখি।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস—তিনি যিনি বিলিয়নিয়ার হতে পারতেন, কিন্তু বেছে নিয়েছেন এক শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব, এবং শূন্য কার্বন নিঃসরণের বিশ্ব গড়ার পথ। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের ন্যায়বিচার এবং সমতার একটি নতুন পৃথিবীর দিকে পরিচালিত করছে।
Like this:
Like Loading...