এক পাশে নদ, অন্য পাশে সাদা বকের সারির মতো যেন পালক ফুলিয়ে হাওয়ায় দুলছে কাশফুল। এ যেন যমুনা নদীর পাড়ে সবুজের ভেতর অনেকটা জায়গাজুড়ে সাদার মেলা বসিয়েছে কাশফুল।
শরৎকাল এলেই সিরাজগঞ্জ শহরের চর-মালশাপাড়া (কাটাওয়াবদা) ক্রসবার-৩ এলাকায় কাশফুলের সৌন্দর্যের টানে আসা প্রকৃতিপ্রেমীদের ভিড় জমে। দুই থেকে তিন মাসব্যাপী কাশফুলের সাদা-ধূসর সাম্রাজ্য সবাইকে মুগ্ধ করে।
শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে গেলে দেখা যায়, প্রায় এক কিলোমিটার জুড়ে কাশফুল ফুটেছে। লম্বা-চিরল সবুজ পাতার বুক থেকে বেরিয়ে আসা কাশফুল কোথাও থোকা থোকা, কোথাও ঠাস বোনা গুচ্ছ।
আশপাশের বিভিন্ন বয়সের মানুষ এই কাশবনে বেড়াতে এসেছেন। কেউ মুঠোফোনে ছবি তুলছেন। কেউ আবার দু-চারটি কাশফুল ছিঁড়ে তোড়ার মতো তৈরি করছেন। আশপাশের শিশুরা কাশবনে খেলায় মেতে উঠেছে।
এ যেন কাশফুলের নরম ছোঁয়ায় মনে প্রশান্তি খুঁজে পাচ্ছে প্রকৃতিপ্রেমীরা। বর্ষার কদমফুলের দিন শেষ হতে না হতেই শরতের কাশফুলের দেখা মেলে।
বাতাসে দোল খাওয়া কাশফুলের নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে মুগ্ধ প্রকৃতিপ্রেমীরা। এসব কাশবনের সৌন্দর্যে মাতোয়ারা হচ্ছে মানুষ। প্রতিদিন ঢল নামছে, ছোট বড় সবাই দেখার জন্য ছুটে আসছে।
যান্ত্রিক জীবনের কোলাহল ছেড়ে মুক্ত আনন্দ পেতে প্রতিনিয়ত মানুষ ছুটে আসছে এ কাশবনে। বিশেষ করে শেষ বিকেলে কাশবনের সৌন্দর্য আরো অনেকগুণ বেড়ে যায়। এ কারণে বেশিরভাগ পর্যটক আসছেন বিকেলে।
সিরাজগঞ্জ শহর থেকে কাশবনে বেড়াতে এসেছেন মাদ্রাসা শিক্ষার্থী সায়মা। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘একসঙ্গে এত কাশফুল দেখতে বেশ লাগে। এখানে এলে শান্তি পাওয়া যায়।’
উল্লাপাড়া থেকে বেড়াতে এসেছেন সৈকত ইসলাম ও সুস্মিতা। তারা জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখানে এসে অনেক ভালো লাগছে। মূলত ছবি তুলতেই এসেছি। এসে দারুণ সময় কাটলো।’
স্থানীয়রা জানান, ভাদ্র মাসের শেষ দিকে কাশফুল ফুটতে শুরু করে। এ সময় পুরো এলাকা সাদা হয়ে যায়। কার্তিক মাস পর্যন্ত কাশফুল থাকে। বাদাম বিক্রেতা আব্দুর করিম বলেন, ‘যমুনা নদীর চরেই খেলাধুলা করে তার বেড়ে ওঠা। কয়েক বছর ধরে এখানে ফুল ফুটছে। বিকেল হলেই প্রচুর মানুষ ঘুরতে আসে। ছবি তোলে, ভিডিও করে।’
এ মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে করতে সন্ধ্যা গড়িয়ে এলো। তখন দূর আকাশে চাঁদের আভা ফুটে উঠেছে। কখনো মেঘের আড়ালে সেই চাঁদ আটকা পড়ছে। সন্ধ্যার হালকা আঁধারে তখন যমুনার জলে যেন টুকরা টুকরা রুপালি কাচ ভাসছে।