দক্ষিণ কোরিয়ায় ডিসেম্বর-জানুয়ারি এই দুই মাস তাপমাত্রা মাইনাসে নেমে আসে। এই দুই মাসের আগে-পিছে ফেব্রুয়ারি ও নভেম্বর মাস গড় তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকে। বাকি ৮ মাস শীত-গ্রীষ্ম মিলিয়ে তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপর থেকে ওঠানামা করে। অর্থাৎ এই আট মাস দক্ষিণ কোরিয়াতে বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করতে পারবে। দেশটিতে ১০ লাখ শ্রমিক প্রয়োজন। এ কারণে দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেদেশে বিদেশ থেকে মৌসুমী শ্রমিক বা খণ্ডকালীন কর্মী কাজ করবে। মৌসুমী বলতে মার্চ মাস থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত এই আট মাস একজন শ্রমিক কাজ করবে।
সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার দক্ষিণ কোরিয়া থেকে খণ্ডকালীন কর্মীর চাহিদা আসছে নিয়মিত। তবে একটি সমঝোতা স্মারকের অভাবে দক্ষিণ কোরিয়ার শ্রমবাজার হাত ছাড়া হবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মৌসুমী শ্রমিক বিনা খরচে দেশটি যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হলেও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীরা যেতে পারছে না। দক্ষিণ কোরিয়ায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় বোয়েসেলের (বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট এ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড) মাধ্যমে ভাষা শিক্ষার মাধ্যমে স্বল্প সংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী দেশটিতে যাচ্ছে।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ব্যুরো (বিএমইটি) সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের ১ জুন থেকে গত ২৮ জুলাই পর্যন্ত বোয়েসেলের মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়ায় ৩ হাজার ৭৫৩ জন কর্মী চাকরি লাভ করেছে। দেশটির শ্রমবাজার ধরে রাখতে হলে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কূটনৈতিক উদ্যোগের মাধ্যমে উভয় দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের ব্যবস্থা করতে হবে।
কোরিয়ান ভাষা শিক্ষার প্রয়োজন নেই, লাগবে না কর্মদক্ষতারও। দেশটিতে মৌসুমী কর্মী (৮ মাস) প্রেরণের সুযোগ সৃষ্টি হলে রেমিট্যান্সের পাল্লা ভারি হবে। বিনা খরচে নামমাত্র সার্ভিস চার্জের বিনিময়ে দেশটিতে মৌসুমী কর্মী চাকরি লাভ করলে প্রতি মাসে তারা বেতন পাবেন দেড় লাখ টাকা। অর্থাৎ আট মাসে ১২ লাখ টাকা রোজগার করবে। এটা দেশের রেমিটেন্সকে আরও মজবুত করতে পারবে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ, সবজি বাগান ও বাজারজাতকরণের মতো কাজে খণ্ডকালীন কর্মী (মৌসুমী) নেওয়া হচ্ছে। শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভিয়েতনাম, চীন, ফিলিপাইন, ভারতসহ কয়েকটি দেশ থেকে এসব খাতে কর্মী যাচ্ছে এখন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে খণ্ডকালীন কর্মীর চাহিদা আসছে নিয়মিত। নিয়োগকর্তার খরচে আসা-যাওয়া, থাকা-খাওয়া ও উচ্চ বেতনের সুযোগ আছে দেশটিতে বাংলাদেশি কর্মীর। তবে অনুমোদন জটিলতায় দেশটিতে কর্মী পাঠাতে পারছে না বেসরকারি খাতের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো। একটি এজেন্সি দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের সত্যায়নের পর অনুমোদন পেলেও ভিসা জটিলতায় কোনো কর্মী পাঠাতে পারেনি।
আজমেরি ওভারসিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ এম মাসুদ বলেন, গত বছর দুই হাজারের বেশি কর্মী পাঠানোর চাহিদা পেয়েছিল বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সি কেএম ইন্টারন্যাশনাল। তারা আগ্রহী কর্মীদের কাছ থেকে ৭০০ কর্মীর পাসপোর্ট জমা নেয়। এরপর দুই দফায় ৮০ জন কর্মীর চাহিদাপত্রের বৈধতা যাচাইয়ের পর তা সত্যায়ন করে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় কোরিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম শাখা। এর ভিত্তিতে কর্মী পাঠানোর অনুমোদন দেয় প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়। তবে কোরিয়ার দূতাবাস কোনো কর্মীর ভিসা দেয়নি। কারণ, কর্মীর নিয়োগপত্র ছিল ৯০ দিনের জন্য। এ ক্ষেত্রে তাদের সি-৪-৫ ভিসার প্রয়োজন হয়। এটি মাত্র তিন মাসের জন্য, যা কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে কাউকেই দিচ্ছে না কোরিয়া। খ-কালীন কর্মীর জন্য ই-৮ ভিসা অনুমোদন করে কোরিয়া। এতে আট মাস কাজ করার সুযোগ পান একজন কর্মী। কিন্তু এ ভিসার জন্য দেশটির স্থানীয় সরকার বিভাগের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের চুক্তি থাকতে হবে।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, সরকারিভাবে বিভিন্ন দেশ থেকে কর্মী নেওয়ার পাশাপাশি দেশটির স্থানীয় সরকার বিভাগের মাধ্যমে কৃষি খাতে কর্মী নেয় কোরিয়া। এর জন্য ওই দেশের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কর্মী পাঠানো দেশটির স্থানীয় সরকার বিভাগের একটি সমঝোতা স্মারক সই করতে হয়। এখন দেশটির স্থানীয় সরকার বিভাগের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সইয়ের আলোচনা চলছে।