সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২৯ অপরাহ্ন

সিয়েরা লিওনের দাপ্তরিক ভাষা বাংলা নয়

  • আপডেট সময় বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

বাংলা ভাষাকে সিয়েরা লিওনের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতির দাবিটির সত্যতার খোঁজে ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাক্টচেকিং নেটওয়ার্ক (আইএফসিএন) স্বীকৃত পশ্চিম আফ্রিকাভিত্তিক ফ্যাক্টচেক প্রতিষ্ঠান দুবাওয়ার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। দুবাওয়া নাইজেরিয়া, ঘানা, সিয়েরা লিওন, লাইবেরিয়া এবং গাম্বিয়াতে কার্যক্রম পরিচালনা করে। সিয়েরা লিওনের সরকারি ভাষা হিসেবে বা ভাষার স্বীকৃতি নিয়ে ২০২৩ সালের মার্চে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে দুবাওয়া

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে স্বাধীন হওয়া দেশটির মানুষ অনেকগুলো ভাষায় বলে। তবে এগুলোর কোনোটিই দেশটির সরকারি ভাষা হিসেবে ব্যবহার হয় না। দেশটিতে রাষ্ট্রের স্বীকৃত ভাষা ইংরেজি। বাংলা ভাষার স্বীকৃতি নিয়ে দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট প্রয়াত আলহাজ্ব আহমেদ তেজান কাব্বাহর বক্তব্যের বিষয়ে কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায় না।

এক শিক্ষিকা দুবাওয়াকে বলেন, তাঁর ২৫ বছরের শিক্ষকতা পেশায় কোনো প্রেসিডেন্ট বা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক দেশটির সরকারি ভাষা পরিবর্তনের বিষয়ে কোনো ঘোষণা সম্পর্কে তিনি অবগত নন। সিয়ের লিওনের সরকারি ভাষা কেবল ইংরেজি।

প্রসঙ্গত, বাংলা ভাষার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা সিয়েরা লিওনের প্রেসিডেন্ট প্রয়াত আলহাজ্ব আহমেদ তেজান কাব্বাহ ২০০৩ সালের ২১ অক্টোবর তিনদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন। ওই সময়ের পত্রিকাগুলোর আর্কাইভ বা পুরোনো সংস্করণ খুঁজেও সেই সময় তাঁর সফরকালে বাংলাকে দেশটির দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতির বিষয়ে কোনো আলোচনা পাওয়া যায় না।

উপরোক্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এটি স্পষ্ট, বাংলা সিয়েরা লিওনের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃত বিষয়টি সঠিক নয়। দেশটির একমাত্র রাষ্ট্রভাষা ইংরেজি। দেশটিতে সংঘঠিত প্রায় ১১ বছরের গৃহযুদ্ধে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে প্রেসিডেন্ট কাব্বাহ বাংলাকে সিয়েরা লিওনের ভাষা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার বা স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে বলেছিলেন। কিন্তু সেটি সরকারি ভাষা হিসেবে নয়। পরে এটিই সিয়েরা লিওনের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা বাংলা ঘোষণা করা হয়েছে দাবিতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।

তথ্যটির সত্যতা যাচাইয়ে দুবাওয়া সিয়েরা লিওনের রাজধানী ফ্রি ঢাড়ন কেন্দ্রিক ভাষা নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান দ্য ইনস্টিটিউট ফর সিয়েরা লিওনিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজেসের (টিআইএসএলএল) প্রোগ্রাম ডিরেক্টর লামিন এইচ কার্গবুয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তিনি বলেন, বাংলা কখনোই সিয়েরা লিওনের সরকারি ভাষা ব্যবহার হয়নি বা এমন কোনো স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।

দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট প্রয়াত আলহাজ্ব আহমেদ তেজান কাব্বাহর বাংলাকে সিয়েরা লিওনের সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এ সম্পর্কে তিনি অবগত। প্রেসিডেন্ট কাব্বাহ বাংলাকে সিয়েরা লিওনের ভাষা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার বা স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে বলেছিলেন। কিন্তু সেটি সরকারি ভাষা হিসেবে নয়।

এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট কাব্বাহ দেশটির গৃহযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকার ও দেশটির জনগণের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এমন মন্তব্য করেছিলেন। তবে কখনোই বাংলাকে সিয়েরা লিওনের সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়নি। প্রেসিডেন্ট কাব্বাহ এমন স্বীকৃতি দিয়েছেন বলে যদি ধরেও নেই, তারপরও সিয়েরা লিওনের নাগরিকদের কাছে বাংলা স্বীকৃত ভাষা হিসেবে গৃহীত হয়নি এবং দেশটির কোথাও বাংলা ব্যবহৃত হয় না।”

তিনি দুবাওয়াকে আরও বলেন, সিয়েরা লিওনের একমাত্র সরকারি ভাষা ইংরেজি। ইংরেজির বাইরে দেশটিতে ব্যবহৃত অন্যান্য ভাষাগুলো ব্যবহৃত হয় কেবল অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগের জন্য।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com