সভ্যতা বিনির্মাণ ও সমাজ সংস্কারে উদ্ভাবনশীলতা এবং উৎপাদনমুখী গবেষণা একটি দেশের সামগ্রিক উন্নতির চাবিকাঠি। আর এই উদ্ভাবন এবং গবেষণার প্রাণকেন্দ্র হলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। স্বভাবতই উচ্চশিক্ষার অবস্থান সর্বদা মেধার পক্ষে থাকে। আর তাই উন্নত দেশগুলো তাদের বিদ্যাপীঠগুলোতে বিশ্বের নানা প্রান্তের মেধাবী শিক্ষার্থীদের আমন্ত্রণ জানায়। এমনই একটি দেশ সুইডেন, যেটি বছরের পর বছর ধরে এর নাগরিকদের কাঙ্ক্ষিত আর্থ-সামাজিক অবস্থা নিশ্চিত করে আসছে। বিশ্বখ্যাত সব ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের এই আশ্রয়স্থলে ক্যারিয়ার গঠন হাজার হাজার বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে স্বপ্নতূল্য। চলুন, শেনজেনভুক্ত দেশ সুইডেনে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন পদ্ধতি, স্টুডেন্ট ভিসা, অধ্যয়ন খরচ এবং স্কলারশিপ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
সুইডিশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠ্যক্রম শেনজেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। তন্মধ্যে কিউএস ওয়ার্ল্ড র্যাংকিংয়ের শীর্ষ শতকে রয়েছে কেটিএইচ রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (৭৩) ও লুন্ড ইউনিভার্সিটি (৮৫)।
প্রধান ভাষা সুইডিশ হলেও স্ক্যান্ডিনেভিয়ানদের প্রতি ১০ জনের ৯ জনই সাবলীলভাবে ইংরেজিতে কথা বলতে পারে। তাই পড়াশোনাসহ নিত্য জীবনযাত্রা এবং চাকরি ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ছাত্রছাত্রীদের পছন্দের অন্যতম গন্তব্য সুইডেন।
সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট অনুযায়ী পরিবেশগত দিক থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নিরাপদ দেশ সুইডেন। পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় দূষণমুক্ত দেশগুলোর তালিকায় চতুর্থ স্থানে থাকা এই দেশটির দূষণ সূচক মাত্র ১৭.৭। এছাড়াও বিশ্বের সর্বাপেক্ষা ভ্রমণবান্ধব দেশগুলোর তালিকায় শীর্ষ ১০-এর মধ্যে রয়েছে এই নর্ডিক দেশটি।
পড়াশোনার জন্য সুইডেন যাত্রার আরও একটি প্রধান কারণ হচ্ছে স্টুডেন্ট নোবেল নাইটক্যাপ। এই অনুষ্ঠানে সারা বিশ্বের একাডেমিক সুপারস্টারদের সন্নিবেশ ঘটে। এই ভূ-খণ্ডে নোবেল পুরষ্কারকে কেন্দ্র করে চলে নানা আয়োজন। বিশেষ করে স্টকহোমে পুরো একটি সপ্তাহ উদযাপন করা হয় নোবেলকে ঘিরে।
শত শত স্টার্টআপ কোম্পানির স্বর্গরাজ্য সুইডেনকে বলা হয় ইউরোপের সিলিকন ভ্যালি। ক্যালিফোর্নিয়ার পর স্টকহোমই হচ্ছে দ্বিতীয় শহর, যেখানে সর্বাধিক সফল কোম্পানিগুলোর গোড়াপত্তন হয়েছে।
ইউরোপীয় দেশটির আরও যে বিষয়টি বিদেশি শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করে তা হলো- কর্ম ও জীবনের মধ্যে এক আশ্চর্য ভারসাম্য। এখানে প্রতিটি চাকরিতেই রয়েছে যথেষ্ট শিথিলতা। প্রয়োজন অনুযায়ী শিফটিং এবং প্যাটার্নিটি বা ম্যাটার্নিটি লিভসহ বিভিন্ন উপলক্ষে সাময়িক ছুটির নীতি। এখানে মূলত কর্মীদের সর্বোচ্চ উৎপাদনশীলতা পাওয়ার জন্য তাদের চাপমুক্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। পুরো দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১% কর্মচারী খুব দীর্ঘ সময় ধরে বা ওভারটাইম কাজ করে।
ইউরোপসহ গোটা বিশ্বজুড়ে বহুল সমাদৃত সুইডেনের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো-
· কেটিএইচ রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি
· লুন্ড ইউনিভার্সিটি
· উপসালা ইউনিভার্সিটি
· স্টকহোম ইউনিভার্সিটি
· চালমার্স ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি
· ইউনিভার্সিটি অব গোথেনবার্গ
· ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট
· লিন্কোপিঙ ইউনিভার্সিটি
· উমিয়া ইউনিভার্সিটি
· হালম্স্ট্যাড ইউনিভার্সিটি
সুইডিশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়াশোনার জন্য সর্বাধিক চাহিদাসম্পন্ন বিষয়গুলো-
· প্রকৌশল ও প্রযুক্তি
· ব্যবসা ও অর্থনীতি
· সাংবাদিকতা, যোগাযোগ ও তথ্য
· লাইফ সায়েন্সেস অ্যান্ড মেডিসিন
· ডিজাইন অ্যান্ড আর্কিটেক্চার
সাধারণত ফল ও স্প্রিং সেমিস্টার- এই দুই সময়ে ভর্তির কার্যক্রম চালু করে সুইডিশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। তন্মধ্যে ফল সেমিস্টার আগস্টের শেষ থেকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে শুরু হয়। এই মৌসুমে আবেদনের জন্য সবচেয়ে বেশি সংখ্যক প্রোগ্রাম চালু থাকে। আবেদন গ্রহণ অব্যাহত থাকে জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত।
ফল-এ যে প্রোগ্রামগুলো বাদ পড়ে যায়, সেগুলোতে ভর্তির আবেদন নেওয়া হয় স্প্রিং সেমিস্টারে। এ মৌসুমে ডিসেম্বর থেকে আবেদন গ্রহণ শুরু হয়ে চলে পরের বছরের আগস্ট পর্যন্ত। কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সামার সেমিস্টারেও ভর্তি নেওয়া হয়। তাই উত্তম হচ্ছে প্রথমে বিষয় পছন্দ করে তার জন্য উপযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই করে তার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট চেক করা।
তবে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আবেদনের ব্যাপারে ফল সেমিস্টারকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। কেননা আবেদনের জন্য যথেষ্ট বিকল্প কোর্স পাওয়ার সুযোগ তো আছেই! তাছাড়া এ সময়ে আবেদন করা হলে অধ্যয়ন ফি প্রদান, প্রয়োজনীয় নথিপত্র প্রেরণ, রেসিডেন্স পার্মিটের আবেদন এবং আবাসন খোঁজার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়।
স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে যে কোনো প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য একটি সাধারণ অনলাইন প্ল্যাটফর্মের (universityadmissions.se) মাধ্যমে আবেদন নেওয়া হয়। এখানে অ্যাকাউন্ট তৈরি করে কাঙ্ক্ষিত প্রোগ্রামগুলোকে নির্বাচন করে সেগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তালিকাভুক্ত করে রাখতে হয়। এক্ষেত্রে চূড়ান্ত আবেদন প্রক্রিয়া শুরুর পূর্বে প্রতিটি প্রোগ্রামের জন্য প্রয়োজনীয় শর্তগুলো জেনে নেওয়া উচিত।
· স্নাতক প্রোগ্রামে আবেদন করলে উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষার সনদ
· স্নাতকোত্তর ডিগ্রির জন্য ৪ বা অনার্সসহ ৩ বছরের স্নাতক ডিগ্রির সনদ
· ইংরেজি ভাষা দক্ষতার স্কোর:
· আইইএলটিএস (একাডেমিক) মোট স্কোর ৬.৫ (কোনো বিভাগে ৫.৫ এর কম পাওয়া যাবে না)
· টোফেল ইন্টারনেটভিত্তিক স্কোর ২০ (০ থেকে ৩০ স্কেলে) এবং মোট স্কোর ৯০
· শিক্ষার্থীর স্নাতকের ৪ বছর ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করলে, অথবা উচ্চ মাধ্যমিকে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করে থাকলে আলাদা করে আইইএলটিএস বা টোফেলের দরকার হবে না। এ ক্ষেত্রে মিডিয়াম অব ইন্স্ট্রাকশন বা এমওআই প্রদর্শন করতে হবে।
· একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট
· সিভি বা পোর্টফোলিও
· স্টেটমেন্ট অব পার্পাস
· লেটার অব মোটিভেশন
· লেটার অব রিকমেন্ডেশন
· আবেদন ফি পরিশোধের রশিদ: ৯০০ ক্রোনা বা ১০,৫৫৭ টাকা (১ সুইডিশ ক্রোনা = ১১ দশমিক ৭৩ বাংলাদেশি টাকা)
দীর্ঘকালীন পড়াশোনার জন্য এই ইইউ সদস্য রাষ্ট্রে যেতে হলে অধ্যয়নের উদ্দেশ্যে রেসিডেন্স পারমিটের জন্য আবেদন করতে হবে। এই পারমিটে অধ্যয়নের জন্য ৩ মাস বা ৯০ দিনের বেশি সুইডেনে বসবাস করার অনুমতি লাভ করা যায়।
এ ক্ষেত্রে মনে রাখা জরুরি যে, এই পারমিট নিয়ে শেনজেনভুক্ত অন্যান্য দেশে ভ্রমণ করা যাবে না। তার জন্য আলাদাভাবে স্বল্প মেয়াদী (৩ মাসের কম সময়ের জন্য) ভিসার আবেদন করতে হবে।
সুইডেনে উচ্চশিক্ষার জন্য রেসিডেন্স পারমিটের জন্য আবেদনের দ্রুততম ও সহজ উপায় হলো অনলাইনে আবেদন করা। এর জন্য https://www.migrationsverket.se/manageaccount/ -এই লিংকে যেয়ে নতুন অ্যাকাউন্ট খুলে নিতে হবে। অতঃপর আবেদন প্রক্রিয়ার সময় জরুরি নথিপত্রের স্ক্যানকপি আপলোড করতে হবে।
· পাসপোর্টের ডাটা পৃষ্ঠা (পাসপোর্ট ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অন্তত ৩ মাস পর্যন্ত বৈধ থাকতে হবে এবং যেখানে কমপক্ষে দুটি খালি পৃষ্ঠা থাকবে)
· সর্বোচ্চ ৬ মাসের মধ্যে তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি
· সুইডিশ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইস্যুকৃত ভর্তির অফার লেটার (এখানে পূর্ণকালীন অধ্যয়নের সময়সীমা ন্যূনতম ৯০ দিন বা ৩ মাসের অধিক হতে হবে)
· সুইডেনে বসবাসের জন্য আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রমাণ: প্রতি মাসে কমপক্ষে ১০ হাজার ৩১৪ ক্রোনা (১ লাখ ২০ হাজার ৯৮৮ টাকা)। নথি হিসেবে প্রার্থীর নিজের নামে থাকা সাম্প্রতিক ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখাতে হবে, যার ইস্যুর তারিখ ৪ মাসের খুব বেশি হওয়া যাবে না।
· শিক্ষার্থী যদি নিজে তার ব্যয়ভার বহন করেন তবে তার স্বপক্ষে সুস্পষ্ট প্রমাণস্বরূপ প্রাসঙ্গিক নথি লাগবে। কর্মচারী হলে কর্মসংস্থানের শংসাপত্র প্রয়োজন হবে। স্ব-নিযুক্ত হলে সুইডিশ কোম্পানির নিবন্ধন অফিস থেকে নিবন্ধন শংসাপত্র এবং এফ-ট্যাক্স কার্ডের অনুলিপি জমা দিতে হবে।
কর্মসংস্থানের শংসাপত্রে যে তথ্যাবলি থাকতে হবে, তা হলো:
· নিয়োগকর্তার নাম, যোগাযোগের বিবরণ ও কোম্পানির নিবন্ধন নম্বর
· বেতন
· চাকরির সময়কাল
অন্য কেউ স্পন্সর করে থাকলে তার পক্ষ থেকে একটি স্পন্সরশিপ লেটার দিতে হবে। স্পন্সর বা গ্যারান্টরের নিকট থেকে তহবিল শিক্ষার্থীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করতে হবে।
স্পন্সর লেটারে যেসব তথ্যাদি থাকবে, তা হলো-
· স্পন্সর বা গ্যারান্টারের নাম
· তহবিলের প্রাপক তথা শিক্ষার্থীর নাম
· তহবিলের মোট পরিমাণ এবং প্রাপ্তির সময়। তহবিল কিস্তিতে স্থানান্তর করা হলে সেই কিস্তি সংখ্যা।
· স্পন্সরশিপের সুনির্দিষ্ট সময়কাল
· তহবিলের কোন অংশ শিক্ষার্থীর জীবনযাত্রার ব্যয়ের জন্য বরাদ্দ
· স্পন্সর আয়ের উৎস ও কর্মসংস্থান সম্পর্কিত তথ্যাবলি
স্কলারশিপ পেয়ে থাকলে তার একটি শংসাপত্র। এখানে উল্লেখ থাকবে-
· স্কলারশিপ প্রদানকারীর (ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান) নাম
· স্কলারশিপ অর্জনকারী তথা শিক্ষার্থীর নাম
· স্কলারশিপের সময়সীমা এবং সুইডেনে পড়াশোনার জন্য বরাদ্দ হয়েছে তার স্বীকারক্তি
· অর্থের মোট পরিমাণ, কখন এবং কি পদ্ধতিতে প্রদান করা হবে তার বিস্তারিত
· স্কলারশিপের কোন অংশটি শিক্ষার্থীর জীবনযাত্রার ব্যয় বহনে খরচ হবে
স্টুডেন্ট লোন পেয়ে থাকলে, তার ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং একটি শংসাপত্র। এখানে উল্লেখ থাকবে-
· ঋণ প্রদানকারী বা প্রদানকারীদের নাম
· ঋণ গ্রহীতা তথা ছাত্র/ছাত্রীর নাম
· ঋণের সময়সীমা
· শিক্ষার্থী কখন তা পরিশোধ করবেন
· ঋণের অর্থ অধ্যয়নের জন্য কিভাবে ব্যবহৃত হবে (মাসিক বা মোট পরিমাণ)
· ঋণের কোন পরিমাণটি দিয়ে ছাত্র/ছাত্রীর জীবনযাত্রার ব্যয়ভার বহন করা হবে
· পিএইচডির ক্ষেত্রে সুপারভাইজার অধ্যাপকের একটি শংসাপত্র, যেখানে অধ্যয়নের পুরো সময়কাল উল্লেখ থাকবে
· পুরো অধ্যয়নের সময় জুড়ে সুইডেনে যাতায়াত ও বসবাসের জন্য স্বাস্থ্য বীমা: কমপক্ষে ৩০ হাজার ইউরো বা ৩৯ লাখ ৯৮ হাজার ৩৫১ টাকা (১ ইউরো = ১৩৩ দশমিক ২৮ টাকা), যা যে কোনো শেনজেনভুক্ত দেশের জন্য প্রযোজ্য
অনলাইনে আবেদনের ক্ষেত্রে দূতাবাসে যাওয়ার উদ্দেশ্য হলো রেসিডেন্স পারমিট কার্ড। এর জন্য দরকার হবে ছবি তোলার এবং আঙুলের ছাপ নেওয়ার। দূতাবাসে উপস্থিত হওয়ার আগে [email protected] ই-মেইল ঠিকানায় যোগাযোগের মাধ্যমে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে।
ভিসা কেন্দ্রের ঠিকানা: সুইডেন দূতাবাস, বে’স এজওয়াটার, ৬ষ্ঠ তলা, গুলশান ২, ঢাকা-১২১২
স্টুডেন্ট রেসিডেন্স পারমিটের জন্য আবেদন ফি ১,৫০০ ক্রোনা। বাংলাদেশের সুইডেন দূতাবাস ওয়েবসাইট অনুসারে, এই ফি ১৪,৮০০ টাকা, যেটি জমা দিতে হবে ব্র্যাক ব্যাংকে সুইডেন দূতাবাসের অ্যাকাউন্টে। অ্যাকাউন্ট নাম্বার- ১৫০১২০৪৮৪০৫৪৫০০১।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াকরণের কাজ প্রায় ৭৫ শতাংশ কাজ ৩ মাসের মধ্যে সম্পন্ন হয়। এর মধ্যে অতিরিক্ত তথ্য বা নথির প্রয়োজন হলে আরও সময় লাগতে পারে। তাই সুইডেনের বিশ্ববিদ্যালয় বরাবর অধ্যয়ন ফি পরিশোধের পরে যত দ্রুত সম্ভব রেসিডেন্স পারমিটের জন্য আবেদন করা উচিত। এতে ভিসার প্রক্রিয়ায় অতিরিক্ত সময় পাওয়া যায়, যার ফলাফল সেমিস্টারের ক্লাস শুরুর বেশ আগেই চলে আসতে পারে।
আবেদন যাচাই-বাছাই করে সুইডিশ অভিবাসন অধিদপ্তর কার্ড প্রদানের সিদ্ধান্ত ই-মেইলের মাধ্যমে প্রার্থীকে জানাবে। অতঃপর সে অনুযায়ী পাসপোর্ট সঙ্গে নিয়ে দূতাবাসে উপস্থিত হয়ে কার্ড সংগ্রহ করা যাবে।
অধ্যয়ন এবং জীবনযাত্রার যাবতীয় খরচ মিলে সুইডেনের উচ্চশিক্ষায় যে বাজেট রাখতে হয় তা যথেষ্ট ব্যয়বহুল। বিষয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশেষে অধ্যয়ন ফি বাবদ খরচ হতে পারে প্রতি বছর ৮০ হাজার থেকে ২ লাখ ৯৫ হাজার ক্রোনা। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৯ লাখ ৩৮ হাজার ৪৩৬ থেকে ৩৪ লাখ ৬০ হাজার ৪৮৪ টাকার সমতূল্য। তন্মধ্যে ব্যবসা ও স্থাপত্যের কোর্সে খরচ সবচেয়ে বেশি। অপরদিকে, সামাজিক বিজ্ঞান এবং মানবিক কোর্স ফি সর্বনিম্ন। এ দুয়ের মাঝে প্রযুক্তিভিত্তিক প্রোগ্রাম ও ন্যাচারাল সায়েন্স কোর্সের মূল্য বছরে ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ১ লাখ ৪৫ হাজার ক্রোনা। এই পরিমাণ প্রায় ১৪ লাখ ৭ হাজার ৬৫৫ থেকে ১৭ লাখ ৯১৬ টাকার সমান।
নিত্যদিনের থাকা-খাওয়া ও চলাফেরার খরচ বিভিন্ন শহরে বিভিন্ন রকম। বিশেষ করে স্টকহোম ও গোথেনবার্গের মতো বড় শহরগুলোতে জীবনযাত্রার ব্যয়ভার সর্বাধিক। অন্যদিকে লুন্ড ও উপসালার মতো শহরগুলো মোটামুটি শিক্ষার্থীবান্ধব।
সব মিলিয়ে গড়পড়তায় যে বাজেট থাকে সেখানে বিপুল অংশ জুড়ে থাকে আবাসন। মাসে প্রায় ২,৫০০ থেকে ৬,৫০০ ক্রোনা (২৯,৩২৬ থেকে ৭৬,২৪৮ টাকা)। ইউটিলিটির জন্য রাখতে হবে মাসে ১,৩০০ ক্রোনা (১৫,২৫০ টাকা)। খাবার ও প্রতি মাসের মুদির জন্য ১,৫০০ থেকে ২,৫০০ ক্রোনা (১৭,৫৯৬ থেকে ২৯,৩২৬ টাকা)। পরিবহনে ব্যয় হবে ১ হাজার ক্রোনা বা ১১,৭৩০ টাকা।
স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের বিভিন্ন প্রোগ্রামে রয়েছে পর্যাপ্ত স্কলারশিপের সুবিধা। এগুলোর মধ্যে কেটিএইচ রয়্যাল ইন্স্টিটিউট অব টেকনোলজির আর্থিক সহায়তার পরিমাণ ১ লাখ ৪১ হাজার থেকে ৩ লাখ ৭২ হাজার ক্রোনা পর্যন্ত। বাংলাদেশি মুদ্রায় এটি প্রায় ১৬ লাখ ৫৩ হাজার ৯৯৪ থেকে ৪৩ লাখ ৬৩ হাজার ৭২৯ টাকার সমতূল্য।
চালমার্স ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি স্কলারশিপের মূল্য ২৩ হাজার থেকে ১ লাখ ১৭ হাজার ক্রোনা। এটি প্রায় ২ লাখ ৬৯ হাজার ৮০০ থেকে ১৩ লাখ ৭২ হাজার ৪৬৩ টাকার সমান।
লুন্ড ইউনিভার্সিটি গ্লোবাল প্রতি বছর ৮৫ হাজার থেকে ১ লাখ ১৯ হাজার ক্রোনার (৯ লাখ ৯৭ হাজার ৮৯ থেকে ১৩ লাখ ৯৫ হাজার ৯২৪ টাকা) স্কলারশিপ দিয়ে থাকে।
লিন্কোপিং ইউনিভার্সিটি থেকে পাওয়া যায় বছরে ২০ হাজার থেকে ১ লাখ ২ হাজার ক্রোনা বা ২ লাখ ৩৪ হাজার ৬০৯ থেকে ১১ লাখ ৯৬ হাজার ৫০৬ টাকা।
সুইডিশ ইনস্টিটিউট স্কলারশিপ ফর গ্লোবাল প্রফেশনাল কার্যক্রম থেকে বরাদ্দ থাকে প্রতি মাসে ১২ হাজার ক্রোনা অথবা ১ লাখ ৪০ হাজার ৭৬৫ টাকা।
উপসালা ইউনিভার্সিটি গ্লোবাল স্কলারশিপের আওতায় থাকে সেমিস্টার প্রতি ৫০ হাজার থেকে ৭২,৫০০ ক্রোনা। পরিমাণটি বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৫২৩ থেকে ৮ লাখ ৫০ হাজার ৪৫৮ টাকা।
ক্যারোলিনস্কা ইন্স্টিটিউট স্কলারশিপ মাসে ১৩ হাজার ক্রোনা (১ লাখ ৫২ হাজার ৪৯৬ টাকা) দেয়। জনপ্রিয় স্কলারশিপ প্রকল্প ইরাস্মাস মুন্ডাস জয়েন্ট মাস্টার ডিগ্রি থেকে প্রতি সেমিস্টারে বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ ৫২ হাজার ক্রোনা (৬ লাখ ৯ হাজার ৯৮৪ টাকা)।
সুইডেনে পড়াশোনার জন্য রেসিডেন্স পারমিট লাভের মাধ্যমে অধ্যয়নের পাশাপাশি খণ্ডকালীন কাজের অনুমতিও পাওয়া যায়। আলাদা করে আর ওয়ার্ক পারমিটের দরকার পড়ে না। এমনকি অন্যান্য দেশগুলোর মতো এখানে কাজের জন্য কোনো ধরাবাঁধা সময়সীমা নেই।
সুইডেনে খণ্ডকালীন চাকরি করে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৪০০ ক্রোনা (৪,৬৯২ টাকা) পর্যন্ত আয় করা যায়। এই হারে সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা কাজ করে মাসিক ৩২ হাজার ক্রোনা (৩ লাখ ৭৫ হাজার ৩৭৫ টাকা) পর্যন্ত উপার্জন করা যেতে পারে। এটি ছাত্রাবস্থায় বাজেট পরিচালনার জন্য এক বিরাট সাপোর্ট। শুধু নিত্যদিনের জীবনযাত্রার ব্যয়ভার সামলানো নয়, এর মাধ্যমে কাজের অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়। তাছাড়া ভবিষ্যতে পূর্ণকালীন চাকরির জন্য নেটওয়ার্কিং-এও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই স্বল্পকালীন কাজগুলো।
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে কাজগুলোর প্রবণতা সর্বাধিক, সেগুলোর ঘণ্টাপ্রতি গড় রেটের একটি তালিকা দেওয়া হলো-
· লাইব্রেরি সহকারী: ১৬৫ ক্রোনা বা ১,৯৩৬ টাকা
· গ্রাহক সেবা প্রতিনিধি: ২০০ ক্রোনা বা ২,৩৪৬ টাকা
· গবেষণা সহকারী: ২০০ ক্রোনা অথবা ২,৩৪৬ টাকা
· ল্যাব টেকনিশিয়ান: ২৩৬ ক্রোনা (২,৭৬৮ টাকা)
· রিসেপশনিস্ট: ১৬০ ক্রোনা (১,৮৭৭ টাকা)
· ওয়েটার বা ওয়েট্রেস: ১৩০ ক্রোনা (১,৫২৫ টাকা)
· বিক্রয় সহকারী: ১৪৪ ক্রোনা (১,৬৮৯ টাকা)
· আইটি সাপোর্ট: ২৫৩ ক্রোনা (২,৯৬৮ টাকা)
· ফ্রিল্যান্স রাইটিং বা অনুবাদক: ২৪২ ক্রোনা (২,৮৩৯ টাকা)
এই উপার্জনের ক্ষেত্রে কর দেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা জরুরি। কেননা মাসিক আয়ের প্রায় ২০ থেকে ৩০% কর দিতে হয়।
মানের দিক থেকে সর্বোচ্চ স্তর বজায় রাখায় সুইডেনের উচ্চশিক্ষা যথেষ্ট ব্যয়বহুল। তবে স্কলারশিপ ও খণ্ডকালীন চাকরির সুবিধা মেধাবীদের জন্য এই অধ্যয়নকে অনেকটা সহজসাধ্য করে তুলতে পারে। ভর্তির সময়ানুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিতির জন্য স্টুডেন্ট ভিসা আবেদনে সতর্ক থাকা জরুরি। বিশেষ করে অধ্যয়ন ফি পরিশোধের পরপরই প্রথম কাজ হলো রেসিডেন্ট পারমিটের জন্য আবেদন করা। নথিপত্র ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বিচক্ষণতার পরিচয় দেওয়া উচিত, যেন পরবর্তীতে অতিরিক্ত কোনো তথ্য দেওয়ার দরকার না পড়ে। এর ফলে দ্রুত সময়ে ভিসাপ্রাপ্তির সম্ভাবনা বাড়ে।