কাশফুলের দেখা মানেই প্রকৃতি জুড়ে চলে এসেছে শরৎকাল। সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে শুরু করে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময়টুকুতে পূর্ণাঙ্গ কাশফুলের সমারোহে সৃষ্টি হয় কাশবনের। স্বভাবতই এই সময়টাই কাশফুল দেখার জন্য শ্রেষ্ঠ সময়। কাশফুল ফুটতে দেখা যায় নদীর তীর অথবা দীগন্ত বিস্তৃত ফাঁকা বালুময় জায়গায়। শরতের মনোরম সৌন্দর্যকে প্রাণভরে দেখতে প্রতি বছরেই এরকম জায়গায় জমায়েত হন প্রকৃতিপ্রেমীরা। এমনকি ঢাকা নিবাসী ভ্রমণপিপাসুরাও রাজধানীর এই যান্ত্রিক ধূসর কোলাহলের ভেতরে আবিষ্কার করে ফেলেছেন শ্বেতশুভ্র কাশবন। চলুন, ঢাকার ভেতরে এবং আশেপাশে সেরকম কয়েকটি জায়গার কাশফুলের খোঁজ জেনে নিই।
ঢাকার কাছেই ৭টি সেরা কাশবন
দিয়াবাড়ি
উত্তরার হাউস বিল্ডিংয়ের মাস্কট প্লাজা থেকে বটতলা এলাকায় প্রবেশের পর পরই রাস্তার দু’পাশ জুড়ে চোখে পড়বে অবারিত কাশবন। কাশফুলের বাগানগুলো এত বড় যে মাথা উচু করেও ঝোপ-ঝাড়ের ওপর দিয়ে দুরে দেখা যায় না। বাগানের ভেতর দিয়ে পায়ে চলা পথ ফটোগ্রাফারদের ছবি তোলার প্রিয় বিষয়বস্তু। যারা পরিবার নিয়ে ঘুরতে যান, এই দু’পাশ কাশফুলে ছেয়ে থাকা রাস্তাগুলোর সাথে তারাও নিজেদের ফ্রেমবন্দি করে নেন।
এই শুভ্রতার ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে তুরাগ নদীর একটি শাখা, যা সংস্কারের ফলে অপরূপ একটি লেকে রূপ নিয়েছে। লেকের দুই পাশ সংযোগকৃত ছোট্ট সেতুটি জায়গাটিকে আরো মোহনীয় করে তুলেছে। লেকের পাড় ঘেষে কৃত্রিম ফুটপাতের পাশে বেশ কিছু ফুডকোর্টের ভিড় হয়। এগুলোর বিশাল ছাতার নিচে বসে বিকেলের স্ন্যাকস হাতে চারপাশের কাশফুল দেখার ব্যাপারটা বেশ লোভনীয়।
বসুন্ধরা ৩০০ ফিট
কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বসুন্ধরার পাশ দিয়ে চলে যাওয়া পূর্বাচল হাইওয়ের ওপর দিয়ে যাবার সময় ফটোগ্রাফাররা তাদের ক্যামেরার শাটার রিলিজ বাটন থেকে আঙ্গুল সরাতে পারেন না। অনেকে আবার নিজের চোখে পুরোটা ধারণ করবেন না ফ্রেমবন্দি করে স্মৃতিতে রাখবেন তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যান। পিচঢালা রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে এটাই একমাত্র জায়গা যেখানে দু’চোখ দিয়ে দু’পাশের দিগন্তকে স্পর্শ করা যায়। আর আশ্বিন মাসের কাশফুলের মৌসুমে সেই দিগন্ত ভরে যায় অকৃত্রিম শুভ্রতায়। মেঘলা দিনগুলোতে আকাশের ঠিক কোন দিগন্তরেখায় কাশফুলের প্রান্তর গিয়ে মিশেছে তা বুঝা কঠিন হয়ে পড়ে।
শহীদ ময়েজ উদ্দিন চত্ত্বর ও নীলা মার্কেটের জন্য ভোজন রসিক ভ্রমণপিপাসুদের নিদেনপক্ষে খাবার নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। বেশ কিছু ব্যতিক্রম ধরনের রেস্তোরা চালু হওয়ায় পরিবার নিয়ে অনেকেই এখানে চলে আসছে একটি পড়ন্ত বিকাল কাটাতে।
আফতাব নগর
হাতিরঝিল থেকে বীর উত্তম রফিকুল ইসলাম সরণী অতিক্রম করে জহুরুল ইসলাম সরণী ধরে লোহার সেতু পেরিয়ে প্রায় আধা কিলোমিটার এগুলে চোখে পড়বে আফতাব নগর কাশবন। আফতাব নগর হাউজিং প্রোজেক্টের আওতাধীন এই জায়গাগুলো প্রতি শরতে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই কাশফুল দখল করে বসে। এমনকি পাশ দিয়ে সরু হয়ে বয়ে যাওয়া তুরাগ নদীর মৃত অংশ রামপুরা খালের আশপাশও ছেয়ে যায় কাশফুলের ছোট ছোট ঝাড়ে।
ঢাকার ভেতরে কাশফুলের শুভ্রতা ও বৈকালী রোদের মিতালীতে নিজেকে হারিয়ে ফেলার জন্য এটি একটি আদর্শ জায়গা। আফতাব নগরের একদম পেছনের এই অংশে প্রায়ই আশপাশের আবাসিক এলাকার পাশাপাশি দূর থেকেও অনেক দর্শনার্থীদের সমাগম হয়।
কাশফুলের ঝাড়ের ওপর দিয়ে নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড়িয়ে থাকা আকাশ ছোয়া বহুতল ভবনগুলো দেখে মনে হয় যেন এই কাশবনকে ঘিরে দাঁড়িয়ে ওরা পাহাড়া দিচ্ছে।
মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ
মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধের বসিলা সড়ক ছাড়িয়ে ওয়াশপুর গার্ডেন সিটি মূলত কোন তথাকথিত দর্শনীয় স্থান নয়। প্লট বিক্রির জন্য ফাঁকা পড়ে থাকা এখানকার জায়গাগুলো সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে ভরে যায় কাশফুলে।
এছাড়া বেড়িবাঁধের পশ্চিম পাশে ঢাকা উদ্যান হাউজিংয়ের প্লটগুলো থেকে শুরু করে বুড়িগঙ্গা নদীর তীর পর্যন্ত ছেয়ে যায় কাশফুলের রাজ্যে। নীচে ইট-সুড়কির বাদামী রঙের মাঝে একটি দুটি গাছের সবুজ আর উপরে সাদা মেঘের পেছনে নীল আকাশ সেই অফুরন্ত শুভ্রতার সজ্জা সঙ্গী হয়।
পুরো জায়গাটা ঘুরতে হলে নিজস্ব গাড়ি করে যাওয়াটাই উত্তম কারণ হেটে চলার ক্লান্তি এই দীর্ঘ সৌন্দর্যকে ছাপিয়ে উঠতে পারে না। তাছাড়া রিজার্ভ গাড়ি হলে ইচ্ছে মত যেকোন জায়গায় গাড়ি থামিয়ে ছবি তোলার সুযোগটাও থাকে।