1. [email protected] : চলো যাই : cholojaai.net
শরতে ব্রহ্মপুত্র নদে পালতোলা নৌকা
সোমবার, ০৯ জুন ২০২৫, ০২:১৫ অপরাহ্ন

শরতে ব্রহ্মপুত্র নদে পালতোলা নৌকা

  • আপডেট সময় রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

৫৭ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশকে সৃষ্টিকর্তা যেন নিজ হাতে সাজিয়েছেন। কবি- হিত্যিকরা তাদের সৃষ্টিতে বাংলার প্রকৃতির বন্দনা করেছেন। সৌন্দর্যের আধার এই দেশটিতে বছরের একেকটা সময় একেক রূপে আবির্ভূত হয়। তেমনি বছর ঘুরে হাজির হয় ‘শরৎকাল’। শুভ্র মেঘের দিগন্ত বিস্তৃত সাদা-নীল আকাশ বিমোহিত করে সবাইকে। প্রকৃতির অভিনবত্বে মুগ্ধ হয়ে শরতকে কাছে পাওয়ার তাড়না ব্যাকুল করে তোলে- শরৎ আর কাশফুল একই নদীর দুটি ধারা। দিগন্তজোড়া মাঠে সাদা কাশফুলের বনে হারিয়ে যেতে চায় মন। পালতোলা নৌকা নিয়ে মাঝি-মাল্লাদের ছুটে বেড়ানো নয়নাভিরাম দৃশ্য।

শরতের অপার শোভায় বিমোহিত হয়ে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, ‘শরৎ, তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলি। ছড়িয়ে গেল ছাপিয়ে মোহন অঙ্গুলি। শরৎ, তোমার শিশির ধোওয়া কুন্তলে বনের পথে লুটিয়ে পড়া অঞ্চলে আজ প্রভাতের হৃদয় ওঠে চঞ্চলি…।’ বাংলার রূপ নিয়ে কবি গুরু আরও লিখেছেন, ‘আজি কি তোমার মধুর মূরতি হেরিনু শারদ প্রভাতে! হে মাত বঙ্গ, শ্যামল অঙ্গ ঝলিছে অমল শোভাতে।’

বাংলাদেশ নদীকেন্দ্রিক সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য।

আধুনিক যানবাহনের প্রচলনের আগে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল নদী আর নৌকা। যুগের হাওয়া লেগেছিল পালে। দ্রুত থেকে আরও দ্রুত ছুটতে ধারণ করেছি যান্ত্রিক সভ্যতা। তাই পালতোলা নৌকাতে এখন আর চলে না। কালেভদ্রে দেখা মেলে তার। ইঞ্জিনচালিত নৌকা জীবনের অংশ হয়ে গেছে। কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে উঠছে। দূষিত বাতাসে দূরারোগ্য ব্যাধি।

কবিগুরু ‘শেষের কবিতা’ উপন্যাসে যে বর্ণনা দিয়েছেন বাংলার প্রকৃতির, সেই রূপ চিরন্তন হয়ে আছে। বর্ষা-শরৎ প্রকৃতি মানব হৃদয়ে রোমান্টিকতার যে সুর তোলে তা অন্য কোনো ঋতুতে মেলে না। বিশ্বজুড়ে জলবায়ুর পরিবর্তনে ষড়ঋতুর হেরফের হতে পারে, কিন্তু বৈচিত্র্যে পরিবর্তন আসতে এখনো অনেক দেরি।

শরতের এক বিকেলে দৃষ্টি নিবদ্ধ ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে। উত্তাল ঢেউ নেই। নদীর তীরে কোথাও সামান্য সবুজ, কোথাও কিনার ঘেঁষে কাশফুলের বন। জলের ওপর নৌকা যখন বয়ে যায় যাত্রীরা অনুভব করেন পরম এক সুখ। বাতাসে দোল খায় পাল তোলা নৌকা। এক সময় নদীর কিনারা দিয়ে গুনটানা (দড়ি) নৌকা চলত। এখন আর তা চোখে পড়ে না। বাতাসের অনুকূলে যেতে বড় কাপড় দিয়ে আটকানো হতো পাল তোলা নৌকা। আজকাল তা-ও কমে গেছে। নৌকার পালকে কোনো কোনো এলাকায় বলা হয় বাদাম। যে নৌকায় যত বড় বাদাম থাকত সেই নৌকা বাতাসের গতির সঙ্গে জুড়ে চলত।

মনসা মঙ্গল ও বাংলার সামাজিক সাংস্কৃতিক ইতিহাস কাব্যে বণিক চাঁদ সওদাগরের বাণিজ্যতরি ১৪ ডিঙ্গা নির্মাণ করে বাণিজ্য যাত্রা করেছিলেন। ক্রিট দ্বীপের মানুষরা হাজার হাজার বছর আগে নৌকার ব্যবহার জানত বলে জানা যায়।

ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে কাশফুল দেখতে আসা গফরগাঁও বাজারের ব্যবসায়ী শাকিল ও মিন্টু বলেন, একটা সময় এই ব্রহ্মপুত্র নদে  জাহাজ ও নৌকা চলাচল করত। পলি পড়ে নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় এখন আর সেইদিন নেই।

তবুও একটু প্রশান্তির জন্য ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে এক খ- জমিতে কাশফুলের সৌন্দর্য ও মাঝে-মধ্যে পাল তোলা নৌকা দেখতে আসি। বাংলাদেশে সবচেয়ে পরিচিত নৌকার নাম ‘ডিঙ্গি’। নদীর তীরে বসবাসকারীরা এই নৌকা ব্যবহার করেন নদী পারাপার বা অন্যান্য কাজে। আকারে ছোট বলে এটি চালাতে একজন মাঝিই যথেষ্ট। মাঝে মাঝে এতে পালও লাগানো হয়।

প্রতœতত্ত্ববিদদের আবিষ্কৃত সবচেয়ে পুরনো কুয়েতের ফাইলাকা দ্বীপে পাওয়া সমুদ্রগামী জাহাজ বা ‘রিড বোট’ তৈরি হয়েছিল ৭ হাজার বছর আগে। সিন্ধু সভ্যতায় বিভিন্ন এলাকা থেকে নানা রকমের নৌকার ব্যবহারের কথা জানা যায়।

প্রায় সাড়ে ৫ হাজার বছর আগে ভূমধ্য সাগরে বহু দাঁড় বিশিষ্ট নৌকা দেখা যেত। নৌকায় দাঁড় টানার কাজে ব্যবহার করা হতো কৃতদাসদের। দাঁড় টেনে নৌকা বাওয়া অত্যন্ত শ্রমসাধ্য ও ক্লান্তিকর। পালের উদ্ভাবন এ অবস্থা থেকে মানুষকে খানিকটা মুক্তি দেয়। দাঁড় টানার সঙ্গে পাল টানানো হলে নৌকার গতি বেড়ে যায় এবং হাওয়ার গতিতে নৌকা আরও বেশি বেগবান হয়। তখন থেকেই নানা ধরনের পালের ব্যবহার শুরু হয় বাতাসের শক্তি কাজে লাগানোর জন্য।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Developed By ThemesBazar.Com