মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৭ অপরাহ্ন

শ্বেতপত্র কী এবং এটি কী কাজে আসবে

  • আপডেট সময় সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

শেখ হাসিনা সরকারের ১৫ বছরে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে সরকারের দেয়া বক্তব্যের সাথে ভিন্নমত রয়েছে বিশ্লেষক ও বিরোধীদের। আওয়ামী লীগ সরকারের দেয়া তথ্য, বক্তব্য ও পরিসংখ্যানে বক্তব্যে দেশের অর্থনীতির সঠিক চিত্র দেখা যায়নি বলে তাদের অভিযোগ রয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার দেশের অর্থনীতির প্রকৃত চিত্র জানতে গত ২৮ আগস্ট একটি শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করেছে।

গত বৃহস্পতিবার প্রথম সভায় শ্বেতপত্রের মূল উদ্দেশ্য ও কাজের পরিধি নিয়ে আলোচনা হয়।

কমিটির প্রধান অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য শ্বেতপত্র প্রসঙ্গে বলেন, এর মাধ্যমে বর্তমান সরকার উপলব্ধি করবে, কী ধরনের উত্তরাধিকারের অর্থনীতিতে তাদের কাজ করতে হবে। সেই ভিত্তিভূমি নিরূপণ করাই আমাদের কাজ। শ্বেতপত্রে ‘মেগা প্রকল্প’ নিয়ে পর্যালোচনা করার কথাও জানান তিনি।

৯০ দিনের মধ্যে এটি সরকারকে জমা দেয়ার কথা বলা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে। তবে প্রশ্ন উঠছে, এবার তাহলে বাংলাদেশের অর্থনীতির ‘সত্যিকার চিত্রটি’ কি দেখা যাবে?

শ্বেতপত্র কী, কেন করা হয়
শ্বেতপত্রের ধারণাটি এসেছে যুক্তরাজ্যের সংসদীয় ব্যবস্থা থেকে। যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের ওয়েবসাইটে শ্বেতপত্রের বর্ণনা দেয়া আছে, ‘সরকারের দ্বারা প্রকাশিত কোনো নীতিগত নথি যেখানে সংসদীয় প্রস্তাবনা থাকে, সেগুলোই শ্বেতপত্র।’

এর ফলে অধিকতর আলাপ-আলোচনার সুযোগ তৈরি হয়।

অর্থনীতি ও বিনিয়োগ বিষয়ক জ্ঞানকোষ ইনভেস্টোপিডিয়া থেকে জানা যাচ্ছে, উনবিংশ শতাব্দীর ব্রিটেনে পার্লামেন্ট রিপোর্টের প্রচ্ছদ থাকতো নীল রঙের। যদি রিপোর্টের বিষয়বস্তু সরকারের জন্য কম গুরুত্বপূর্ণ হতো নীল প্রচ্ছদ বাদ দিয়ে সাদা প্রচ্ছদেই সেগুলো প্রকাশ করা হতো। সেই রিপোর্টগুলোকে বলা হতো হোয়াইট পেপারস্।

তবে আগে ‘বাংলাদেশে এ প্রথার প্রচলন সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী’ দেখা গেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে জাতীয় জ্ঞান কোষ বাংলাপিডিয়ায়। সেখানে বলা হয়, ‘এ প্রথা কোনো প্রস্তাবিত নীতি বা জনস্বার্থ সম্পর্কিত সমস্যার সাথে যুক্ত নয়। বরং কোনো রাজনৈতিক দলের সরকার পরিচালনার পরবর্তী সময়ে অন্য কোনো রাজনৈতিক দল কর্তৃক শাসক দলের কুকীর্তির দলিল হিসেবে শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হয়।’

যদিও এবারেরটি ‘দুর্নীতি ধরার কমিটি নয়’ বলে জানিয়েছেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, দুর্নীতি কেন হয়েছে এবং মাত্রাটা কী, সেটা বলবে এই কমিটি। কিন্তু কে দুর্নীতি করেছে, কেন করেছে সেটা বলা আমাদের দায়িত্ব না। এর জন্য সরকারের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান আছে।

বাংলাদেশে শ্বেতপত্র প্রকাশের ঘটনা এবারই প্রথম নয়।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার ২০০১ সালে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করে। তাতে আওয়ামী লীগ সরকারের আগের মেয়াদের বিভিন্ন অসঙ্গতির কথা তুলে ধরা হয়।

২০২১ সালে একদল বেসামরিক নাগরিকদের, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এবং সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিরা একটি গণকমিশন গঠন করেন। তারা পরের বছর ‘বাংলাদেশে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ২০০০ দিন’ নামে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করে।

তবে, ‘ইসলাম বিদ্বেষ’ এর অভিযোগে এটি নিয়ে সেসময় বিতর্ক দেখা দেয়।

অর্থনীতির ‘হেলথ চেক আপ’
চলতি বছরের মে মাসে বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, সাত বছরে দ্বিগুণ হয়েছে বাংলাদেশের ঋণ। জানা যায়, ২০২৩ সালের শেষ প্রান্তিকে বাংলাদেশের সার্বিক ঋণ ১০০.৬৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। এর মধ্যে ৮০ ভাগই সরকারের ঋণ।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তাদের সময়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক দায় নিয়ে কয়েকটি স্থানীয় গণমাধ্যমও প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়, শেখ হাসিনার সরকার ঋণ রেখে গেছে ১৮ লাখ কোটি টাকা।

বিগত বছরগুলোতে মূল্যস্ফীতি, অর্থ পাচার, ব্যাংক ও আর্থিক খাতের অবস্থাসহ বিভিন্ন প্রকল্পের দুর্নীতি সংবাদের শিরোনাম হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকার উত্তরাধিকার সূত্রে কেমন অর্থনৈতিক অবস্থা পেল সেটি বুঝতে অর্থনীতির একটা ‘হেলথ চেক আপ’-এর কথা বলেছেন শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য জাহিদ হোসেন।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক এই প্রধান অর্থনীতিবিদ বলেন, বর্তমানে অর্থনীতি কোন অবস্থায় আছে, উত্তরাধিকারসূত্রে কী পাওয়া গেছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কীভাবে চলছে সেগুলোকে চিত্রায়িত করার কাজটাই করবো। এটা স্বাস্থ্য পরীক্ষার মত।

এছাড়া ‘মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষাও করা হবে’ বলে তিনি বলছেন। এর ব্যাখ্যা হিসেবে তিনি বলেন, পলিসি বা নীতিগত দিকটা কীভাবে চলছে, সেই পর্যালোচনাও থাকবে শ্বেতপত্রে।

বৃহস্পতিবার প্রথম বৈঠক শেষে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আমরা ব্যাংক ও আর্থিক খাতের পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন করব না। তারল্যসংকট, নামে-বেনামের ঋণ, সঞ্চিতি ঘাটতি এসব বিষয়ে পর্যালোচনা করা হবে। আর যেন টাকা পাচার না হয়, টাকা পাচার করলে শাস্তি পেতে হবে, এমন কথা বলা থাকবে শ্বেতপত্রে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com