রপ্তানির অর্থ দেশে না এনে অন্তত ১৩৫ মিলিয়ন ডলার পাচার করেছে বেক্সিমকো গ্রুপের ১৮টি কোম্পানি। ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) দেওয়া নথি পর্যালোচনায় পাচারের এই তথ্য পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। একটি হত্যা মামলায় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে থাকা প্রতিষ্ঠানটির ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান এ তথ্য অস্বীকার করে ‘মনগড়া যুক্তি’ দিচ্ছেন। পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন। পুলিশকে তিনি বলেন, ১৩৫ মিলিয়ন ডলার পাচার করিনি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি বকেয়া রয়েছে ১০০ কোটি। রপ্তানির এই টাকা ধীরে ধীরে গ্রহণ করা হতো। কারণ বিদেশে রপ্তানি হওয়া পণ্য বিক্রির পর টাকা পরিশোধের চুক্তি হয়েছিল। এই চুক্তি অনুযায়ী রপ্তানি করা পণ্য সেখানে বিক্রির পর টাকা দেশে আনা হতো।
পুলিশ বলছে, অর্থ পাচারের সব মাধ্যমে সক্রিয় ছিলেন সালমান এফ রহমান। ২০১২ সাল থেকে রপ্তানির বিপরীতে টাকা না এনে তিনি অর্থ পাচার আইনে অপরাধ করেছেন। মূলত তিনি তার ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমানের সঙ্গে যোগসাজশে সৌদি আরবে করা দুটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই অর্থ পাচার করেছেন। এখন পাচারের তথ্য সামনে আসায় অস্বীকার করে ‘মনগড়া যুক্তি’ উপস্থাপন করছেন।
এদিকে অর্থ পাচার আইনে অনুসন্ধানে নেমেছে সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বেক্সিমকো গ্রুপের অধীনে থানা প্রতিষ্ঠানগুলোর লেনদেনের তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে অ্যাপোলো অ্যাপারেলসের মাধ্যমে প্রায় ২৩ মিলিয়ন ডলার, বেক্সটেক্স গার্মেন্টের মাধ্যমে ২৪ মিলিয়ন ডলার, ইন্টারন্যাশনাল নিটওয়্যার অ্যান্ড অ্যাপারেলসের মাধ্যমে ২৫ দশমিক দুই মিলিয়ন ডলার এবং এসেস ফ্যাশনের মাধ্যমে ২৪ দশমিক ৩৯ মিলিয়ন ডলার পাচারের তথ্য মিলেছে।
সোমবার সন্ধ্যায় সিআইডির মুখপাত্র আজাদ রহমান বলেন, অর্থ পাচার আইনে সামলাম এফ রহমান ও তার প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক লেনদেনের তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে পাচারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। আরও যাচাই করা হচ্ছে। এরপর অর্থ পাচার আইনে মামলা করে বিস্তর তদন্ত কার্যক্রম শুরু করা হবে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সালমান এফ রহমানের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেকেই এই অর্থ পাচারে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়েছেন। প্রাথমিক তদন্তে নাম আসা এসব ব্যক্তিকেও অভিযুক্ত করা হতে পারে অর্থ পাচার আইনের মামলায়। এছাড়া হুন্ডিসহ অর্থ পাচারের অন্য অবৈধ কার্যক্রমেও বড় সিন্ডিকেট করেছিলেন তিনি। তদন্তে এসব সিন্ডিকেটসহ বিভিন্ন বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
এদিকে প্রাথমিক তদন্তে সিআইডি জানতে পেরেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো গ্রুপ জনতা ব্যাংক থেকে ২১ হাজার ৬৮১ কোটি, আইএফআইসি ব্যাংক থেকে ৫ হাজার ২১৮ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ২৯৫ কোটি, সোনালী, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক থেকে ৫ হাজার ৬৭১ কোটি ও এবি ব্যাংক থেকে ৬০৫ কোটি টাকাসহ মোট ৩৩ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করেছে। এছাড়া বেক্সিমকো গ্রুপ গত কয়েক বছরে বাজার থেকে ২৭ হাজার কোটি টাকা প্রতারণা ও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে মর্মে অভিযোগ রয়েছে। বেশির ভাগ অর্থ বাংলাদেশ থেকে ওভার ও আন্ডার ইনভয়েসিং এবং হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করা হয়েছে।