মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫০ অপরাহ্ন

পাঠাও কি বাংলাদেশের চেয়েও নেপালে বেশি সফল

  • আপডেট সময় সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

প্রতিবছর বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে বহু পর্যটক ও বাংলাদেশিরা হিমালয়ের দেশ নেপালে ভ্রমণ করেন। দেশটিতে ভ্রমণকালে তারা বেশিরভাগ সময়ই থামেলে অবস্থান করেন। কিন্তু শামসুন নাহার কাজের উদ্দেশ্যে নেপালে গিয়ে লালিতপুরে অবস্থান করেছিলেন।

থামেল থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরবর্তী শহরটি প্রাসাদ ও মন্দিরের জন্য বেশ বিখ্যাত। এটি বাগমতি প্রদেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান। যেখানে রয়েছে রাজধানী কাঠমান্ডু।

সেক্ষেত্রে দরবার স্কয়ার, গার্ডেন অব ড্রিমস, আসান বাজার, বুদ্ধ স্তূপ ও পশুপতিনাথ মন্দির দেখতে হলে কাঠমান্ডু উপত্যকায় এবং এর আশেপাশে যেতে হবে। যেখানে গণপরিবহন খুব কম এবং ট্যাক্সিও ব্যয়বহুল। ফলে কাঠমান্ডুতে রাইড শেয়ারিং সেবাগুলো শুধু পর্যটকই নয়, স্থানীয়দের মধ্যেও জনপ্রিয়।

শামসুন নাহার নেপালে পাঠাও দেখে কিছুটা অবাকই হয়। কেননা একই রাইড শেয়ারিং সার্ভিস তিনি ঢাকাতেও ব্যবহার করেন। সেক্ষেত্রে লালিতপুর থেকে কাঠমান্ডু যেতে তিনি প্রায়শই এটি ব্যবহার করতেন।

দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে শামসুন নাহার বলেন, “কাঠমান্ডুতে পাঠাও পেয়ে আমি বেশ ভালো অনুভব করেছিলাম। অনেকটা নিজের বাড়ির কাছাকাছি থাকার অনুভূতি।”

গত ছয় বছর ধরে পাঠাও নেপালে নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। দেশটিতে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কোম্পানিটি যাত্রা শুরু করে।

২০১৭ সাল থেকেই নেপালে অনলাইন রাইড শেয়ারিংয়ের যাত্রা শুরু হয়। ২০১৯ পর্যন্ত এই খাতে প্রসার হতে থাকে। কিন্তু ২০১৯ সালে দেশটির সরকার পাঠাও ও টুটলির (নেপালের কোম্পানি) ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়।

কিন্তু ততদিনে নেপালের মানুষেরা অ্যাপগুলো ব্যবহারে সুবিধা পেতে শুরু করেছে। তাই সরকারও এক পর্যায়ে নিজেদের পরিকল্পনা থেকে সরে আসে।

বর্তমানে পাঠাও ও টুটলে ছাড়াও বেশ কয়েকটি রাইড শেয়ারিং কোম্পানি নেপালে ব্যবসা করছে। যার মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক রুশ প্ল্যাটফর্ম ইনড্রাইভ অন্যতম; যেটির কার্যক্রম বাংলাদেশেও রয়েছে।

স্থানীয় ব্যবহারকারী ও চালকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পাঠাও নেপালের মার্কেটে অন্য কোম্পানিগুলো থেকে ভালো করছে। এমনকি বাংলাদেশের চেয়ে নেপালে পাঠাও ব্যবহার করে অপেক্ষাকৃত দ্রুত ও স্বাচ্ছন্দ্যে গাড়ি বুক করা যায়।

ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আমাদের কথা হয় ভারত শ্রেষ্ঠ নামের এক ট্যাক্সি ড্রাইভারের সাথে। তিনি জানান, যদিও অ্যাপের ভাড়া কখনও কখনও মিটারের ভাড়ার চেয়ে কম হতে পারে, তবুও তিনি পাঠাও-তে রেজিস্ট্রেশন করেছেন। কেননা এটি তাকে নিয়মিত যাত্রী দিয়ে থাকে।

ছবি: শামসুন নাহার লিপি

ভারত শ্রেষ্ঠ বলেন, “আমি পাঠাও ব্যবহার করে বেশি যাত্রী পেয়ে থাকি। এটা এখানে বেশ জনপ্রিয়।”

এই বিষয়ে পাঠাওয়ের সিইও ফাহিম আহমেদের সাথে দ্য বিজনেসের স্ট্যান্ডার্ডের পক্ষ থেকে কথা হয়। তিনি জানান, কোম্পানিটি নেপালের ১৭টি শহরে নিজেদের কার্যক্রম প্রসারিত করেছে। একইসাথে কয়েক স্তরে সেবা প্রদান করছে। যাতে করে চালক ও ব্যবহারকারীদের মধ্যে কোম্পানিটির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে।

ফাহিম আহমেদ বলেন, “ঢাকার অনুপাতে কাঠমান্ডু যদিও ছোট শহর। জনসংখ্যার দিক থেকে যা ২০ থেকে ২৫ ভাগ। তবে স্থানের অনুপাতে সেখানকার রাইড শেয়ারিং মার্কেটের পরিসর প্রায় কাছাকাছি।”

এর পেছনে বেশ কয়েকটি কারন আছে বলে মনে করেন ফাহিম আহমেদ। প্রথমত, নেপালে পাবলিক ট্রান্সপোর্টের বিকল্প খুব কম। যেমন, ঢাকায় বাসিন্দাদের জন্য বাস, মেট্রো, রিকশা, অটোরিকশা ইত্যাদি রয়েছে। কিন্তু কাঠমান্ডুতে এই ধরনের সাশ্রয়ী পরিবহন ব্যবস্থা বেশ সীমিত।

দ্বিতীয়ত, নেপালে নারীদের মধ্যে অনেকেই পাঠাও ব্যবহার করেন। ফাহিম মনে করেন এটিকে প্রায়শই কম মূল্যায়ন করা হয়। নারীরা কাঠমান্ডুতে পাঠাও রাইডের প্রায় এক তৃতীয়াংশ ব্যবহারকারী।

তৃতীয়ত, কাঠমান্ডুতে বহু পর্যটক ভ্রমণ করে। যা সেবাটিকে জনপ্রিয় করে তুলেছে।

ফাহিম বলেন, “সামগ্রিকভাবে আমরা মার্কেটের প্রসার দেখে বেশ সন্তুষ্ট; যা কি-না ঢাকার বেশ কাছাকাছি। যদিও আয়তন ও জনসংখ্যার দিক থেকে কাঠমান্ডু বেশ পিছিয়ে।”

বাংলাদেশে পাঠাওয়ের এক কোটি রেজিস্টারকৃত ব্যবহারকারী ও তিন লাখ রাইডার রয়েছে। অন্যদিকে নেপালে রেজিস্টারকৃত ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪০ লাখ ও রাইডারের সংখ্যা দেড় লাখ।

কিন্তু সিইও ফাহিম বলেন, “আপনি যদি ঢাকা (২ কোটি ২০ লাখ) ও কাঠমান্ডুর (১৪ লাখ) জনসংখ্যার ঘনত্ব পর্যালোচনা করেন তবে প্রবৃদ্ধির বিষয়টি স্পষ্ট হবে। এমনকি নেপালের মোট জনসংখ্যাই তিন কোটি।”

পাঠাও নেপালে প্রথমে বাইক রাইডিং সার্ভিসের মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করে। এরপর গাড়ি থেকে শুরু করে ফুড ডেলিভারি ব্যবসাতেও যুক্ত হয়েছে। যা কি-না এখন কোম্পানিটির ব্যবসার অন্যতম ক্ষেত্র। দেশটিতে কোম্পানিটির হাজার হাজার ‘পাঠাও হিরো’ রয়েছে যারা কি-না বাইসাইকেলে করে খাবার ডেলিভারি করে থাকেন।

পাহাড়ি প্রকৃত কারনে নেপালে পাঠাও প্রাথমিকভাবে বাইকে খাবার ডেলিভারি শুরু করেছিল। কেননা এটিতে সাইকেল চালানো কঠিন হতে পারে। কিন্তু খাবার ডেলিভারি সার্ভিসের স্থায়িত্ব নির্ভর করে পরিবহনের ওপর কম ব্যয়ের ওপর। সেক্ষেত্রে সাইকেলই সবচেয়ে বেশি উপযোগী।

বর্তমানে পাঠাও-এর খাবার ডেলিভারির প্রায় শতভাগ সাইকেলের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। এক্ষেত্রে সেবার মান ও ডেলিভারির সময় ঠিক রেখে কোম্পানিটি অপারেটিং খরচ কমিয়ে এনেছে।

তবে নেপালে ব্যবসা পরিচালনা করতে গিয়ে পাঠাওকে নানা চ্যালেঞ্জেরও মুখোমুখি হতে হয়েছে। ইনড্রাইভ বাজারে প্রবেশ করায় একদিকে বেড়েছে প্রতিদ্বন্দ্বিতা। অন্যদিকে তাদের প্রতিনিয়ত ম্যাপের উন্নতিতে কাজ করতে হচ্ছে।

তবে সিইও ফাহিম জানান, ম্যাপের সমস্যাটি তাদের ব্যবসায় বড় কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। কেননা সেখানকার নিয়মিত ব্যবহারকারীরা ও রাইডাররা রাস্তাঘাট চেনেন, কেননা কাঠমান্ডু একটি ছোট শহর। তাই এটির ফলে সাধারণত খুব একটা সমস্যা হয় না। কিন্তু অ্যাড্রেস সনাক্ত করার বিষয়টি আবার ভিন্ন, সেক্ষেত্রে ম্যাপের মান উন্নতি দরকার।”

ই-কমার্সের দুনিয়ায় নেপাল এখনো বেশ শুরুর পর্যায়ে রয়েছে। অনেকটা বাংলাদেশের মতো। কিন্তু পাঠাও এক্ষেত্রে নিজেদের ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেও বেশ বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে।

সিইও ফাহিম বলেন, “আমরা প্রথমে কাঠমান্ডুতে আমাদের গ্রাহকদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলেছি। তারপর ছোট শহরগুলিতে সাথে যোগাযোগ করেছি। এখন আমরা আমাদের অবকাঠামো ও ব্র্যান্ড ভ্যালুর সাথে সেখানে আমাদের উপস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে অন্যান্য সার্ভিস নিয়ে আসছি। যে সম্পর্কে আমাদের ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে দক্ষতা রয়েছে।”

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com