১। অস্ট্রিয়ার গোড়াপত্তন ঘটে ৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে। ১২৭৬ সালে হাব্সবুর্গ রাজবংশের রাজা প্রথম রুডলফ দেশটির সিংহাসনে বসেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটলে ১৯১৯ সালে অস্ট্রিয়া প্রজাতন্ত্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায়। এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে হিটলারের নাৎসি বাহিনী অস্ট্রিয়া অধিকার করে নেয়। তখন দেশটিতে বসবাসকারী ইহুদীদের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালানো হয়। নির্বিচারে তাদের হত্যা করা হয়। ১৯৪৫ সালে জার্মানির পরাজয়ের পর মিত্রশক্তি দেশটিকে চারভাগে বিভক্ত করে। এরপর নানা চড়াই-উৎরাইয়ের পর ১৯৫৫ সালের ২৫ মে অস্ট্রিয়া পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করে।
২। ৮৩ হাজার ৮৭৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশটিতে প্রায় ৮৯ লাখ মানুষের বসবাস। আয়তনের দিক দিয়ে এটি বিশ্বের ১১৩ তম দেশ।
৩। অস্ট্রিয়াতে মূলত জার্মান ভাষার একটি পরিবর্তিত রূপ ব্যবহৃত হয়। এর নাম অস্ট্রীয় জার্মান। এটিই দেশটির সরকারী ভাষা।
৪। দেশটিতে প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসের মধ্যে রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টধর্ম প্রধান। এদেশের প্রায় ৭৪ শতাংশ মানুষ এই ধর্মে বিশ্বাসী। তবে অস্ট্রিয়াতে মুসলিম ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, বর্তমানে এরা জনসংখ্যার ৪.২ শতাংশ।
৫। ভিয়েনা অস্ট্রিয়ার রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর ও বসবাসের জন্য সেরা শহর হিসেবে ভিয়েনাকে বিবেচিত করা হয়। এছাড়াও এ শহর দেশটির অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রাণকেন্দ্র। শহরের সর্বত্র রাজকীয় উচ্ছ্বাসে মোড়া। সঙ্গীতের শহর, স্থাপত্যশৈলীর শহর এই ভিয়েনা। শহরের মধ্যে বয়ে চলেছে দুর্নিবার দানিয়ুব নদী। এটি বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট স্পটগুলোর মধ্যে অন্যতম।
ভিয়েনা বিশ্বের অন্যতম কসমোপলিটন শহর। শহরের বিভিন্ন স্থাপনা আধুনিক এবং মধ্যযুগীয় দুই স্থাপত্যেরই এক অপূর্ব মিশেলে তৈরি হয়েছে। ইউরোপের প্রায় সব দেশের স্থাপত্যের এক অপূর্ব নিদর্শন খুঁজে পাওয়া যাবে ভিয়েনায়। এখানকার প্রাসাদ, জাদুঘর, অপেরা হাউস থেকে ক্যাথেড্রাল কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়, লাইব্রেরিসহ প্রশাসনিক অফিসগুলো- সবখানে নান্দনিক স্থাপত্যের এক অনবদ্য নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায়।
৬। দেশটির বৃহত্তর অংশ শীতল বা নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু অঞ্চলে অবস্থিত, যেখানে আর্দ্র পশ্চিমা বাতাসের প্রাধান্য। দেশটিতে শীতকালে গড় তাপমাত্রা থাকে -১০ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং গ্রীষ্মকালে তা বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ২০ ডিগ্রী সেলসিয়াসে।
৭। দেশটির রাজনীতি-র ভিত্তি একটি কেন্দ্রীয় সংসদীয় প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রী প্রজাতন্ত্র ব্যবস্থা, যেখানে চ্যান্সেলর হলেন সরকারপ্রধান। এটি একটি বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা।
৮। অস্ট্রিয়া একটি সংসদীয় গণতন্ত্র। এখানে ৯টি ফেডারেল রাজ্য রয়েছে। এটি ইউরোপের ৬টি রাষ্ট্রের অন্যতম যারা স্থায়ীভাবে নিরপেক্ষতা ঘোষণা করেছে। দেশটি ১৯৫৫ সাল থেকে জাতিসংঘের এবং ১৯৯৫ সাল থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য।
৯। ভ্রমণের ক্ষেত্রে পৃথিবীর সবচেয়ে বন্ধুসুলভ দেশ হিসেবেও স্বীকৃত হয়েছে অস্ট্রিয়া। সারাবিশ্বের ভ্রমণকারীদের পাঠানো ভ্রমণ অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে পৃথিবীর সবচেয়ে ভ্রমণবান্ধব দেশের এই তালিকা তৈরি করেছে বুকিং ডট কম। চোখ জুড়ানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং অসাধারণ সব ঐতিহাসিক স্থাপনার কারণে প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় অস্ট্রিয়া।
১০। হাইকিংয় প্রেমীদের জন্যও এক আদর্শ গন্তব্য এটি৷ দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে গ্রীষ্মে হাইকিংয়ের সময় স্থানীয় খাবারের স্বাদ নেয়া যায়।
১১। লোয়ার অস্ট্রিয়ার ভাইনফিয়ার্টেল ওয়াইন উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত৷ অনেকেই এই অঞ্চলে যান সরাসরি ওয়াইন উৎপাদকদের কাছ থেকে ওয়াইন পানের আশায়৷
১২। এদেশেই বিশ্বের বৃহত্তম বরফের গুহা রয়েছে। প্রায় ৪২ কিলোমিটার লম্বা এই গুহাটি চুনাপাথর এবং বরফ দিয়ে গঠিত। প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ পর্যটক এখানে ঘুরতে আসেন।
১৩। অস্ট্রিয়া হল বিশ্বের সেইসব গুটিকয়েক দেশের মধ্যে একটি যারা পারমাণবিক শক্তির বিকাশ সমর্থন করে না। দেশটিতে কোনও পারমাণবিক শক্তিকেন্দ্র নেই এবং তারা সবসময় পারমাণবিক শক্তির শক্ত বিরোধীতা করে।
১৪। বিশ্বের প্রাচীনতম চিড়িয়াখানাটি এদেশেই অবস্থিত। টিয়ারগার্টেন শনব্রুন নামে এই চিড়িয়াখানাটি সর্বপ্রথম জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছিল সেই ১৭৫২ সালের ৩১ জুলাই তারিখে। সেই থেকে আজ পর্যন্ত এটি দর্শনার্থীদের মন জুগিয়ে আসছে।
১৫। এছাড়াও দেশটির শিক্ষাব্যবস্থা খুবই মানসম্পন্ন। এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সর্বদা বিশ্ব র্যাংকিং এ শীর্ষ সারিতে থাকে। ইউরোপের যে সকল দেশে স্বল্প খরচে পড়াশোনা করা যায় তার মধ্যে অস্ট্রিয়া অন্যতম। এখানকার সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাধারণত শিক্ষার্থীদের কোনো প্রকার টিউশন ফি দিতে হয় না, ক্ষেত্র বিশেষে লাগলেও সেটা খুবই সামান্য। তবে ভর্তির সময় রেজিস্ট্রেশন ও আপ্লিকেশন ফি বাবদ কিছু টাকা দিতে হবে।
কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কিছু কোর্সের ক্ষেত্রে টিউশন ফি দিতে হয়, তবে তা ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম।
১৬। এছাড়া দেশটিতে স্থায়ীভাবে বাস করতে চাইলে নূন্যতম পাঁচ বছর বৈধভাবে একটানা বাস করার প্রমাণপত্র দেখিয়ে পার্মানেন্ট রেসিডেন্সির জন্য আবেদন করতে হবে।
১৭। ১৯৫৫ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে দেশটির অভাবনীয় অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটে। বর্তমানে দেশটি একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র। রপ্তানি ও পর্যটন শিল্প দেশটির আয়ের বড় উৎস।
১৮। অস্ট্রিয়ার সরকারী মুদ্রা ইউরো। ১ ইউরো সমান প্রায় বাংলাদেশী ৯৪ টাকা এবং ৭৮ ভারতীয় রুপি।
১৯। দেশটির মোট জিডিপি প্রায় $৪৭৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং মাথাপিছু আয় প্রায় $৫৩,৭৬৪ মার্কিন ডলার।
২০। অস্ট্রিয়ার ডায়ালিং কোড হচ্ছে +৪৩।