বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৫ অপরাহ্ন

হাওড়ে হারুনের শত কোটি টাকার বিলাসবহুল ‘প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট’

  • আপডেট সময় শনিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৪

চারদিকে থৈ থৈ পানি। প্রবল বাতাসে দোল খাওয়া ছোটো ছোটো গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে কিছুটা দূরে চোখে পড়বে সারি সারি মনোরম কটেজ। এটি দেশের আলোচিত সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশিদের বিলাসবহুল প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট।

কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার দুর্গম ঘাগড়া ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রাম। ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার ও সাবেক ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ হোসেনপুরে নিজের বাড়ির পাশে শত কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তুলেছেন বিলাসবহুল ‘প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট’।

দুর্গম হাওড়ের হোসেনপুর গ্রামে ৩০ একর জমি নিয়ে গড়ে তোলা রিসোর্টে তিন তারকা মানের ২০টি দোতলা কটেজ। এর ৪০টি কক্ষই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। বিশাল জলাধারের চারপাশ ঘিরে পাকা সড়ক। এক পাশে কটেজ, সুইমিং পুল, ওয়াচ টাওয়ার, গেমজুন ও পার্টি সেন্টার। অপর পাশে রেস্টুরেন্ট। এখানে এক রাতের ভাড়া নূন্যতম ৭ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২৮ হাজার টাকা। রিসোর্টের ভেতরে বিশাল পুকুরের মাঝখানে তৈরি করা হয়েছে হেলিপ্যাড। হেলিকপ্টারে করে ঢাকা থেকে যখন তখন নিজের রিপোর্টে চলে আসতেন হারুন অর রশিদ। বাইরের লোকজনের জন্য ছিল না ভেতরে প্রবেশের অনুমতি।

মন্ত্রী-এমপি, সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে চলচ্চিত্র তারকারা যখন তখন ছুটে আসতেন হারুনের রিসোর্টে। রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন সময়ে রিসোর্টটি পরিদর্শন করেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদও। মূলত তার নামেই এ রিপোর্টের নামকরণ করা হয়েছে ‘প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট’।
 
জানা গেছে, ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর রিসোর্টটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ছেলে কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক প্রধান অতিথি হিসেবে এটি উদ্বোধন করেন।

এলাকাবাসী জানায়, পুলিশের চাকরির সুবাদে প্রভাব বিস্তার করে মানুষের জমি দখল করে রিসোর্ট গড়ে তোলেন হারুন। এলাকায় তার মা ও ভাইসহ আত্মীয়-স্বজনের নামেই কিনেছেন প্রায় একশ একর জমি। এছাড়া এলাকার অসংখ্য মানুষের শতাধিক একর জমি দখল করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট রিসোর্টে গিয়ে এটি বন্ধ দেখা যায়। রিসোর্টের সুপারভাইজার জয় আহমেদ পিন্টু জানান, হারুন অর রশিদের ভাই ডা. শাহরিয়ার কবির প্রতিষ্ঠানটির এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি এলাকা ছেড়ে চলে যান।

কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামের বাসিন্দা সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত পুলিশ কর্মকর্তা মো. হারুন অর রশিদ একই উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামের কৃষক মৃত আবুল হাশেমের ছেলে।

অভিযোগ আছে, তার দরিদ্র বাবা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি। এমনকি আবুল হাশেমের চাচা ছিলেন রাজাকার।

১৯৯৩-৯৪ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ। পরে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পুলিশের চাকরি পান তিনি। সারদায় ট্রেনিংয়ের সময় শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে চাকরিচ্যুত হন। পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে হারুন পুলিশের চাকরি ফিরে পান।

আলোচিত-সমালোচিত সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মো. হারুন অর রশিদের মালিকানায় দেশে -বিদেশে রয়েছে শত শত কোটি টাকার অর্থ-সম্পদ।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com