বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২৮ অপরাহ্ন

ডলারে ঘুষ দিয়ে পালান বেনজীর

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৪

গণমাধ্যমে দুর্নীতির তথ্য প্রকাশের পর পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ সপরিবারে সিঙ্গাপুরে পালিয়ে যান। গত ৪ মে তাকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছেন ছাত্র-জনতা গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী এক মন্ত্রী ও দলটির নেতা। এর জন্য বেনজীরকে খরচ করতে হয়েছে সোয়া লাখ ডলার। এ ছাড়া পুলিশে উচ্চপদস্থ অন্তত ১০ কর্মকর্তাও বেনজীরকে সহায়তা করেছেন। তাদের সহায়তায় সিঙ্গাপুরে বসেই বাংলাদেশের দূতাবাস থেকেই তুরস্কের ভিসা করে ফেলেন। তিনি এখন সেখানেই আছেন। পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ যা করেছেন, তা ছিল কল্পনাতীত। তার নানা অপকর্মে পুলিশের অন্তত ১০ শীর্ষ কর্তা সহায়তা করেছেন। তারা অতিরিক্ত আইজিপি, উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি), অতিরিক্ত ডিআইজি, পুলিশ সুপার (এসপি), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার কর্মকর্তা। আইজিপি থাকাকালে তারা নানাভাবে বেনজীর আহমেদের কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছিলেন। দেশ ছেড়ে পালানোর সময় তিনি আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের অবহিত করেন। ডিএমপি কমিশনার, র‌্যাব মহাপরিচালক ও আইজপি

থাকাকালে সরকারকে ক্ষমতায় বসাতে নানাভাবে সহায়তা করায় শীর্ষমহল তার ওপর খুশি ছিল। যার কারণে তাকে দেশের বাইরে চলে যাওযার অনুমতি দেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, বেনজীর আহমেদকে পালাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বুঝিয়ে রাজি করান প্রভাবশালী সাবেক এক মন্ত্রী। এর জন্য ওই মন্ত্রীকে অন্তত সোয়া লাখ ডলার দিতে হয়েছে। সাবেক ওই মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা এখন পলাতক।

পুলিশ সদর দপ্তরের এ কর্মকর্তা বলেন, বেনজীর আহমেদ সিঙ্গাপুর যাওয়ার পর ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটি বিভাগের দুজন অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) পদমর্যাদার দুই কর্মকর্তাকে ফোন দেন। তাদের মাধ্যমে তুরস্কের ভিসা পেতে সহায়তা চান। ওই দুই এডিসি পুলিশ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বললে তারাও বেনজীরকে সহায়তা করার নির্দেশ দেন। তুরস্কের ভিসা নিতে হলে সশরীরে হাজির থাকতে হয় ভিসাপ্রার্থীকে। কিন্তু বেনজীর আহমেদ উপস্থিত না থাকায় সমস্যা হয়। পুলিশ কর্মকর্তারা তুরস্কের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা বলেন। হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করে ভিডিওকলে দূতাবাসের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন বেনজীর। পরে তাকে তুরস্কে যাওয়ার ভিসা দেওয়া হয়। অনলাইনে ভিসার কপি পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, ‘ওই দুজন এডিসি দীর্ঘদিন পুলিশের গুলশান বিভাগে চাকরি করার সুবাদে সব দেশের দূতাবাস ও হাইকমিশনের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ ভালো। তারা ৮-১০টি দূতাবাস ও হাইকমিশন থেকে প্রতি মাসে ভিসা বের করে অর্থ কামান বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বেনজীর স্যার বিষয়টি অবহিত থাকায় ওই দুই কর্মকর্তাকে কাজে লাগান।’

তবে বেনজীর সিঙ্গাপুরে যাওয়ার আগে তার স্ত্রী জীসান মির্জা ও তিন মেয়েকে পাঠিয়ে দেন সেখানে। যেদিন তিনি দেশ ছাড়েন, ওইদিন শাহজালালের ইমিগ্রেশন পার হওয়ার সময় কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা সঙ্গে ছিলেন। বিমানে ওঠার আগমুহূর্ত পর্যন্ত তারা বেনজীরের সঙ্গেই ছিলেন।

গত মার্চে একটি জাতীয় দৈনিকে বেনজীরের দুর্নীতির নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর ২৩ মে আদালত তার ও পরিবারের সদস্যদের সম্পদ জব্দের নির্দেশ দেয়। এরপর দুর্নীতি দমন কমিশন বেনজীর ও তার স্ত্রী-সন্তানদের তলব করলেও তারা হাজির হননি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দুর্নীতি দমন কমিশনের তালিকার বাইরেও সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের আরও সম্পদ ও ব্যাংক হিসাবের সন্ধান মিলেছে। তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনেরও দুর্নীতির তথ্য মিলছে। সাবেক পুলিশপ্রধানের পাহাড়েও সম্পদের সন্ধান মিলছে। অথচ দায়িত্বে থাকাকালে বেনজীর আহমেদ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন।

সূত্র জানায়, গোপালগঞ্জ ও তার শ্বশুরবাড়ির দুই ব্যক্তি তুরস্কে আছেন। তারা একসময় পুলিশ ও র‌্যাব সদর দপ্তরে ঠিকাদারি কাজ করতেন। তারা বেনজীর আহমেদকে দিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ কামিয়েছেন।

অভিযোগ ওঠার পর বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী, তিন মেয়ে ও এক স্বজনের নামে থাকা ৩৪৫ বিঘা (১১৪ একর) জমি জব্দ করা হয়। বেনজীর ও তার স্ত্রী-সন্তানদের নামে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকে থাকা ৩৩টি ব্যাংক হিসাব (অ্যাকাউন্ট) অবরুদ্ধ করার আদেশ দেওয়া হয়। তাছাড়া জীশান মীর্জার নামে থাকা মাদারীপুরে ২৭৬ বিঘা (৯১ একর) জমি এবং বেনজীর পরিবারের নামে থাকা গুলশানের চারটি ফ্ল্যাটও জব্দের আদেশ দেয় আদালত। বেনজীর পরিবারের নামে থাকা ১৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও তিনটি বিও হিসাব (শেয়ার ব্যবসা করার বেনিফিশিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট) এবং ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র অবরুদ্ধ করার আদেশ দেওয়া হয়। সাভারে তাদের কিছু জমিও পড়েছে একই আদেশের মধ্যে। বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে অন্তত দেড়শ একরের জায়গার সন্ধান পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।

বান্দরবান সদর উপজেলার ৩১৪ নম্বর সুয়ালক মৌজায় ৬১৪ নম্বর দাগের ৩ নম্বর সিটে ২৫ একর লিজের জমি কিনে ফেলেন বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জীশান মির্জা ও মেয়ে ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীর। সেখানে মাছের প্রজেক্ট, গরুর খামার, ফলের বাগান ও রিসোর্টের কয়েকটি কক্ষ আছে। ওই জায়গার বর্তমান বাজার মূল্য ৫ কোটি টাকারও বেশি। এসব সম্পত্তি দেখাশোনা করতেন বান্দরবান জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মং ওয়াইচিং মারমা ও কয়েকজন পুলিশ সদস্য। বান্দরবান পৌরসভার মধ্যমপাড়া এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে শাহজাহানের কাছ থেকে বান্দরবান সদর উপজেলার ৩১৪ নম্বর সুয়ালক মৌজায় ৬১৪ নম্বর দাগের ৩ নম্বর সিটে ২৫ একর লিজের জমি কেনেন বেনজীর আহমেদ। তাছাড়া লামা উপজেলার সরই ডলুছড়ি মৌজার টংগো ঝিরিতে রয়েছে আরও অর্ধশত একরেরও বেশি জায়গা। সুয়ালকের মাঝেরপাড়ার চা অফিস থেকে পৌনে ১ কিলোমিটার দূরে ২৫ একর জমি জুড়ে রয়েছে ‘নেচার হিল এগ্রো’ নামে গরু-মৎস্য খামার, সেগুন গাছসহ বিভিন্ন ফল ও ফুলের বাগান, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত দোতলা পাকা দালান।

২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইজিপি ছিলেন বেনজীর আহমেদ। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ও র‌্যাবের মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে বেনজীরসহ র‌্যাবের সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয়। ওই সময় আইজিপির দায়িত্বে ছিলেন তিনি। সূত্র: দেশ রূপান্তর

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com