বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২৫ অপরাহ্ন

আফিম থেকে জাফরান বদলে যাচ্ছে আফগানিস্তানের অর্থনীতি

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট, ২০২৪
আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার তিন বছর পূর্ণ হলো। ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট যখন তারা ক্ষমতা গ্রহণ করে তখন দেশটি ছিল বৈদেশিক মুদ্রাশূন্য দুর্ভিক্ষের একটি দেশ। অর্থনীতি ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত। ফলে এই দেশটির ঘুরে দাঁড়ানো অনেক কঠিন ছিল।

কিন্তু তালেবান সরকার তাদের আইন-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যও পুনরুজ্জীবিত করতে পেরেছে।এই সরকারের সবচেয়ে বড় সাফল্য কৃষিব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন। আফগানিস্তান একসময় বিশ্বে আফিম উৎপাদনে শীর্ষ অবস্থানে ছিল। তালেবান ক্ষমতায় আসার পর আফিম উৎপাদনের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

ফলে আফিমের ফলন প্রায় ৯৫ শতাংশ কমে গেছে বলে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ সংক্রান্ত দপ্তর এক প্রতিবেদনে বলছে, ২০২৩ সালে সারা দেশে আফিম চাষ দুই লাখ ৩৩ হাজার হেক্টর থেকে কমে মাত্র ১০ হাজার ৮০০ হেক্টরেরও কম হয়েছে। আফিমের উৎপাদন আগের বছরের চেয়ে ৯৫ শতাংশ কমে ৩৩৩ টনে দাঁড়িয়েছে। আফিমের বদলে তারা জাফরান আবাদ বাড়াচ্ছে।
মূলত তালেবানের নীতিগত পরিবর্তনের সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ছে দেশটির অর্থনীতিতে।ফলে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের অর্থনীতির চাকা দ্রুত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বড় অবদান রাখছে কৃষি। ডালিম বা আনার চাষ আফগানিস্তানের অন্যতম কৃষি। দেশটিতে প্রচুর পরিমাণ ডালিম চাষ করা হয়।

এই ফল উৎপাদন ও রপ্তানিতে শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম আফগানিস্তান। তবে এত দিন সাধারণ ফল হিসেবে ডালিম রপ্তানি হলেও এখন সেটি পানীয় আকারে রপ্তানি করা হচ্ছে। পামির কোলার শাফা নামের আফগানিস্তানের পানীয় বিশ্বজুড়ে তোলপাড় ফেলেছে। এই পানীয়কে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিক্রীত কোকা-কোলার বিকল্প এবং স্বাস্থ্যকর পানীয় হিসেবে ভাবা হচ্ছে।পামির কোলা কম্পানির বিক্রয় ব্যবস্থাপক বলেছেন, এই সংস্থা ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে এই পানীয় রপ্তানি করেছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোতেও রপ্তানি শুরু হয়েছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, অভ্যন্তরীণ পণ্য রপ্তানি সাম্প্রসারণ আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানে সহায়ক হবে। অর্থনীতিবিদ আবদুল নাসির রেশতিয়া বলেন, ‘এ রপ্তানির মধ্য দিয়ে দেশ আরো বিনিয়োগকে উৎসাহিত করবে এবং রপ্তানি বাড়লে ও সরকার আরো সুযোগ-সুবিধা দিলে অর্থায়ন বাড়বে।’

দেশটির অর্থনীতি নিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আফগানিস্তানে তালেবানের ক্ষমতা নেওয়ার তিন বছর হলো। এ সময়ে নিরাপত্তা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও অর্থনীতি এখনো গতিশীল হয়নি। তবে তালেবানের যে একেবারেই কোনো সফলতা নেই, তা নয়। ২০২১ সালে তারা ক্ষমতা নেওয়ার পর দেশটিতে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে, যদিও কোনো দেশ এখন পর্যন্ত তাদের স্বীকৃতি দেয়নি। দেশটির মুদ্রার বিনিময় মূল্য বেড়েছে, দুর্নীতি কমেছে আর কর সংগ্রহ বেড়েছে।

আফগানিস্তানে প্রচুর খনিজ সম্পদ আছে; সেই সঙ্গে আছে কৃষি খাতে উন্নয়নের সম্ভাবনা। তালেবান সেগুলো কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। জাফরান চাষেও সফলতা পাচ্ছে দেশটি। আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলীয় হেরাত প্রদেশে ৫৪ বছর বয়সী আজিজুল্লাহ রেহমাতির জাফরানের ব্যবসা। তাঁর ব্যবসা দিন দিন বড় হচ্ছে। আশা করছেন, তাঁর রেড গোল্ড স্যাফরন কম্পানি এ বছর দ্বিগুণ উৎপাদন করবে।

২০২১ সাল পর্যন্ত রেহমাতি এই দামি মসলা সশস্ত্র বাহিনীর নিরাপত্তা প্রহরায় কারখানা থেকে বিমানবন্দরে আনা-নেওয়া করতেন। কিন্তু এখন আর তার প্রয়োজন হয় না। তিনি ২৭টি দেশে জাফরান রপ্তানি করেন। তিনি বলেন, এখন কোনো সমস্যা নেই।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com