রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:৪৭ অপরাহ্ন

১৫ বছরে ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে ৯২ হাজার কোটি টাকা লোপাট

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৪

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসনের ক্ষেত্রে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখান থেকে তদবির-বাণিজ্য হয়; ব্যাংকের প্রায় সব অনিয়ম এখান থেকে পরিচালিত হয়। ফলে এ বিভাগ রাখার কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। আর বিগত ১৫ বছরে ব্যাংকের ২৪টি বড় জালিয়াতির মাধ্যমে অন্তত ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে।’

গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে ‘ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে করণীয়’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। ব্রিফিংয়ে সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান ও গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বক্তব্য দেন।

ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রশাসনিক দায়িত্ব যারা পালন করেছেন, অর্থাৎ গত ১৫ বছরে গভর্নর যারা ছিলেন, তারা যেসব নীতিমালা গ্রহণ করেছেন, সেগুলো ব্যাংকিং নর্মসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তারা বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে অনেক নিয়মে ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন। বিশেষ গোষ্ঠীকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে। এর প্রতিটি ঘটনা তদন্ত হওয়া উচিত। এর সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন, তাদের শাস্তির আওতায় আনা প্রয়োজন। ব্যাংক খাতে কিছু অলিগার্ক শ্রেণী তৈরি হয়েছে।’

ব্রিফিংয়ে সিপিডির পক্ষ থেকে বলা হয়, এস আলম গ্রুপের হাতেই দেশের সাতটি ব্যাংক। এস আলম গ্রুপ একাই ইসলামী ব্যাংক থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে। একসময় ইসলামী ব্যাংক ভালো প্রতিষ্ঠান ছিল। দখলের পর সেটাও মুমূর্ষু হয়ে গেছে। এছাড়া ঋণসীমার নীতি লঙ্ঘন করে এননটেক্স গ্রুপকে ১০ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে জনতা ব্যাংক। এভাবে একক গোষ্ঠী যদি এত বেশি ঋণ পায়, অন্য গ্রাহকরা কী পাবে!

বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা নিয়ে ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘এমন নয় যে তাদের স্বাধীনতা নেই; কিন্তু তারা এটা ব্যবহার করছে না। বাংলাদেশ ব্যাংক বরং বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থের কথা চিন্তা করে নীতিমালা করেছে। দুই বছর ধরে দেশের মানুষ উচ্চ মূল্যস্ফীতির কবলে। দরকার ছিল সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ নেয়া। কিন্তু বিশেষ ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর যেন সুবিধা হয়, সেজন্য সুদহার বাড়ায়নি বাংলাদেশ ব্যাংক।’

সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলো ক্লিনিক্যালি ডেড হয়ে গেছে। এদের চলনশক্তি নেই। জনগণের করের টাকায় এদের বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। এতে শুধু অর্থের অপচয় হচ্ছে; এগুলো বন্ধ করে দেয়া উচিত। আবার কিছু কিছু ব্যাংক মরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। মরে যাওয়ার উপক্রম হওয়া ব্যাংকগুলো চালানোর ইচ্ছা থাকলে পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করতে হবে। এছাড়া কোনো ধরনের বিবেচনা ছাড়া লাইসেন্স দেয়ার সংস্কৃতিও বন্ধ করতে হবে।’ আলাদা কমিশন গঠনের মাধ্যমে ব্যাংকিং ব্যবস্থা, শেয়ারবাজার ও বীমা খাত সংস্কারের দাবি জানান তিনি।

খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলছে জানিয়ে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘২০০৯ সালে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা, যা চলতি বছরের মার্চে দাঁড়ায় ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির বিষয়টির এখনো তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ করার জন্য সিআইডি ৭৯ বার সময় নিয়েছে।’

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সিপিডির ভূমিকা জানতে চাইলে অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ছাত্রদের আন্দোলনে আমাদের নৈতিক সমর্থন ছিল। ছাত্রদের মুক্তির মিছিলে আমরা ছিলাম। তবে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আমাদের ভূমিকা ছিল না। যারা আত্মত্যাগ করেছে, তাদের কাছে আমাদের ভূমিকা কিছুই না।’

ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘ব্যাংক খাতের চ্যালেঞ্জগুলো অন্যান্য আর্থিক খাতেও প্রযোজ্য। দেশের পুঁজিবাজার অসুস্থ ও বিকলাঙ্গ হয়ে পড়েছে। একইভাবে বীমা খাতও অগ্রহণযোগ্য অবস্থায় চলে গেছে। একক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক কোনো আর্থিক খাত তৈরি হওয়া উচিত নয়।’

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com