শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৩৪ পূর্বাহ্ন

কাশ্মির ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে যেসব জায়গায় না গেলে

  • আপডেট সময় বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০২৪

কাশ্মিরের পরিস্থিতি এখন শান্ত। ফলে পর্যটনশিল্পের পালেও লেগেছে হাওয়া। ভূস্বর্গ কাশ্মির ভ্রমণের আগ্রহ বাড়ছে বাংলাদেশিদের। সুবিশাল পাহাড়, চোখজুড়ানো সবুজ কিংবা নয়নাভিরাম লেকের শান্ত শহর ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মির। সময় করে ঘুরে আসতে পারেন আপনিও। তবে কাশ্মির ভ্রমণে যাওয়ার আগে বেশ কিছু প্রশ্ন উঁকি দেয় মনে। যেমন কখন কাশ্মির গেলে কী দেখতে পারবেন, কেমন খরচ হবে, কোথায় থাকবেন, কী কী দেখবেন ইত্যাদি। কিছুদিন আগেই কাশ্মির ঘুরে এসে কয়েক পর্বে জানাচ্ছি এই তথ্যগুলো।

শ্রীনগর এসে একদিন বিশ্রাম নিয়ে আমরা বের হই ঘোরাঘুরির উদ্দেশ্যে। এখানে খাওয়া-দাওয়া নিয়ে বেশ একটু বিড়ম্বনা হয়েছিল। কারণ কাশ্মিরি খাবারে তেল ও মসলার পরিমাণ একটু বেশি থাকে। তবে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কাছে এই বিড়ম্বনাকে খুব সামান্যই মনে হয়েছে।

দুধপাথরি

দুধপাথরি

সবুজ আর সাদার দুধপাথরি

চোখজুড়ানো সৌন্দর্যের দুধপাথরি উপত্যকা যেতে চাইলে শ্রীনগর থেকে পাড়ি দিতে হবে ৪২ কিলোমিটার পথ। গাড়ি থেকে নেমেই দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ আর বরফে ঢাকা সাদা পাহাড়ে দৃষ্টি আটকে গেল। সারি সারি পাইনগাছ দেখা যাচ্ছে দূরে। দুধপাথরি নামের অর্থ দুধের উপত্যকা। এটি হিমালয় পর্বতমালার পীর পাঞ্জাল রেঞ্জে গামলার মতো এক উপত্যকা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৯ হাজার ফুট উঁচুতে জম্মু ও কাশ্মীরের বুডগাম জেলায় অবস্থিত। এখানে যে পানি প্রবাহিত হয়, তা দূর থেকে দেখলে দুধের মতো সাদা মনে হয়। পানি সারা বছরই হিমশীতল থাকে। ঘোড়ায় চড়ে বিশাল এই উপত্যকা ঘুরে দেখতে পারেন।

টিউলিপ গার্ডেন

টিউলিপ গার্ডেন

বর্ণিল টিউলিপ গার্ডেন

পাহাড়ের কোলঘেঁষে ফুটেছে রঙবেরঙের টিউলিপ। শ্রীনগরের ডাল লেক-লাগোয়া এই টিউলিপ বাগানের নাম ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল টিউলিপ গার্ডেন। এশিয়ার সবচেয়ে বড় টিউলিপ বাগান এটি। তবে এটি দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য এই বাগান খোলে মার্চের শেষের দিকে। প্রতি বছরই মার্চ-এপ্রিলে টিউলিপের মৌসুম শুরু হয়। বাগানে মাত্র তিন থেকে পাঁচ সপ্তাহ টিউলিপ ফুটে থাকে।

 

পেহেলগাম

ছবির মতো পেহেলগাম

ছবির মতো সাজানো গোছানো জায়গা পেহেলগাম। কুলকুল শব্দে পাহাড়ি নদী বয়ে যাচ্ছে এর পাশ দিয়ে। শ্রীনগর থেকে ৯৭ কিলোমিটার দূরে পেহেলগাম পৌঁছানোর রাস্তায় মিলবে জাফরান ক্ষেত ও জাফরান ও ড্রাই ফ্রুটের দোকান। গাড়ি থামিয়ে উপহারের জন্য কিনে নিলাম বেশ কিছু জাফরান। ১ গ্রামের দাম ২৫০ রুপি। রাস্তার দুধারে চোখে পড়বে আপেল বাগান। থাকার জন্য চমৎকার সব হোটেল রয়েছে পেহেলগামে।। নদীর পাশেই রয়েছে অনেক হোটেল। বেতাব ভ্যালি, আরু ভ্যালি, চন্দনওয়ারি এখানকার মূল দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। এছাড়া রয়েছে মিলি সুইজারল্যান্ডখ্যাত বাইসারান। কাশ্মির ভ্যালি ভিউপয়েন্ট, ও পেহেলগাম ভ্যালিও দেখার মতো সুন্দর। পেহেলগামে দিন দুয়েক না থাকলে ঠিক মতো উপভোগ করা যাবে না এর সৌন্দর্য।

গুলমার্গ

গুলমার্গ

বরফে ঢাকা গুলমার্গ

গুলমার্গের বিশেষত্ব হচ্ছে এটি সারা বছরই বরফে ঢাকা থাকে। শ্রীনগর থেকে ৫২ কিলোমিটার দূরে গুলমার্গ। এখানকার মূল আকর্ষণ গ্যান্ডোলা ক্যাবল কার। উঁচু থেকে বরফে ঢাকা পাহাড়ের সৌন্দর্য অসাধারণ। তবে এখানে থাকে লম্বা সিরিয়াল। গিয়েই এই ক্যাবল কারে চড়তে পারবেন না আপনি। টিকিট আগে থেকে না করার জন্য আমরা এখানে উঠতে পারিনি। অন্তত মাসখানেক আগেই নাকি করে ফেলতে হয় টিকিট! আমাদের মতো অসংখ্য পর্যটক ক্যাবল কারে উঠতে না পারার জন্য আফসোস সঙ্গে নিয়ে ফিরছিল গুলমার্গ থেকে। ক্যাবল কার ছাড়াও আফারওয়াত পিক, গলফ কোর্স, সেন্ট ম্যারি চার্চ দেখতে পারবেন এখানে।

সোনমার্গ

সোনমার্গ

ঘোড়ায় মোড়া সোনমার্গ!

শ্রীনগর থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে যেতে হয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সোনমার্গে। সারি সারি ঘোড়া দাঁড়ানো থাকে পর্যটকদের আশায়। ৮৭৫০ ফুট উঁচুতে সোনমার্গের অবস্থান। একদিকে নদী, অন্যদিকে পাইন ফারের বনাঞ্চল। আকাবাঁকা পাহাড়ি পথের দুধারে উঁচু বরফের স্তুপ। ঘোড়ায় চড়ে ঘুরে দকেহতে পারেন সোনমার্গ। এছাড়া গাছের বাকলের স্লেজগাড়িতেও পর্যটকরা বরফের উপর দিয়ে চলাচল করেন।

জাফরানের বিভিন্ন আকারের পাত্র

জাফরানের বিভিন্ন আকারের পাত্র

খরচ

শ্রীনগর থেকে দুধপাথরি যেতে ট্যাক্সি ভাড়া পড়বে ২ হাজার থেকে ২৫০০ রুপি। এই টাকাতেই যাওয়া-আসা দুটোই হয়ে যাবে। শ্রীনগর থেকে সোনমার্গ যেতেও খরচ অনেকটা এই রকমই হবে। তবে সোনমার্গ নেমে আরও একটি ট্যাক্সি নিতে হবে সাইট সিয়িংয়ের জন্য। সেখানে খরচ পড়বে আরও ২৫০০ রুপি। এছাড়া সারাদিনের জন্য ট্যাক্সি নিলে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে হয়ে যাবে। পাহেলগাম যেতে ও আসতে খরচ হবে ৫ হাজার রুপি। তবে প্রাইভেট ট্যাক্সির বদলে শেয়ার ট্যাক্সি বা লোকাল ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করলে খরচ কমে যাবে অনেকটাই।

চমৎকার সব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য চোখে পড়বে কাশ্মিরে

চমৎকার সব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য চোখে পড়বে কাশ্মিরে

টিপস

  • পর্যটকপ্রিয় স্থানগুলোতে প্রচুর দালাল রয়েছে। এদের খপ্পরে পড়লে খরচ বাড়বে অনেক বেশি। কোনও স্পটে নামলেই চারপাশ থেকে এরা নানা প্রলোভন দেখাতে থাকে। কারোর কথা শুনে সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি বা ঘোড়া ঠিক করে ফেলবেন না। দামদর করে তারপর ঠিক করবেন।
  • কোনও কিছু কেনাকাটা করার আগেও দামাদামি করে নেবেন।
  • কাশ্মিরি শাল রয়েছে বিভিন্ন ধরনের। কমদামি থেকে শুরু করে লক্ষাধিক টাকার শালও মিলবে।
  • রাত আটটার পর থেকে দোকান বন্ধ হওয়া শুরু করে। তাই কেনাকাটা থাকলে এর আগেই সেরে ফেলবেন।

নওরিন আক্তার

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com