এসব রুটের বাইরে সরাসরি বৈধ পথে লিবিয়ায় যান ১২ শতাংশ কর্মী। তাঁদের খরচ হয় তিন লাখ ৫৯ হাজার ২৯০ টাকা। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিসর হয়ে অবৈধ পথে লিবিয়ায় যান ৮ শতাংশ কর্মী। তাঁদের খরচ হয় চার লাখ ৭৯ হাজার ২১৬ টাকা।
৪ কারণে লিবিয়ায় কর্মী যান
লিবিয়ায় অবস্থান করা বাংলাদেশি কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে আইওএম জানতে পারে, চারটি কারণে বাংলাদেশ থেকে কর্মীরা বৈধ কিংবা অবৈধ পথে লিবিয়ায় যান। এর মধ্যে রয়েছে নিজ দেশে প্রয়োজনীয় আয় করতে না পারা, দেশে চাকরির সংকট, বিদেশেই কর্মসংস্থানের সন্ধান এবং পরিবারের সদস্যদের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা। এই কর্মীদের বেশির ভাগ লিবিয়া হয়ে ইউরোপ পৌঁছে এসব কারণের সমাধান করতে চান।
চারটি কারণের মধ্যে নিজ দেশে আয়ের সংস্থান করতে না পারা কর্মীর সংখ্যা বেশি। অন্তত ৬১ শতাংশ কর্মীর দেশে আয়ের কোনো পথ ছিল না। ২২ শতাংশ কর্মী দীর্ঘ সময় চাকরির সন্ধান করেও মেলাতে পারেননি। ১২ শতাংশ কর্মী বিদেশেই কর্মসংস্থান নিশ্চিত করবেন বলে লিবিয়ায় গেছেন, আর ২ শতাংশ কর্মী পরিবারের সদস্যদের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করতে লিবিয়ায় গেছেন।
আইওএম যেসব কর্মীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে তাঁদের মধ্যে ৮৭ শতাংশ বলেছেন তাঁরা লিবিয়ার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী কর্মচারী হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন। এঁদের মধ্যে ৬৭ শতাংশের কাজের অনুমোদন রয়েছে। অন্য ২০ শতাংশ অবৈধ পথে লিবিয়ায় গিয়ে কাজ করছেন। লিবিয়ায় বেশির ভাগ বাংলাদেশি কর্মী নির্মাণ শ্রমিক, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও খাবার সরবরাহকারী কর্মী হিসেবে কাজ করেন।
আইওএমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়া এক হাজার ৬৬৮ জন বাংলাদেশিকে লিবিয়ার উপকূলে ফেরত নিয়ে আসা হয়।
এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় লিবিয়ার শ্রমবাজারের পথ পুরোপুরি বন্ধের পরামর্শ দিয়েছেন দীর্ঘদিন আইওএমের সঙ্গে কাজ করা অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘লিবিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোটেও স্থীতিশীল নয়। আর বাংলাদেশ থেকে যারা লিবিয়ায় যায় তাদের মূল উদ্দেশ্য অবৈধ পথে ইউরোপ পাড়ি দেওয়া। লিবিয়ার অস্থিতিশীল পরিবেশে সেখানে বাংলাদেশি কর্মীদের কাজ করার খুব বেশি সুযোগও নেই। সব মিলিয়ে লিবিয়ায় যাওয়ার পথ বন্ধ করে দেওয়া উচিত।’
তিনি বলেন, ‘এই পথ বন্ধ করার ক্ষেত্রে আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াতে হবে। দেশের অভিবাসন বিভাগকে নির্দেশনা দিয়ে বলা যেতে পারে, যারা লিবিয়ার উদ্দেশে বিমানবন্দর যাবে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে এবং লিবিয়ায় যেতে নিরুৎসাহ করতে। এ ছাড়া সরকারের সচেতনতামূলক প্রচারণা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে লিবিয়া পর্যন্ত রুটে যে অপরাধীচক্র গড়ে উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’