ভারতের গোয়া পর্যটনের এক স্বর্গরাজ্য। সারা বিশ্ব থেকে আসা পর্যটকদের পদভারে সারাবছরই মুখরিত থাকে স্থানটি। গোয়া ভ্রমণের সেরা সময় হচ্ছে অক্টোবর থেকে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে সেখানে গেলে আপনার খরচ প্রায় দ্বিগুণ কম হবে।
অনেকটাই নিরিবিলি ও চমৎকার আবহাওয়ার পাশাপাশি সেখানকার কুঁড়েঘরগুলো তখন খোলা থাকে। তাই আপনি যদি প্রথমবার গোয়ায় বেড়াতে যান ও সবগুলো জায়গা ঘুরে দেখতে চান তাহলে মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য মার্চ হবে একেবারে আদর্শ সময়। জেনে নিন প্রথমবার গোয়ায় গেলে কী কী করবেন-
গোয়া সৈকতপ্রেমীর জন্য এক স্বর্গ। সেখানে অনেক জনপ্রিয় সমুদ্রসৈকত আছে। তাই গোয়া গেলে ভাগাতর, বাগা, ক্যালানগুট, ও ক্যানডোলিম হলো গোয়া রাজ্যের বিখ্যাত বিচগুলোতেও ঢুঁ মারতে ভুলবেন না। এসব বিচে সব সময় পর্যটকের ভিড় লেগেই থাকে। বাটারফ্লাই বিচ, কাকোলেম বিচ, মোবার বিচ ও হলান্ট বিচ হলো শান্ত ও নিরিবিলি পরিবেশে সময় কাটানোর জন্য আদর্শ।
সমুদ্রসৈকতের সৌন্দর্য অবলোকন করা শেষ হলে আপনি প্রাণভরে উপভোগ করতে পারেন রোমাঞ্চকর কিছু কর্মকাণ্ড। সেখানে আপনি জেট স্কিয়িং, স্কুবা ডাইভিং, উইন্ডসার্ফিং, কায়াকিং, প্যারাসেইলিংসহ আরও অনেক কিছু করতে পারবেন।
গোয়ার প্রাচীন দুর্গগুলো যেন সেখানকার অতীত ইতিহাস তুলে ধরে। শুধু ইতিহাসপ্রেমীই নন, সাধারণ পর্যটকরাও গোয়ার দুর্গগুলো ঘুরে দেখেন। সেগুলোর দুর্দান্ত স্থাপত্যকর্মের প্রশংসা করতে ভুলেন না কেউই। সেখানে আপনি সাগরের বুকে সূর্য ডুবে যাওয়ার নয়নাভিরাম দৃশ্য প্রাণভরে উপভোগ করতে পারবেন। গোয়ায় ভ্রমণকালে যেসব দুর্গ ঘুরে দেখবেন সেগুলো হলো- চাপোরা ফোর্ট, আগুয়াদা ফোর্ট, রেইস ম্যাগোস ফোর্ট প্রভৃতি।
একজন শপিংপ্রেমীর জন্য গোয়ার ফ্লিয়া মার্কেট রীতিমতো স্বর্গ। জুতা, স্যান্ডেল, কাপড়, পুরোনো অলংকার, মসলা, খেলনাসহ সবকিছুই পাবেন ফ্লিয়া মার্কেটে। বর্ণিল এই মার্কেট শুধু শপিংয়ের জন্যই নয়, খাবার ও পানীয়ের দোকানের জন্যও পরিচিত আর সেগুলোতে খেতে পান করতে পারবেন পূর্ণ তৃপ্তি নিয়ে। তবে অর্ডার দেওয়ার আগে সুনিপুণভাবে দরদাম করতে ভুলবেন না।
গোয়ায় আপনার প্রথম ভ্রমণের সময় পর্তুগিজ ভারতের সাবেক রাজধানী পশ্চিম গোয়ায় যেতে ভুলবেন না। এই অংশে অনেকগুলো ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট আছে যেগুলো নির্মিত হয়েছিলো ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীতে। এখানে আরও আছে অবশ্যই ঘুরে দেখার মতো চার্চ যেমন- ‘বাসিলিকা অব বম জেসাস’। যা এখন বিশ্ব ঐতিহ্যের একটি অংশ।
গোয়াকে যে ‘প্রাচ্যের রোম’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় তার অনেক কারণের মধ্যে এটি একটি। গোয়ায় প্রথম ভ্রমণের সময় থাকার সেরা জায়গা এই বিষয় নির্ভর করবে আপনার বাজেট ও পছন্দের ওপর। তবে আপনি যদি একটি নিরাপদ স্থান খোঁজেন তাহলে উত্তর গোয়ার ক্যানডোলিম হতে পারে আপনার সেরা পছন্দগুলোর একটি।
বিশাল সমুদ্রসৈকতের পাশাপাশি আছে বর্ণিল কিছু কটেজ যেগুলোতে আপনি এক কিংবা দু’দিন কাটাতে পারেন। আর রেস্টুরেন্ট, বার ও দোকানের কোনো অভাবই নেই সেখানে। ফেরার সময় বেশ কিছু স্মৃতি যোগাড় করতে পারেন সেখান থেকে।
মসলার বাগানের জন্য সুখ্যাতি আছে গোয়ার। কার্ডামম, ক্লোভ, সিনামন প্রভৃতি ছাড়া আরও মসলা উৎপন্ন হয় সেখানে। মজার বিষয় হলো, এসব মসলা বাগান কিছু কিছু পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত আর এর ফলে তারা এই অঞ্চলে উৎপন্ন হওয়া ভেষজ, উদ্ভিদ প্রজাতি ও ফলমূল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারেন।
সফরের শেষদিকে আপনি নিজেকে পরিতৃপ্ত করার সুযোগ নিতে পারেন গোয়ার ঐতিহ্যবাহী কায়দার বুফে লাঞ্চ দিয়ে। এ স্থানটির সুপরিচিত কিছু মসলা বাগান হলো সাভই স্পাইস প্ল্যানটেশন, পাস্কোয়াল স্পাইস ভিলেজ, সাহাকারি স্পাইস ফার্মস প্রভৃতি।
গোয়ার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখার সেরা মাধ্যম হচ্ছে একটি বাইক অথবা স্কুটার। এটি শুধু আপনার অর্থ সাশ্রয়ই করবে না, বরং নিজের মতো করে ঘুরে বেড়ানোরও সুযোগ পাবেন। গোয়ার রাস্তাগুলো নিরাপদ ও সুবিন্যস্ত। সেখানে একটি বাইক ভাড়া করা খুব সহজ, তবে তা নির্ভর করে মৌসুমের ওপর। আবার ঠিক কতক্ষণ বাইকে ভ্রমণ করবেন তার উপর নির্ভর করে ভাড়াও বাড়বে।
গোয়ায় বাহারি খাবারের স্বাদ উপভোগ করতে পারবেন। সেখানে রসনাতৃপ্তির জন্য আপনি পাবেন আরব, পর্তুগিজ, ফরাসি, ব্রাজিলিয়ান, আফ্রিকান, চাইনিজ, কংকান ও মালাবার স্বাদের দারুণ এক মিশ্রণ। গোয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় আইটেমগুলোর মধ্যে আছে পর্ক ভিন্দালু, গোয়ার ফিস কারি ও বেবিনকা।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া