ফ্রান্সে রাজনৈতিক আশ্রয় লাভের জন্য একজন আবেদনকারীকে সর্বপ্রথমে “OFPRA” (Office Français de Protection des Réfugiés et Apatrides) তে ইন্টারভিউ দিতে হয়। OFPRA কর্তৃপক্ষ আবেদনকারীর লিখিত আবেদনের উপর কিছু প্রশ্ন করেন। উনার সমস্যার বিষয়গুলো বিশ্বাসযোগ্যভাবে উপস্থাপন করাই মুলত এ ইন্টারভিউ-এর মুল।
আজ আমরা জানার চেষ্টা করবো কিভাবে OFPRA এর ইন্টারভিউ ভালভাবে দেয়া যায়। এর প্রস্তুতি নিয়ে আমরা আলোচনা করবো। OFPRA এর ইন্টারভিউ কয়েকটি ধাপে নেয়া হয়ে থাকে। প্রথমে আবেদনকারীর পুর্ন পরিচয় জানার জন্য প্রশ্ন করা হয়। এসময় আবেদনকারীর নাম, ঠিকানা প্রভৃতি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়। এরপর প্রশ্ন করা হবে তার দেশ সম্পর্কে।
▪︎আবেদনকারীর পরিবার সম্পর্কে প্রশ্ন করা হতে পারে।▪︎ বিবাহিত না অবিবাহিত, ▪︎সন্তান কতোটি আছে, ▪︎ভাই বোনের সংখ্যা, ▪︎আবেদনকারীর পেশা এবং বয়স প্রভৃতি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে। সব প্রশ্নের উত্তর বিস্তারিতভাবে বলার চেষ্টা করা ভালো।
▪︎এ পর্যায়ে প্রশ্ন করা হয় সাধারনত: আবেদনকারীর ধর্ম, শিক্ষাগত যোগ্যতা, ফ্রান্সে প্রবেশের তারিখ, কিভাবে প্রবেশ করেছে (বৈধ না অবৈধ পথে)।
দ্বিতীয় ধাপে প্রশ্ন করা হয় আবেদনকারীর সমস্যার বিষয়ে যেটা উনি লিখিতভাবে উপস্থাপন করেছেন। নিজের আবেদনটি ভালভাবে পড়ে রাখা ভাল। কারন প্রশ্নগুলো করা হয় আবেদনকারীর সমস্যার উপর।
এ পর্যায়ে প্রশ্ন করা হয় সাধারনত: যেসব বিষয়ে তা হলো :-
▪︎ কোন কারনে তিনি দেশত্যাগ করেছেন, ▪︎কেন দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছেন,▪︎ এসব ক্ষেত্রে সাধারন উত্তর দেয়া মোটেই ঠিক নয়। আবেদনকারীকে বোঝাতে হবে তিনি বাধ্য হয়েছেন দেশত্যাগের জন্য। এটা প্রমাণ করতে হবে উনার সমস্যাটি ভালভাবে উপস্থাপনের মাধ্যমে।
▪︎দেশত্যাগের কারনগুলোর মধ্যে রয়েছে, মৃত্যুর ভয়, চাঁদাবাজি, প্রতিপক্ষের দ্বারা আক্রমনের সম্ভাবনা, নির্যাতন, ধর্ষনের শিকার, বাড়ী থেকে বের করে দেয়া, বাড়ী ভাংচুর ও দখল, কালোবাজারির প্রভাব, ব্ল্যাকমেল করা প্রভৃতি।
আবেদনকারীকে এগুলো খুব বিশ্বাসযোগ্যভাবে উপস্থাপন করতে হবে। যেমন কে আক্রমন করেছিলো, কিভাবে করেছিলো, সে সময় কারা ছিলো, আপনি কি করলেন, কোথায় গেলেন, কোন মানবাধিকার সংস্থার কাছে গিয়েছিলেন কি, পুলিশ প্রশাসনের ভুমিকা কি ছিলো, স্থানীয় রাজনীতিবিদরা কি করেছিলো। শুধু আপনাকেই আক্রমন করলো কেনো এসব প্রশ্ন করা হয়।
আবেদনকারীকে তারর ভয়ের সব কারণ বিশ্বাসযোগ্যভাবে বলতে হবে। এ সময় বর্নবাদ, ধর্মীয় বৈষম্য, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, লিঙ্গ বৈষম্য প্রভৃতি বিষয় নিয়েও আলোচনা করা হবে। এর পরের ধাপে প্রশ্ন করা হবে ।
▪︎আবেদনকারী কিভাবে দেশত্যাগের বিষয়টি স্থির করলো, ▪︎কিভাবে অর্থের যোগাড় করলো,▪︎ কাদের সহায়তা নিলো, ▪︎কোন কোন দেশ হয়ে কিভাবে ফ্রান্সে প্রবেশ করলো, ▪︎কোন ধরনের যান বাহনের মাধ্যমে আসলো, ▪︎পথে অন্য কোন সমস্যা হয়েছিলো কিনা এ ধরনের প্রশ্ন।
সবশেষ ধাপে আবেদনকারী কিছু প্রমাণপত্র থাকলে সেটা উপস্থাপন করতে পারবেন। প্রমাণ অবশ্যই বাস্তব সম্মত হতে হবে। কোন অবস্থাতেই ভুয়া কাগজ বা প্রমাণ না দেয়াই ভালো। একজন আবেদনকারী যদি এসব বিষয়ে একটু মনোযোগ দেন তাহলে অনায়াসেই শরনার্থী মর্যাদা পেতে পারেন।