রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২৫ পূর্বাহ্ন

বাংলার ঋতুবৈচিত্র্য

  • আপডেট সময় বুধবার, ১২ জুন, ২০২৪

রূপময়ী বাংলার প্রকৃতি । এই রূপে মুগ্ধ হয়ে কবি জীবনানন্দ দাশ লিখেছেন “বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর ।” সুজলা সুফলা বাংলার বাইরে গেলে বোঝা যায় যে, অন্যান্য জায়গা থেকে বাংলা কতখানি আলাদা । প্রকৃতির লীলাভূমি এই বাংলায় একের পর এক ছয় ঋতুর আগমন ঘটে এক এক সাজে ।

গ্রীষ্ম —বাংলার প্রথম ঋতুর আবির্ভাব হয় গ্রীষ্মে । তাই ঋতুর নাম গ্রীষ্ম । বছরের প্রথম দুই মাস বৈশাখ ও জৈষ্ঠ্য মাস নিয়ে গ্রীষ্ম । গ্রীষ্মের প্রখর তাপপ্রবাহে মাঠ-ঘাট খাঁ খাঁ করে । এরই মধ্যে বৈশাখের রক্তচক্ষু ম্লান করে উপস্থিত হয় কালবৈশাখী । একদিকে সূর্যের বহ্নিশিখা, অপরদিকে কালবৈশাখীর পৃথিবী কাঁপানো রণদামামা । এমন রুদ্র সুন্দর প্রকৃতির ডালি ভরে ওঠে আম, জাম, কাঁঠালের সরসতায় । জুঁই, চাঁপা, গন্ধরাজ, রজনীগন্ধার সৌরভে সৌরভিত হয় পল্লীর গৃহকোণ ।

বর্ষা— ঋতু পর্যায়ের দ্বিতীয় ঋতু বর্ষা । আষাঢ় ও শ্রাবণ এই দুই মাস নিয়ে বর্ষাকাল । বর্ষা আসে আপন মহিমায়, ঘনঘন বিদ্যুতের চমকে আর অনবরত বারিধারায় আমরা জানতে পারি বর্ষারাণীর আগমন বার্তা । বর্ষার পুতধারায় বাংলার খাল, বিল, নদী,নালা ভরে ওঠে কানায় কানায় । প্রকৃতির সঙ্গে মানব মনও নেচে ওঠে । বাংলার কৃষকের প্রাণেও জাগে নবীন সুর ও আশা । কেন না বর্ষা ফল ও ফসলের ঋতু, ধান রোপনের ঋতু । বাংলার জলে, স্থলে, বনতলে নবীন কিশলয়ে লাগে প্রাণের দোলা । তারপর পথে পথে কদম্ব কেশরের স্মৃতিচিহ্ন ছড়িয়ে বিদায় নেয় বাঙালীর প্রাণের ঋতু বর্ষা ।

শরৎ— বর্ষা বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে আগমন হয় শরৎ । বাংলার ভাদ্র ও আশ্বিন এই দুই মাস নিয়ে শরৎকাল । একে পূজার ঋতুও বলা হয় । প্রকৃতিতে সজো সাজো রব দেখেই বোঝা যায়, শরতের আগমন । নীল আকাশের মাঝে মাঝে পেঁজা ধবধবে সাদা তুলোর মতো মেঘের ভেসে বেড়ানো ।রাশি রাশি কাশফুলের সমারোহে, শিউলি ফুলে, সরোবরে পদ্ম ফুলের সমারোহে সেজে ওঠে শরৎ । প্রকৃতিতে বেজে ওঠে আগমনীর সুর । বাঙালীর জাতীয় উৎসব -দুর্গোৎসব শারদীয়া এই ঋতুতেই হয় । যার জন্য ধনী-দরিদ্র আপামর বাঙালী মেতে ওঠে আনন্দ উৎসবে । কবির কণ্ঠে শোনা যায়

হেমন্ত —শরতের আনন্দের রেস কাটতে না কাটতে প্রকৃতিতে হেমন্তের উদয় হয় । কুয়াশার চাদরে মুড়ি আসে হেমন্ত । কার্তিক ও অগ্রহায়ণ দুই মাস নিয়ে হেমন্ত ঋতু । ফসল পাকানোর পালা চলে । ফসল তোলা হয় এই সময় । কৃষকের ঘরে ঘরে ফসল কাটার আনন্দের সঙ্গে পালিত হয় নবান্ন উৎসব ।

শীত— হেমন্ত শেষ হলে বাংলার ঋতুরঙ্গে আসে শীতের পালা । পৌষ ও মাঘ দুই মাস নিয়ে শীতঋতু । উত্তরে হিমেল হাওয়া, গাছে গাছে পাতা ঝরে যায় । উত্তরে শীতে গ্রাম বাংলার মানুষ শীতে কাঁপে । কিন্তু শীতকাল আনন্দ উৎসবের দিক থেকেও কম যায় না । রং বেরঙের ডালিয়া, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা ফুলের বাহারে প্রকৃতি সেজে ওঠে আপন ছন্দে । শীতের পার্বণ পৌষ পার্বণ । পিঠে পুলি ও নলেন গুড়ের গন্ধে ম ম করে বাংলার বাতাস । বাঙালীর ভ্যালেন্টাইন ডে সরস্বতী পুজা এই সময় হয় । সরস্বতী পূজা বড়দিনের উৎসবের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় শীত ।

বসন্ত— শীতের শেষে ঋতুরাজ বসন্তের আগমন । ফাল্গুন ও চৈত্রমাস নিয়ে বসন্ত । নবযৌবনের অগ্রদূত । গাছে গাছে নব কিশলয় আর ফুলে ফুলে ভরে ওঠে বন বনান্তর । বসন্তের দূত কোকিলের কুহুতানে চারিদিক মুখরিত হয় । রঙের উৎসব বসন্ত । বাঙালীর দোল আর সর্বভারতীয় হোলির উৎসব এই সময় হয় । হোলির রঙের সঙ্গে প্রকৃতির রঙে, অর্থাৎ পলাশ, কৃষ্ণচূড়ার রঙে রেঙে ওঠে প্রকৃতি । এইভাবে চৈত্রের শেষে বিদায় নেয় বসন্ত

উপসংহার— বাংলার ঋতুরঙ্গশালার এই ছয়টি ঋতু আপন বৈচিত্র্যে চির পুরাতন হয়েও সে চির নতুন । তাই এই ছয় ঋতু আমাদের জীবনে, সাহিত্যে, কাব্যে, শিল্পে, সংগীতে, মিলনে, বিরহে, উৎসবে, মনে এক বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছে ।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com