শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৮ পূর্বাহ্ন

স্বপ্নের মালয়েশিয়ায় গিয়ে জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে

  • আপডেট সময় শনিবার, ৮ জুন, ২০২৪

বিদেশ গেলেই দ্রুত কাজ পাওয়া যায়। প্রতি মাসে ভালো মাইনে। তাই সোনার হরিণ পাওয়ার আশায় ১০ বছর প্রবাস জীবন কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নেত্রকোনা সদর উপজেলার বাংলা গ্রামের মাহাবুব আলম। স্বপ্ন ছিল বিদেশে গিয়ে টাকা আয় করে গ্রামে জমি কিনবেন, বাড়ি করবেন। দুঃখের দিন শেষ হবে পরিবারের। হাসি ফুটবে সবার মুখে।

শেষ পর্যন্ত জমি বিক্রি করে বৈধভাবেই তিনি মালয়েশিয়া গিয়েছিলেন। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন আর পূরণ হয়নি। উল্টো জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছেন তিনি। মিথ্যা মামলার দণ্ড মাথায় নিয়ে হাসপাতালে কাটছে তার জীবন। এখন পরিবারে চলছে কান্নার রোল।

মাহাবুবকে দ্রুত জীবিত ফিরিয়ে আনতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন অসহায় এই পরিবারটির লোকজন। এরই মধ্যে তারা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসে (বায়রা) লিখিত আবেদন করেছেন। ভুক্তভোগী মাহাবুবের ভাই সারোয়ার আলম বলেন, অর্থ, চাকরি কোনোটির এখন প্রয়োজন নেই আমাদের। মাহাবুবকে জীবিত ফেরত পাওয়াই একমাত্র চাওয়া।

মালয়েশিয়ার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা মাহাবুবের একটি ভিডিওসহ একাধিক ছবি এসেছে কালবেলার হাতে। এতে দেখা গেছে, এই প্রবাসীর শরীর এখন হাড্ডিসার। অসুস্থতায় চুল পড়ে গেছে। মাথায় রয়েছে একাধিক ক্ষতচিহ্ন। হাসপাতালের পোশাকে তাকে বারবার চোখ মুছতে দেখা যায়। বাঁ হাতে হ্যান্ডকাফ পরানো অবস্থায় তার চিকিৎসা চলছে।

মাহাবুবের ভাই সারোয়ার আলম কালবেলাকে বলেন, ‘বৈধভাবে মালয়েশিয়া গিয়ে রিক্রুটিং এজেন্সির প্রতারণার শিকার হয়েছেন মাহাবুব। এই ঘটনার প্রতিবাদ করায় তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।’ ভাইকে মারধর করারও অভিযোগ করেন সারোয়ার।

পরিবারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সংস্থায় লিখিত আবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ১৪ অক্টোবর কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে মালয়েশিয়া যান মাহাবুব আলম। তার পাসপোর্ট নম্বর এ-০১৪৫৫২১২। ঢাকার প্রতিষ্ঠান ‘সেলিব্রেটি ইন্টারন্যাশনাল’ নামক রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে তিনি বিদেশে পাড়ি জমান। শর্তানুযায়ী সেখানে যাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে ওয়ার্ক পারমিট নিশ্চিত করাসহ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার কথা। যাওয়ার পর বলা হয়, মালয়েশিয়ান প্রতিষ্ঠান ‘পেট্রোনাস’ তাদের পক্ষে শ্রমিকদের সবকিছু দেখভাল করবে। কার্যত সেখানে পেট্রোনাস তাদের তত্ত্বাবধান করেনি।

আবেদনে আরও বলা হয়, মালয়েশিয়ায় যাওয়ার পর একটি গরুর খামারে মাহাবুবসহ অনেক শ্রমিককে রাখা হয়। সেখানে ‘নাজির’ নামে এক ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের নাম-পরিচয় গোপন রেখে মাঝেমধ্যে এসে হাজিরা দিতেন। শর্ত ভঙ্গ করে ছয় মাসের অধিক সময় আট শতাধিক কর্মীকে বসিয়ে রাখা হয়। এই পরিস্থিতিতে তারা মালয়েশিয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারস্থ হন। এক পর্যায়ে তারা মালয়েশিয়ার আদালতে গিয়ে প্রতারণার অভিযোগ করেন। আদালত সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে সবার দ্রুত কর্মসংস্থানসহ ক্ষতিপূরণ বাবদ দুই মাসের বেতন দেওয়ার নির্দেশ দেন। মালিকপক্ষ বেতন ও কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়ন করেনি। উল্টো আদালতে সাক্ষ্য দেওয়া ছয়জনকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন মালয়েশিয়ার আদালত। মাহাবুব আলমকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে গুরুতর অসুস্থ মাহাবুবের হাতকড়া পরা অবস্থায় দেশটির একটি হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। এই অবস্থায়ও ঢাকার রিক্রুটিং এজেন্সি সেলিব্রেটি ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার মোহাম্মদ আব্দুল হাই মাহাবুবসহ কারও কোনো খোঁজখবর নেননি।

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের এক কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, ‘আবেদনটি পাওয়ার পর মাহাবুবের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। অনুমতি পেলে পুরো ঘটনা জানার পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

বায়রার সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, কোনো শ্রমিক বিদেশে গিয়ে সে দেশের আদালতে দণ্ডিত হলে বায়রা সাধারণত হস্তক্ষেপ করে না। তবু ওয়েলফেয়ার বোর্ডকে আমরা বিষয়টি জানাব, যদি কিছু করার থাকে।

অভিযোগের বিষয়ে রিক্রুটিং এজেন্সি সেলিব্রেটি ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার মোহাম্মদ আব্দুল হাইয়ের মোবাইল নম্বরে ফোন দিলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com