বিমানে ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয় পৌঁছতে সময় নেয় ৬ ঘণ্টা। লোকমুখে অনেকে হ্যানয়-কে ‘হা-নুই’ নামে ডাকেন। যার অর্থ নদীর মধ্যে শহর। এই শহরে এলে সহজেই চোখে পড়বে প্রাচীনের সঙ্গে নতুনের এক মেলবন্ধন। দেখতে ভুলবেন না টেম্পল অফ লিটারেচার, হোয়ান কিয়েম লেক, হো চি মিন মুসোলিয়াম, ওল্ড কোয়াটার্স, ওয়াটার পাপেট থিয়েটার, রেড নদীর উপর শতাব্দী প্রাচীন লং বিইন ব্রিজ, ওয়ান পিলার প্যাগোডা, ওয়েস্ট লেক এবং সেন্ট জোসেফ ক্যাথিড্রাল।
প্রায় প্রতি বছরই ভিয়েতনামে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হয়, আর তার ফলেই দেশের বিভিন্ন প্রদেশের কোনও না কোনও অঞ্চল প্লাবিত হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও ভিয়েতনামীদের কাছে বৃষ্টি খুবই শুভ। তাঁরা মনে করেন বৃষ্টি মানেই দেশে ড্রাগন ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভিয়েতনামি রূপকথা অনুযায়ী ড্রাগনই হল সৃষ্টির উৎস এবং তাঁরা ড্রাগনের বংশধর। মানচিত্রে ভিয়েতনামকে দেখতে অনেকটা ইংরেজি ‘এস’ অক্ষরের মতো। অনেকটা ড্রাগনের আকৃতি। তাই ভিয়েতনামবাসীদের বিশ্বাস একদিন তাঁরা এশিয়া মহাদেশে ড্রাগনের মতো সর্বশক্তিমান হবে।
হ্যানয় থেকে ১৮২ কিলোমিটার দূরে কুইং লিন প্রদেশে হ্যালং উপসাগরের তীরে প্রাকৃতি সৌন্দর্যে ঘেরা শহর হ্যালং। টং কিং উপসাগরেরই অংশবিশেষ হল হ্যালং উপসাগর। ছোটবড় প্রায় ২ হাজারটি মনোলিথিক দ্বীপ নিয়েই এই উপসাগর। এর মধ্যে মাত্র ৯৮৯টি দ্বীপের নাম রয়েছে, বাকিগুলি নামহীন। দ্বীপের নামগুলিও অদ্ভুত। যেমন, হন গা চই (লড়াকু মোরগের দ্বীপ), হন মই না (ছাত দ্বীপ), হন ভই (হাতি দ্বীপ) ইত্যাদি। একমাত্র ‘টি-টপ’ দ্বীপ ছাড়া আকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই দ্বীপের নামকরণ। ১৯৬২ সালে টি-টপ দ্বীপে হো চি মিন-এর সঙ্গে এসেছিলেন সোভিয়েত মহাকাশচারী গ্যেরম্যান টিটভ। হো চি মিন তখন এই দ্বীপের নামকরণ করেছিলেন। ইউনেস্কো-র ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকায় জায়গা করে নেওয়া হ্যালং উপসাগরের এই দ্বীপগুলির কয়েকটিতে রয়েছে স্ট্যালাগমাইট এবং স্ট্যালাগটাইট-এর আশ্চর্য গুহা।
হ্যালং শহরের জেটি থেকেই সামর্থ্য অনুযায়ী ক্রুজ নির্বাচন করে দেখে নিতে হয় নৈসর্গিক শোভা। তবে সবচেয়ে ভালো হয় যদি ২-রাত্রি ৩-দিনের ক্রুজ নির্বাচন করেন। হ্যালং শহর থেকে হ্যালং বে-র সৌন্দর্য্য চাক্ষুষ করতে উঠতেই হবে ‘বাই থো’ পাহাড়ে। হালকা চড়াই পথে উঠতে কমবেশি আধ ঘণ্টা সময় লাগবে। এই পাহাড়েই নিওলিথিক যুগের শেষ পর্বের ভিয়েতনামী সংস্কৃতির নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে। হ্যালং বে-র সৌন্দর্য্য চাক্ষুষ করবেন সূর্যাস্ত কিংবা সূর্যোদয়ের সময়।
কীভাবে যােবন
থাই এয়ারওয়েজ-এর বিমান ব্যাঙ্কক হয়ে হ্যানয় যাচ্ছে। এভাবে গেলে থাইল্যান্ডের ভিসা করার দরকার হয় না। সরাসরি বিমানও রয়েছে। সেক্ষেত্রে ভাড়ার কিছু পার্থক্য হতে পারে
কোথায় থাকবেন
হ্যানয় এবং হ্যালং শহরে বিভিন্ন মানের ও দামের অসংখ্য হোটেল আছে। বুক করা যাবে অনলাইনেও
কখন যাবেন
মার্চ-এপ্রিল এবং সেপ্টেম্বর-অক্টোবর হ্যালং-বে ভ্রমণের আদর্শ সময়
করবেন না
ভিয়েতনামে বৌদ্ধধর্মের প্রভাব বেশি। এছাড়া রোমান ক্যাথলিক ধর্ম, কাও দাই ধর্ম ও হোয়া হাও (বৌদ্ধধর্মের একটি ভিয়েতনামী সংস্করণ) ধর্মের অনুসারী আছেন। তাঁদের ভাবাবেগে আঘাত লাগে এমন কিছু করবেন না। হার্বস ও মুরগির মাংস মেশানো ভিয়েতনামীদের প্রিয় খাদ্য ‘ফো’ মিস করবেন না
সঙ্গে রাখুন
রোদ চশমা, সানস্ক্রিন, ওষুধপত্র, ডং (ভিয়েতনামের মুদ্রা) বা খুচরো ডলার সঙ্গে রাখুন। ছাতা ভুলবেন না
তাজা মন্তব্য
ভাবাবেগে আঘাত শুধু ভারতে এসেই করা যাবে, অন্য কোথাও নয়।