1. [email protected] : চলো যাই : cholojaai.net
আন্দামান ও নিকোবর ভ্রমণ
মঙ্গলবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৪০ অপরাহ্ন
Uncategorized

আন্দামান ও নিকোবর ভ্রমণ

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৬ জুলাই, ২০২১

কলকাতা থেকে দুই ঘন্টা পনের মিনিটের বিমান যাত্রায় তেরশ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে আন্দামান ও নিকোবর রাজ্যের রাজধানী পোর্টব্লেয়ার পৌঁছলাম।  আকাশ থেকে প্রায় আধা ঘন্টা ধরে সাগর আর পাহাড়ের মিতালি চোখে পড়ে।  আসলে আন্দামানের চারপাশে বঙ্গোপসাগর, আন্দামান সাগর আর ভারত মহাসাগরের অবস্থান।  এইজন্যই যেদিকে চোখ যায় শুধু পানি আর পানি।

সাগর আর ইতিহাসের যুগলবন্দী- আন্দামান ও নিকোবর

আন্দামান ও নিকোবর আইল্যান্ডের একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর – বীর সাভারকার বিমানবন্দর। ছোট্ট কিন্তু ছিমছাম। বলে রাখা ভালো যে, আন্দামানে প্রবেশের জন্য সব বিদেশিরই বিশেষ অনুমতি (RAP -রেস্ট্রিক্টেড এরিয়া পারমিশন) নিতে হয়, যা খুবই অল্প সময়ে নির্দিষ্ট কাউন্টারে ফর্ম পূরণ করে পাওয়া যায়। আমরাও লাইনে দাঁড়িয়ে ফর্মটি পূরণ করে অনুমতিপত্র সংগ্রহ করে নিলাম। জায়গাটা আমাদের এত বেশি আকর্ষন করছিল যে, এয়ারপোর্ট থেকে খুব দ্রুত হোটেলে চলে গেলাম। খুব দ্রুত চেক ইন আর লাঞ্চ করেই ছুটলাম সেলুলার জেল এর উদ্দেশ্যে যা আমাদের ভ্রমণের অন্যতম আকর্ষণ।

সাগর আর ইতিহাসের যুগলবন্দী- আন্দামান ও নিকোবর

সাগর আর ইতিহাসের যুগলবন্দী- আন্দামান ও নিকোবর

পরদিন সকালে উঠেই আমরা চলে গেলাম গেলাম রস আইল্যান্ড। এই জায়গাটায় আন্দামান জেলের ব্যাবস্থাপনার সাথে জড়িত ব্রিটিশ অফিসার ও তাদের পরিবারবর্গের বিলাসী জীবনযাপন সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যায়। ছোট্ট দ্বীপ রস এ যেতে মোটরবোটে মাত্র দশ মিনিট সময় লাগে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও উন্নত জীবনব্যবস্থার জন্য তৎকালীন ব্রিটিশ শাসনামলে এই দ্বীপকে প্যারিস অফ ইস্ট নামে ডাকা হত। এখনো এখানে গেলে তখনকার দিনে বানানো সুইমিং পুল, উন্নত পানি শোধনাগার, ডিজেল চালিত জেনারেটর, ছাপাখানা, চিত্রশালা, চার্চ, বেকারি, উন্মুক্ত মঞ্চ ও ক্লাব দেখলে সেদিনের জাঁকজমকের অনেকখানিই অনুধাবন করা যায়।

দুই রাত তিন দিন ধরে ইতিহাস চর্চার পর আমাদের মন আন্দামানের অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার জন্য আকুলিবিকুলি করছিল। এবার তাই নির্ভেজাল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সন্ধানে আমরা রওনা দেই আন্দামান সাগরের আরেকটি দ্বীপ হাভেলকের উদ্দেশ্যে। ৮০ কিলোমিটারের মত সমুদ্র্রপথ আধুনিক ক্রুজ শিপের কল্যানে মাত্র দুই ঘন্টায় পাড়ি দিয়ে সেখানে পৌঁছে যাই আমরা। জাহাজ থেকে নেমে দীর্ঘ জেটির পথ ছিল বিস্ময়ে ভরা। স্বচ্ছ পানির নিচে সাদা বালিতে খেলে বেড়ানো রঙবেরঙের মাছের মেলা দেখে আমরা অভিভূত।

সাগর আর ইতিহাসের যুগলবন্দী- আন্দামান ও নিকোবর

রস আইল্যান্ডে এসেও সময় বাঁচাতে আমরা দ্রুত হোটেলে ছুটলাম। দুপুরের খাবার শেষ করেই ট্যাক্সি ধরে ছুটলাম রাধানগর বিচের উদ্দেশ্যে। এক ঘন্টার মত লাগল সেখানে পৌঁছাতে। টাইম ম্যাগাজিনের বিচারে এই বিচটি এশিয়ার মাঝে সেরা। বিচটি আসলেই দেখবার মতো সুন্দর। যেদিকেই তাকানো যায় চারদিকে শুধু ঘন নীল পানি, ধবধবে সাদা বালি আর ঘন সবুজ বনের মিতালী মিলে তৈরি করেছে অপার্থিব সৌন্দর্যের লীলাভূমি।

পরদিন সকালে গেলাম এলিফ্যান্ট বিচ। অনিন্দ্যসুন্দর এই বিচে মাঝেমধ্যেই হাতির দেখা মেলে। এইজন্যই এমন নামকরণ। এই বিচে নানারকম ওয়াটার স্পোর্টস উপভোগ করা যায়। সেসব স্পোর্টস উপভোগের ঠিক শেষ মুহূর্তে আমরা হাতির দেখা পাই যা আমাদের ভ্রমণকে পরিপূর্ণ করে এ যাত্রা।

দুইরাতের হাভেলক ভ্রমণ শেষে আবারও শিপে করে নীল আইল্যান্ডমুখী যাত্রা। এবারের যাত্রা ৪৫ মিনিটের। জীবন্ত প্রবালের জন্য বিখ্যাত এই দ্বীপ। মাত্র দুই ঘন্টার মত আমরা ছিলাম গ্লাস বটম বোটে। বোটের কাঁচের পাটাতনের নীচে স্বচ্ছ পানিতে জীবন্ত প্রবাল আর মাছের লুকোচুরি সারাজীবন মনে রাখবার মতো স্মৃতি হয়ে জমা হয় আমাদের হৃদয়ে। এই দ্বীপেই আছে কোরাল ব্রিজ যা স্থানীয়ভাবে হাওড়া ব্রিজ নামে পরিচিত।

সাগর আর ইতিহাসের যুগলবন্দী- আন্দামান ও নিকোবর

প্রায় ছয়শ দ্বীপ নিয়ে আন্দামান এন্ড নিকোবর আইল্যান্ড গঠিত যার মাত্র ২৫ কিংবা ২৬টিতে  মানুষের বসতি রয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই আবার এখানকার স্থানীয় আদিবাসী। আমাদের পাঁচ রাত ছয় দিনের ভ্রমণে এতগুলো দ্বীপের মধ্যে মাত্র চারটি দ্বীপ দেখা সম্ভব হয়েছে। দ্বীপের প্রায় চার লাখ অদিবাসীর অধিকাংশই বাংলা ভাষাভাষী, যাদের পূর্বপুরুষ তৎকালীন পূর্ববাংলা (বিশেষ করে দক্ষিণ অঞ্চল) থেকে গিয়েছিলেন। আমরা বাংলাদেশ থেকে গিয়েছি শুনে সবাই তাদের বাড়িতে যাবার জন্য নিমন্ত্রণ করেছে। সেসব বাড়িতে তাদের পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যদের স্মৃতিচারণে বাংলাদেশের কথা উঠে এসেছে। বারবার করে আমাদের দেশের উন্নতি সম্মন্ধে জানতে চেয়েছেন তারা। কতকাল আগে দেশ ছেড়ে এলেও এখনো ছেড়ে আসা মাটির প্রতি তাদের টান লক্ষণীয়। এখানকার একটা বিষয় ঠিক আমাদের মত আর তা হল স্থানীয় অধিবাসীরা খুব অতিথিপরায়ণ। এখানে গেলে পাবেন প্রচুর খাবার হোটেল, খাবারও একদম বাংলাদেশের মত। তাই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি আর আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসের সাক্ষী আন্দামান হতে পারে আপনার পরবর্তী ভ্রমণ গন্তব্য।

লেখক- এ.এস.এম শাহীন

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Developed By ThemesBazar.Com