মরুভূমির দেশে বন্যার কথা শুনলে যে কেউ অবাক হবেন। কিন্তু বাস্তবে তা-ই ঘটেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে গত দুদিনের টানা বৃষ্টিপাতে বন্যা সৃষ্টি হয়েছে। যা দেশটির ৭৫ বছরের রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে। পানির নিচে তলিয়ে গেছে দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, বন্ধ রয়েছে ফ্লাইট চলাচল। ফলে বাংলাদেশ থেকে দুবাই যেতে পারছেন না অনেকে। আবার দুবাই থেকে দেশে আসতে না পারায় বিপাকে প্রবাসীরা। আবার দুবাই ট্রানজিট হয়ে অন্যান্য গন্তব্যে যাওয়া যাত্রীরাও আটকা পড়েছেন দুবাই বিমানবন্দরে।
জানা গেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে সোমবার (১৫ এপ্রিল) রাতে বৃষ্টি শুরু হয়ে অব্যাহত ছিল মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে মোট ১৪২ মিলিমিটারের (৫.৫ ইঞ্চি) বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। পানির নিচে তলিয়ে গেছে মরুভূমির শহর দুবাই। ভারী বর্ষণের কারণে আমিরাতের প্রধান মহাসড়কগুলো প্লাবিত হয়েছে।
দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ক্রমাগত ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। অতিরিক্ত যাত্রী হওয়ায় হোটেলেরও ব্যবস্থা করতে পারছে না এয়ারলাইনগুলো। বিমানবন্দরেই সময় পার করতে হচ্ছে অনেক যাত্রীকে। এমনকি খাবার নিয়েও বিপাকে আটকে পড়ে থাকা যাত্রীরা। শত শত যাত্রী থাকা-খাওয়া নিয়ে দুর্ভোগে আছেন। এয়ারলাইনগুলো বিমানবন্দরটির ভেতরে থাকা রেস্তোরাঁর খাবারের কুপন দিলেও যাত্রীদের খাবার দিতে পারছে না তারা।
সৌদি থেকে দেশে ফেরার জন্য এমিরেটস এয়ারলাইনের টিকিট কেটেছিলেন প্রবাসী আহমেদ সুমন। ১৬ এপ্রিল জেদ্দা থেকে ট্রানজিটে দুবাই এসে আটকা পড়েছেন তিনি। ইকে ৫৮৪ ফ্লাইটটি বাতিল হওয়ায় দেশে ফিরতে পারেননি তিনি। আহমেদ সুমন বলেন, ২৪ ঘণ্টা ধরে দুবাই এয়ারপোর্টে আটকে আছি। ফ্লাইট শুধু বাতিল হচ্ছে। জানি না কখন ফ্লাইট সচল হবে। এমিরেটস একটি কুপন দিয়েছিল খাবারের, কিন্তু ফাস্টফুডের দোকানে গেলে বলছে তাদের কাছে পর্যাপ্ত খাবার নাই। কোনোরকম এটা-সেটা দিয়ে বিদায় করছে।
ঢাকা থেকে দুবাইগামী যাত্রীরাও পড়েছেন বিপাকে। এছাড়া দুবাই হয়ে অন্যান্য গন্তব্যে যাওয়া যাত্রীদেরও বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। এখন পর্যন্ত ঢাকা থেকে দুবাই ও শারজাহ রুটের ৯টি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে এয়ার অ্যারাবিয়ার ৫টি ফ্লাইট, এমিরেটসের ২টি ও ফ্লাই দুবাইয়ের ২টি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে।
হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক মো. কামরুল ইসলাম বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে ১৭ এপ্রিল থেকে ৯টি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারও ফ্লাইট চলাচল শুরু হবে।
স্বপন কুমার বড়ুয়া যাবেন আয়ারল্যান্ড, ১৬ এপ্রিল এমিরেটস এয়ারলাইন্সের তার ফ্লাইট ছিল। কক্সবাজার থেকে ঢাকায় আসার জন্য একটি এয়ারলাইনের চেক-ইন করার পর মেইলে জানতে পারেন এমিরেটস ফ্লাইট বাতিল করেছে।
স্বপন কুমার বলেন, আমার ধারণা করেছিলাম হয়তো পরের ফ্লাইটে যেতে পারবো। তাই ঢাকা চলে এসেছি। দুই বাচ্চাসহ আমি হোটেলে আছি। কখন স্বাভাবিক হবে তার কোনও তথ্য পাচ্ছি না।
এদিকে অনেক ফ্লাইট দুবাই নামতে না পেরে আশপাশের অন্যান্য বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে। সেখানে আটকে আছেন অনেক যাত্রী।
এমিরেটস এয়ারলাইন জানিয়েছে, খারাপ আবহাওয়ার কারণে তারা ১৭ এপ্রিল সকাল ৮টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত দুবাই থেকে ছেড়ে যাওয়া ফ্লাইটের চেক-ইন স্থগিত করেছে। এ সময়ে যাত্রীরা তাদের বুকিং এজেন্ট বা এমিরেটস যোগাযোগকেন্দ্রে যোগাযোগ করবেন পারেন রি-বুকিংয়ের জন্য। অনুগ্রহ করে কেউ দুবাই এয়ারপোর্টে যাবেন না। ট্রানজিটে থাকা যাত্রীদের তাদের ফ্লাইট সচল করার জন্য প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। এ সময়ে ফ্লাইটসূচি বিলম্ব হতে পারে। এই দুর্যোগে অসুবিধার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। ফ্লাইটসূচি জানতে এমিরেটসের ওয়েবসাইট দেখতেও অনুরোধ করা হয়েছে।
দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এক মুখপাত্র বলেন, আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি দ্রুত বিমান চলাচল স্বাভাবিক করতে। এ পরিস্থিতিতে অনেক ফ্লাইট বিলম্বিত এবং ডাইভার্ট করা অব্যাহত রয়েছে। যাত্রীদের অনুরোধ করা হচ্ছে বিমানবন্দরে না আসতে, ফ্লাইটের তথ্য জানতে এয়ারলাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। আমরা খুব চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে আছি। তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অপারেশন চালু করার জন্য কাজ করা হচ্ছে।