রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৪ অপরাহ্ন

কাশ্মীর এর শ্রীনগর দর্শনীয় স্থান

  • আপডেট সময় বুধবার, ২৭ মার্চ, ২০২৪

কাশ্মীরকে বলা হয় ভূস্বর্গ, পৃথিবীর বেহেশত, বা উপমহাদেশের সুইজারল্যান্ড। ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর এর গ্রীষ্মকালীন রাজধানী শ্রীনগর। কাশ্মীর ঘুরতে গেলে পর্যটকেরা সবার আগে শ্রীনগর যায়। সেখান থেকে সোনমার্গ, গুলমার্গ, এবং পেহেলগাম ঘুরে আবার শ্রীনগর ফিরে এসে শ্রীনগর এয়ারপোর্ট থেকে ফিরতি যাত্রার ফ্লাইট ধরে। সুতরাং আপনার কাশ্মীর ভ্রমণের একটা বড় অংশ জুড়ে থাকবে শ্রীনগর।

এই ব্লগে আমরা আলোচনা করবো আপনার শ্রীনগর ভ্রমণে দর্শনীয় স্থান, কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন, কখন গেলে ভালো হয়, এবং শ্রীনগর ভ্রমণ খরচ সম্পর্কে বিস্তারিত।

তো আসুন শুরু করা যাক।

শ্রীনগর ভ্রমণঃ দর্শনীয় স্থান

শ্রীনগরের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে মুঘল আমলের বেশকিছু বাগান, অসাধারণ নৈসর্গিক সৌন্দর্যবিশিষ্ট কিছু লেক, আর সুন্দর সুন্দর কাশ্মীরি বাড়িঘর। যেমনঃ

ডাল লেক

শ্রীনগর এর দ্বিতীয় বৃহত্তম ও অন্যতম সুন্দর হ্রদ ডাল লেক। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটকেরা শ্রীনগর আসেন অসাধারণ সুন্দর এই ডাল লেকের ওপর “শিকারা” নামক বোটে চড়ে ঘুরে বেড়াতে ও লেকের ওপর হাউজবোটে রাত্রীযাপন করতে। শীত ও গ্রীষ্ম এই দুই ঋতুতে ডাল লেকের দুই রকম রুপ দেখা যায়। শীতে লেকের পানি জমে বরফ হয়ে যায়। আর চারপাশ ছেয়ে যায় পুরু বরফের স্তরে। সে এক অসাধারণ দৃশ্য!

অপরদিকে, গরমকালে ডাল লেকের পানি থাকে শান্ত, স্থির। স্থানীয়রা লেকের পানিতে সবজি চাষ করে, নৌকোয় করে খাবারদাবার ও জিনিষপত্র বিক্রি করে। গ্রীষ্মকালের ডাল লেক মনে এক অন্যরকম প্রশান্তি এনে দেয়। চারপাশে পাহাড় আর মাঝখানে লেক মিলিয়ে দেখার মতো দৃশ্যের অবতারণা হয়। দুই ঋতুতেই ডাল লেকে ঘুরে বেড়ানোর একমাত্র মাধ্যম শিকারা। এটি এক ধরনের নৌকা যা পর্যটকদের কাছে আরো আকর্ষনীয় করার জন্য নানা রঙের আচ্ছাদন দেয়া এবং এগুলোতে বসার জন্য সুন্দর সীট আছে।

ডাল লেকের ওপর শ খানেক হাউজবোট রয়েছে। এই হাউজবোটগুলোর এক একটির বয়স কমপক্ষে পঞ্চাশ থেকে একশো বছর।  হাউজবোট সম্পর্কে বিস্তারিত জানবেন একটু পরেই।

শালিমার বাগ মুঘল গার্ডেন

শ্রীনগরের আরেকটি বিখ্যাত পর্যটক আকর্ষণ মুঘল বাদশাহ জাহাঙ্গীরের আমলে নির্মিত শালিমার বাগ মুঘল গার্ডেন। মুঘল সাম্রাজ্যের এই গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদটি সম্রাট জাহাঙ্গীর তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী নূরজাহানকে উৎসর্গ করেন । গ্রীষ্মকালে দিল্লী থেকে সম্রাট, তাঁর স্ত্রী ও পুরো লালকেল্লাকে স্থানান্তরিত করা হতো শালিমার বাগে। হাতি দিয়ে বহন করা হতো তৈজসপত্র ও মালামাল। স্থানীয়দের নিয়ে দরবার বসতো এখানে। দিল্লীর প্রাসাদের আদলে দেওয়ান-ই-আম, দেওয়ান-ই-খাস ও জেনানা মহল নির্মিত হয় এখানেও।

বাগানটিতে রয়েছে অনেকগুলো পানির ফোয়ারা। পুরো বাগানটিকে পারসিয়ান বাগানের আদলে ৪ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। বাগানের গাছগুলোতে পানি দেয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। “বারা দ্বারি” বা বারো দুয়ার বিশিষ্ট ইমারত বানানো হয়েছে বাতাসের অবারিত চলাচল নিশ্চিত করার জন্য। সামনে মুঘল প্রাসাদ, পেছনে শুভ্র পাহাড় আর ওপরে নীল আকাশের সম্মিলনে অপূর্ব এক দৃশ্যের অবতারণা ঘটে শালিমার বাগে।

হযরতবাল মসজিদ

শ্রীলঙ্কা ভ্রমণে আপনার পরবর্তী গন্তব্য হতে পারে হযরতবাল মসজিদ। এটিকে কাশ্মীরের সবচেয়ে পবিত্র মুসলিম উপাসনালয় ও মাজার হিসেবে গন্য করা হয়। এখানে মহানবী হযরত (সাঃ) এর পবিত্র চুল মোবারক সংরক্ষিত রয়েছে। নবীজির ও ৪ খলিফা জন্মদিবসে এটি প্রদর্শিত হয়। 

হযরতবাল মসজিদ ডাল লেকের উত্তর সাইডে লেকের পাড়ে অবস্থিত। এখান থেকে ডাল লেকের শান্ত ও অপরুপ দৃশ্য দেখা যায়। শান্ত লেকের মাঝে শিকারা নিয়ে ঘুরতে খুব ভালো লাগবে। এখানে মানুষের আনাগোনা নেই তেমন, তাই প্রকৃতির অনন্য শোভা উপভোগ করার এটাই সুযোগ।

পরী মহল

মুঘল সম্রাট শাহজাহান শ্রীনগরে পরী মহল নির্মাণ করেন। সাতটি সোপান বিশিষ্ট পরী মহল মুঘলদের ইন্দো ইসলামিক স্থাপত্যশিল্পের অপূর্ব উদাহরণ। এটি ডাল লেকের দক্ষিণ সাইড অবস্থিত। এটিকে মূলত সম্রাট শাহজাহান এর গ্রীষ্মকালীন বাসস্থান ও লাইব্রেরী হিসেবে নির্মাণ করা হয়।

পরবর্তীতে এটি সুফি সাধকদের আশ্রয়স্থল, পর্যবেক্ষণাগার, জ্যোতিষশাস্ত্র এবং জ্যোতির্বিদ্যার শিক্ষাগার, এবং সরকারী গোপন জিজ্ঞাসাবাদ কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহৃত হয়েছে। পরী মহলের চারদিকে সুন্দর বাগান ও চারপাশে তাকালে পাহাড় চোখে পড়ে। পাহাড় ও ডাল লেকের সমন্বয়ে অত্যন্ত সুন্দর সৃষ্টি এই পরী মহল।

ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল টিউলিপ গার্ডেন

পাহাড়ের গা ঘেঁসে ৭৪ একর জায়গা জুড়ে টিউলিপ এর বাগান। ভাবতে পারছেন কতটা সুন্দর হবে দেখতে? জ্বী, এমনই সুন্দর দৃশ্যের সন্ধান পাবেন শ্রীনগরের ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল টিউলিপ গার্ডেন এ গেলে। এটি এশিয়ার বৃহত্তম ফুলের বাগান। সাতটি সোপান বিশিষ্ট গার্ডেনটির এক পাশে ডাল লেক আর অন্যপাশে জাবারওয়ান মাউন্টেন রেঞ্জ। 

এখানে ৬৮টি জাতের দেড় লাখ এর ও বেশি টিউলিপ রয়েছে। টিউলিপ ছাড়াও হায়াসিন্থ, ড্যাফোডিল, এবং রানুনকুলাস এর ও দেখা পাওয়া যায় এখানে। এখানকার সবগুলো ফুল হল্যান্ড থেকে আনা হয়েছে। অনেক বিখ্যাত হিন্দী সিনেমার শ্যুটিং হয়েছে এ জায়গায় যার মধে অন্যতম ইয়াশ চোপড়া’র “সিলসিলা”।

কিভাবে শ্রীনগর যাবেন

শ্রীনগর ভ্রমণে যেতে হলে আপনাকে সর্বপ্রথম অনলাইনে ইন্ডিয়ান ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। ইন্ডিয়ান ভিসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের কল করুন +৮৮-০৯৬১৭-১১১-৮৮৮ নাম্বারে অথবা ইমেইলে যোগাযোগ করুন

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, এয়ার ইন্ডিয়া, ভিস্তারা, ইন্ডিগো এয়ার ও স্পাইসজেট এর বেশ কটি ফ্লাইট প্রতিদিন ঢাকা থেকে দিল্লির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এই ফ্লাইটগুলোতে সাধারণত কলকাতা, দিল্লি বা মুম্বাই এর ট্রানজিট থাকে। ট্রানজিটের সময়ের পার্থক্যের ওপর নির্ভর করে বিমান ভাড়া। ঢাকা টু শ্রীনগর বিমান ভাড়া ২০২২ ও ফ্লাইট শিডিউল সম্পর্কে জানতে ঘুরে আসুন ভিজিট করুন flightexpert.com। কমপক্ষে ১৫ দিন আগে টিকেট কাটলে ভাড়া অনেক কমে পাবেন।

ট্রানজিট ফ্লাইটে ঢাকা থেকে শ্রীনগর পৌঁছাতে প্রায় ১১ ঘন্টা লাগে। কমপক্ষে ২ দিন সময় হাতে নিয়ে শ্রীনগর ঘুরতে যেতে পারলে ভালো। 

কাশ্মীর এর শ্রীনগর গিয়ে কোথায় থাকবেন

রাতে থাকার জন্য শ্রীনগরে পর্যটকেরা সাধারণত ডাল লেকের ওপর হাউজবোটগুলো বেছে নেন। ডাল লেক ও নিগীন লেকে ব্রিটিশদের দ্বারা তৈরি অনেকগুলো শতবর্ষী হাউজবোট রয়েছে। কাঠের তৈরি ঐতিহ্যবাহী এই হাউজবোটগুলোর ভেতর আরামদায়কভাবে থাকার জন্য আধুনিক সবরকম সুযোগ সুবিধাই রয়েছে। প্রতিটি হাউজবোটে ৩টি করে বেডরুম, একটি বসার ঘর, একটি খাবার ঘর ও একটি করে রান্নাঘর রয়েছে। এছাড়া শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য হীটার এবং ইলেক্ট্রিক কম্বলের ব্যবস্থা রয়েছে। 

হাউজবোটগুলোতে কাশ্মিরী কাঠের কাজ করা আসবাবপত্র, কার্পেট ইত্যাদি রয়েছে যেগুলোর নৈপুণ্য সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। এই হাউজবোটগুলো শুধু থাকার উদ্দেশ্যে বানানো, এগুলো পানিতে ভাসে না। পানিতে ভাসার জন্য ছোট ছোট “শিকারা” রয়েছে। শিকারায় চড়ে আপনি পুরো ডাল লেক ঘুরে বেড়াতে পারবেন।

শ্রীনগর ভ্রমণ খরচঃ শ্রীনগর যেতে কত টাকা লাগে

শ্রীনগর ঘুরতে যাওয়ার আগে সব মিলিয়ে কত টাকা লাগতে পারে সে ব্যপারে ধারণা থাকা জরুরি। শ্রীনগর ভ্রমণ খরচ নিম্নরুপঃ

রিটার্ন বিমান ভাড়া – জনপ্রতি ৩৫,০০০ টাকা (যত আগে টিকেট কাটবেন তত কমে পাবেন)

হোটেল রুম ভাড়া – প্রতি রাত ৩,০০০- ৪,০০০ টাকা  

সিম কার্ড – ১,২০০ টাকা

খাবার – দিন প্রতি ৫০০ টাকা (কমপ্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্ট ও ডিনার হাউজবোট থেকে) 

সুতরাং, সব মিলিয়ে ২ দিনের শ্রীনগর ভ্রমণে যাতায়াত খরচ ও প্রবেশ ফি বাদে আপনার মোট খরচ হতে পারে প্রায় ৪৫,০০০-৫০,০০০ টাকা।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com