রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২৯ পূর্বাহ্ন

নিলাদ্রি লেক যেন এক টুকরো কাশ্মীর

  • আপডেট সময় রবিবার, ৩ মার্চ, ২০২৪

দিগন্ত বিস্তৃত সবুজের সমারোহ। মাঝখানে নীল রঙের জল। একপাশে মেঘালয়ের পাহাড়, তার চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পাথর। প্রকৃতির এক অপূর্ব নিদর্শন। দেশের মধ্যেই যেন টুকরো কাশ্মীর। স্বর্গীয় সৌন্দর্য আর মনোরোম দৃশ্যে ভরপুর এক স্থান হলো নিলাদ্রি লেক। সেখানকার ছবিগুলো দেখলেই আপনি ঠাহর করতে পারবেন কল্পনার চেয়েও কতটা সুন্দর এই স্থানটি।

নিলাদ্রি লেকের কথা শুনে নিশ্চয়ই ভাবছেন, নীল রঙের লেক হয় না-কি! আসলেই তাই, নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করতে পারবেন না পানি এতোটা নীলাভ বর্ণের হয়ে থাকে। এ কারণেই এই লেকটির নাম নিলাদ্রি। সবুজ পকৃতি আর নীল রংয়ের লেকটি সেখানকার সৌন্দর্য দ্বিগুণ বাড়িয়ে তুলেছে।

পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় এক স্থান এটি। এই লেকের নাম শহীদ সিরাজ হ্রদ বা শহীদ সিরাজ লেক এমনকি নিলাদ্রি লেকও বলা হয়ে থাকে। ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষা বাংলাদেশের সিরাগঞ্জের উপজেলার তাহিরপুরে অবস্থিত এই স্থানটি।

জানা যায়, সীমান্তবর্তী ট্যাকেরঘাট চুনাপাথর খনিজ প্রকল্পের পরিত্যক্ত এই খোয়ারিটি ১৯৪০ সালে চুনাপাথর সংগ্রহ শুরু করে। এখানে চুনাপাথর সংগ্রহ করে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় নির্মিত আসাম বাংলা সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় চাহিদা মিটানো হতো।

jagonews24

পরবর্তী সময়ে ১৯৬৬ সালে খনিজ পাথর প্রকল্পটি মাইনিংয়ের মাধ্যমে র্দীঘদিন পাথর উত্তোলন করা হয়। ১৯৯৬ সালে এই প্রকল্পটি একটি লোকসানি প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোয়ারী থেকে চুনাপাথর উত্তোলন বন্ধ করে দেয়।

jagonews24

মুক্তিযুদ্ধের একজন শহীদ সিরাজুল ইসলামের নামানুসারে এই হ্রদের নামকরণ করা হয় শহীদ সিরাজ হ্রদ। মো. সিরাজুল ইসলাম ১৯৫২ সালে কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা উপজেলার ফিলনী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

১৯৭১ সালে স্নাতকে পড়াকালীন সময়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঘর ছাড়েন সিরাজ। আসামের ইকো ওয়ান সেন্টারে প্রশিক্ষণ শেষে তিনি ৫ নম্বর সেক্টরের বড়ছড়া সাব-সেক্টরের অধীনে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন তিনি। স্বাধীনতার পর শহীদ সিরাজকে বীরবিক্রম উপাধিতে ভূষিত করে বাংলাদেশ সরকার।

jagonews24

তার স্মৃতিতে এই হ্রদের নামকরণ করা হয় শহীদ সিরাজ হ্রদ। হ্রদের পাশেই সিরাজুল ইসলামসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার কবরও সংরক্ষিত আছে। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ স্মৃতি সংসদ গড়া হয়েছে।

কীভাবে যাবেন নিলাদ্রি লেকে?

ঢাকা থেকে সড়কপথে সুনামগঞ্জ যেতে হবে প্রথমে। এরপর মোটরসাইকেল বা সিএনজি অটোরিকশায় চড়ে (জনপ্রতি ১০০ টাকা) তাহিরপুর উপজেলা অথবা লাউড়েরগড় যেতে হবে। সেখান থেকে হেঁটে এগোলেই যাদুকাটা নদী ও বারিক্কা টিলা।

এরপর মোটরসাইকেল ভাড়া করে সীমান্ত দিয়ে টেকেরঘাট, ভাড়া জনপ্রতি ৭০-৮০ টাকা। বর্ষায় তাহিরপুর থেকে নৌকায় যাওয়ার ভাড়া জনপ্রতি ৬০-৭০ টাকা। এজন্য সময় লাগবে দুই ঘণ্টা। শুকনো মৌসুমে জনপ্রতি ১০০ টাকা ভাড়ায় মোটরসাইকেলে টেকেরঘাট যাওয়া যায়।

jagonews24

কোথায় থাকবেন ও খাবেন?

নিলাদ্রি লেকের আশেপাশে থাকার জন্য তেমন ভালো কোনো হোটেল নেই। বড়ছড়া বাজারে কয়েকটি গেস্ট হাউজ ও তাহিরপুর বাজারে দুইটি হোটেল পাবেন। আর বর্ষায় গেলে সেখানে নৌকায় থাকতে পারবেন।

খাওয়া-দাওয়া টেকেরঘাট বাজার, বড়ছড়া বাজার বা তাহিরপুর বাজারে করতে পারবেন। সেখানে বেশ কয়েকটি ভালো মানের খাবারের হোটেল পাবেন। আর নৌকা ভাড়া নিলে সেখানেই রান্নার ব্যবস্থা থাকে। সেক্ষেত্রে নৌকায় ওঠার আগে বাজার করে নিতে হবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com