শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৩ পূর্বাহ্ন

ইলন মাস্কের টেসলায় চাকরি পেলেন বাংলাদেশের শাফকাত

  • আপডেট সময় শনিবার, ২ মার্চ, ২০২৪

প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ও বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী হিসেবে পরিচিত ইলন মাস্ক, যিনি বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করে জনপ্রিয় হওয়া টেসলা মোটরসের প্রতিষ্ঠাতা। গত কয়েকবছর ধরেই বিচিত্র নানা উদ্যোগের জন্য বিশ্বজুড়ে আলোচনায় আছেন মাস্ক। তবে গণমাধ্যমে আমরা যখন এসব খবর দেখেছি, তা খানিকটা সিনেমার গল্প বলেই মনে হতো। আমরা যেন সেই জগৎ থেকে যোজন যোজন মাইল দূরে। যেমন মাত্র কয়েকবছর আগেও গুগল, মাইক্রোসফট, ইন্টেল, ফেসবুক, অ্যামাজন বা টেসলার মতো প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ পাওয়া বাংলাদেশের তরুণদের কাছে অকল্পনীয় ছিল। সেই দূরত্ব ঘুচে গেছে। এখন প্রতিবছরই অনেক তরুণ যোগ দিচ্ছেন এসব প্রতিষ্ঠানে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান টেসলায় প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগ দিয়েছেন ঢাকায় বড় হওয়া তরুণ শাফকাত হক সাদমান।

শাফকাতের বাবা-মা দুজনই চিকিৎসক। তাদের আদি নিবাস সিলেটে হলেও কর্মসূত্রে ঢাকায় বসবাস করছেন প্রায় তিন দশক ধরে। বাবা ডা. বদরুল হক গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অধ্যাপক ও পরিচালক। মা ডা. সালমা ইয়াসমিন হলিফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সাবেক অধ্যাপক। শাফকাতের একমাত্র বোন তাসমিয়া হকও বাবামায়ের পথে হেঁটে ডাক্তার হয়েছেন। তবে ছোটবেলা থেকেই শাফকাতের ইচ্ছে ছিল ভিন্ন কিছু করার।

ঢাকার সানিডেইল স্কুল থেকে ‘ও’ লেভেল এবং ওয়ার্ডব্রিজ থেকে ‘এ’ লেভেল সম্পন্ন করেন শাফকাত। ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থী হলেও বাংলায় কোনো অংশে কম ছিলেন না। ছোটবেলায় পড়ে ফেলেছেন বহু বিখ্যাত সাহিত্যিকদের উপন্যাস, থ্রিলার, ও গল্প। এছাড়া পছন্দ ছিল কাকাবাবু, ফেলুদা, চাচা চৌধুরী বা বিল্লু-পিংকি সহ অনেক চরিত্র। আর নিয়মিত বইপড়ার অভ্যাস থাকায় যেকোনোকিছু গভীরভাবে ভাবতে পটু হয়ে ওঠেন।

‘এ’ লেভেলের পর অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের মোনাশ ইউনিভার্সিটিতে ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড কম্পিউটার সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হন শাফকাত। বোনও ততদিনে অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা। বোন ও ভগ্নীপতির সঙ্গে শুরুতে কিছুদিন থাকার পর পড়াশোনার চাপ ও দূরত্বের কারণে ডরমিটরিতে চলে যেতে হয়। সেখানে নিজেই চালিয়েছেন নিজের খরচ। শেষবর্ষে পড়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে টিচিং অ্যাসোসিয়েট হিসেবেও কাজ করেছেন। এছাড়া যুক্ত ছিলেন মোনাশ নোভা রোভার টিমের সদস্য হিসেবে।

শাফকাতের ব্যাচেলরে মেজর ছিল পাওয়ার সিস্টেম অ্যান্ড লো ফ্লো ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে, আর মাইনর ছিল স্মার্ট ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের ওপর। এমন কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে চাচ্ছিলেন, যারা প্রযুক্তির খুঁটিনাটি নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি উৎপাদনে কাজ করারও অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ দেবে। ফাইনাল ইয়ার প্রজেক্টের অংশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা বিভাগের একটি প্রকল্পে কাজের সুযোগ হয় শাফকাতের। সুপারভাইজর তাকে পরামর্শ দেন ‘প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ারিং’-এ কাজ করার। সেখানে থাকা অবস্থাতেই তিনি টেসলায় চাকরির আবেদন করেন। বাছাই প্রক্রিয়া ছিল তিনটি ধাপে। দুই দফা সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে প্রযুক্তিগত জ্ঞান, দক্ষতা ও শেখার আগ্রহ যাচাই করা হয়। তৃতীয় ধাপে ছিল বাস্তবিক সমস্যা সমাধান। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা, পরিস্থিতি অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়ার ধরন যাচাই করা হয় এতে। সবশেষে প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগ দেন গেলবছরের নভেম্বরে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে শাফকাত বলেন, আপাতত ভবিষ্যৎ নিয়ে সেভাবে ভাবছি না। যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করছি, সেখানেই অন্তত কয়েকবছর কাজ করতে চাই। যা শিখব, সেই জ্ঞান কাজে লাগিয়ে একসময় নতুন কিছু করার চেষ্টা করব।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com