আফগানিস্তানে নারীদের উচ্চ শিক্ষায় নিষেধাজ্ঞার পর এবার হিজাব পরায়ও বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে ক্ষমতাসীন তালেবান সরকার। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, শুধু হিজাব পরলেই হবে না। এটি এমনভাবে পরতে হবে যেন শুধু চোখ দেখা যায়। এর বেশি দেখা গেলেই তা ‘বাজে হিজাবের’ অন্তর্ভুক্ত হবে। এই অভিযোগে ইতোমধ্যে দেশটিতে নারীদের গ্রেপ্তারও শুরু করেছে পুলিশ।
শনিবার খামা নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বাজে হিজাব’ পরার কারণে দেশটির রাজধানী কাবুলের কিছু এলাকা থেকে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে আফগান নারীদের মতে, এই কর্মকাণ্ড ব্যাপক প্রতিক্রিয়া এবং ভীতির সৃষ্টি করেছে।
গ্রেপ্তারের বিষয়ে দেশটির দোষ ও গুণ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোল্লা আব্দুল গফফার ফারুক গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এই আটকগুলো অপকর্ম ঠেকানো এবং খারাপ হিজাব প্রতিরোধ করার জন্য করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি মেয়েকে আটক করা হয়েছে।’
গত দুই থেকে তিন দিনে নারীদের সবচেয়ে বেশি গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে পশ্চিম কাবুলে। পরে ওই এলাকাগুলোতে নারীদের মাঝে গুরুতরভাবে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।
আটকের পর ছাড়া পাওয়া নারী মেজগান খামা নিউজকে জানান, কর্তৃপক্ষ তাঁকে বাজার থেকে ধরে নিয়ে যায় এবং এক দিন আটকে রাখে।
মেজগান তাঁর আটকের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘আমি এবং আমার বোন আমাদের বাড়ি থেকে কিছু কিনতে বেরিয়েছিলাম। আমরা যখন বাজারে প্রবেশ করি, তখন একটি হইচই শুরু হয়। কারণ দোষ ও গুন মন্ত্রণালয়ের লোকজন সেখানে এসে পৌঁছায়। অল্পবয়সী মেয়ে ও কিশোরীরা তখন মরিয়া হয়ে লুকানোর জায়গা খুঁজছিল।’
মেজগান জানান, উদ্ভূত পরিস্থিতির মধ্যে তিনি তাঁর বোনকে নিয়ে একটি দোকানের ভেতরে ঢুকে পড়েন। পরে দোকানের জানালা দিয়ে তিনি দেখতে পান ‘বাজে হিজাব’ পরার অভিযোগ তুলে বেশ কয়েকজন নারীকে গ্রেপ্তার করে গাড়িতে নিয়ে তোলা হচ্ছে। এ অবস্থায় তিনি সঙ্গে থাকা মোবাইল দিয়ে ঘটনাটির ভিডিও ধারণের চেষ্টা করেন। কিন্তু বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে পড়ে যায় এবং মেজগানকে তাঁরা আটকের পাশাপাশি তাঁর মোবাইলটি বাজেয়াপ্ত করা হয়।
পশ্চিম কাবুলে বসবাসকারী সাহার নামে আরেক কিশোরী বলেন, ‘আমি গার্লস স্কুলে পড়ি। মন্ত্রণালয়ের লোকেরা আমাকেও আটক করতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের প্রতিরোধ করি এবং সেখান থেকে পালিয়ে আসি।’
সাহার জানান, আটক হওয়ার ভয়ে তিনি এখন আর স্কুলে যাচ্ছেন না।
কাবুলের তাইমানি জেলার একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সেখানে উপযুক্তভাবে হিজাব পরার পরও কয়েকজন নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে স্মার্টফোন ব্যবহারের কারণে।
তবে এসব আটকের বিষয়ে দোষ ও গুন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র দাবি করেছেন, বাজে হিজাবের কারণে গ্রেপ্তারের সময় নারী পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকেন এবং নারীদের কোনো ক্ষতি করা হয় না।