শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৪ অপরাহ্ন

কলকাতা ভ্রমণ

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৩

কলকাতাকে বলা হয় “সিটি অফ জয়” অর্থাৎ আনন্দের শহর। ১২ মাসে ১৩ পার্বণের শহর কলকাতার আনন্দ করতে কোন উপলক্ষ লাগে না। এখানকার মানুষ জীবনকে উপভোগ করতে জানে। তাই জীবনকে উপভোগ করার সবকটি মাধ্যমই কলকাতায় উপস্থিত। খাবারদাবার, শপিং, সুন্দর সুন্দর ঘোরার জায়গা, আড্ডা দেয়ার জায়গা, এমনকি নিরিবিলি বসে বইয়ের পাতা উল্টানোর জায়গাও এখানে অহরহ।

আর আছে শত বছরের ঐতিহ্য। ঐতিহ্যের লড়াইয়ে কলকাতার সাথে কেউ পারবে না। কী দেখে নি এই শহর? মুঘল থেকে শুরু করে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য– যুগে যুগে সকলের মধ্যমণি ছিলো কোলকাতা। তাই শহরটিতে এখনো লেগে আছে ইতিহাসের ছাপ। এখনো শহরের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় আপনার চোখে পড়বে ইতিহাসের নিদর্শন। মনে পড়ে যাবে শহরটির জৌলুসের কথা, সেই সাথে এ শহরের মানুষের রক্তাক্ত আত্মত্যাগের কথাও।

তাই চলুন আর দেরি না করে ঘুরে আসি কলকাতা ভ্রমণ স্থানগুলো থেকে যা থাকবে আমাদের এই কলকাতা ভ্রমণ গাইডের মূল অংশ জুড়ে। 

কলকাতা ভ্রমণ গাইডঃ কলকাতার দর্শনীয় স্থানসমূহ 

কলকাতার দর্শনীয় স্থানসমূহ নিম্নরুপঃ

কলকাতা নিউ মার্কেট ভ্রমণ ও কেনাকাটা

কলকাতা ভ্রমণ গাইডে সবার প্রথমে থাকছে কলকাতা নিউ মার্কেট। বাংলাদেশিদের কাছে কলকাতার অন্যতম প্রধান আকর্ষণ নিউ মার্কেটে কেনাকাটা। প্রতি বছর হাজার হাজার বাংলাদেশি কলকাতা ভ্রমণ করেন শুধুমাত্র কেনাকাটার উদ্দেশ্যে। তাদের উদ্দেশ্য থাকে নিউ মার্কেটের আশেপাশে কোথাও অবস্থান করে দেশের তুলনায় অনেক কমে ঈদ, বিয়ে সহ অন্যান্য উপলক্ষে কেনাকাটা করা। বিশেষত ঈদকে কেন্দ্র করে প্রচুর পর্যটক বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় আসেন।  

কলকাতা নিউ মার্কেট এ শহরের সর্বপ্রথম মার্কেট যা ১৮৭৩ সালে ব্রিটিশদের দ্বারা তৈরি। একে “হগ সাহেবের মার্কেট” ও বলা হয়। মার্কেটটি ভিক্টোরিয়ান গথিক স্থাপত্যশৈলীর অনুকরণে তৈরি। বর্তমানে মার্কেটটি ও এর আশপাশ কলকাতা শহরের ব্যস্ততম এলাকা হিসেবে পরিচিত। নিউ মার্কেটের সামনের ফুটপাথে কয়েকশো হকার অবস্থান করে তাদের পণ্য নিয়ে। যার কারণে এলাকাটিতে সবসময়ই ভিড় লেগে থাকে। এখানে সব রকম জিনিসপত্র অনেক কম মূল্যে পাওয়া যায়। কিন্তু প্রচুর দামাদামি করতে হবে।

মেট্রোতে করে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল ভ্রমণ

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল বিশ্বব্যাপী পর্যটকদের কাছে কলকাতার অন্যতম আকর্ষণ। কলকাতার আরেকটি বিখ্যাত জায়গা “ময়দান” এর কাছেই অবস্থিত ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। ১৯০১ সালে রানী ভিক্টোরিয়ার মৃত্যুর পর তার স্মৃতিকে সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যে লর্ড কার্জনের প্রস্তাবে নির্মিত হয় এই স্মৃতিসৌধটি। আগাগোড়া মার্বেল পাথরে তৈরি ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল ইন্দো-সারাসেনিক স্থাপত্যশৈলীর আদলে নির্মিত যা কিনা ইউরোপিয়ান, ভারতীয়, এবং মধ্যপ্রাচ্যের স্থাপত্যশৈলীর মিশ্রণে তৈরি।

মেমোরিয়ালের ভেতরটা জাদুঘরে পরিণত করা হয়েছে যাতে ভারতের ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন ও এর পেছনে কান্ডারিদের নিদর্শন ও স্মৃতিফলক রয়েছে। বর্তমানে এটি ভারতের সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে। বাংলাদেশিদের জন্য ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের টিকেট মূল্য ১০০ রুপি।

ঘুরে আসুন সেইন্ট পল’স ক্যাথিড্রাল থেকে

কলকাতা ভ্রমণ গাইডে আমাদের পরবর্তি দর্শনীয় স্থান সেইন্ট পল’স ক্যাথিড্রাল। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল এর কাছেই এটি অবস্থিত। ১৮৪৭ সালে ব্রিটিশদের তৈরি প্রথম ও কলকাতার ৩য় খ্রিষ্টান ক্যাথলিক চার্চ এই সেইন্ট পল’স ক্যাথিড্রাল। ক্যাথিড্রালটি খ্রিস্টধর্ম প্রচারক পলের প্রতি উৎসর্গকৃত। এর নজরকাড়া ইন্দো-গথিক স্থাপত্যশৈলী অত্যন্ত সুন্দর ও কারুকার্যময়।  

ক্যাথিড্রালটির আশেপাশে রয়েছে বিড়লা প্ল্যানেটোরিয়াম, রবীন্দ্র সদন কমপ্লেক্সকলকাতা ফাইন আর্টস একাডেমী। হাওড়া বা শিয়ালদা স্টেশন থেকে বাসে বা মেট্রোতে করে রবীন্দ্র সদন বা ময়দানে গিয়ে কিছুক্ষণ হাঁটলেই পৌছে যাবেন সেইন্ট পল’স ক্যথিড্রালে।  

ইয়েলো ক্যাবে চড়ে হাওড়া ব্রিজ ভ্রমণ

হাওড়া ব্রিজ কলকাতার ঐতিহ্যবাহী সেতু। হুগলি নদীর ওপর অবস্থিত এই সেতুটি হাওড়া ও কলকাতাকে সংযুক্ত করেছে। হাওড়া ব্রিজকে রবীন্দ্র সেতুও বলা হয়। প্রতিদিন গড়ে দেড় লাখ মানুষ ও এক লাখ যানবাহন সেতুটি অতিক্রম করে। সেতুটির প্রধান বৈশিষ্ট্য এটি কোনরকম নাট বল্টু ছাড়াই পুরোপুরি ষ্টীলের তৈরি। হাওড়া ব্রিজ আর কলকাতা একে অপরের পরিপূরক। কলকাতা এসে হাওড়া ব্রিজ দেখেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।

ইয়েলো ক্যাব কলকাতার সর্বত্র দেখা যায়। এটি হাওড়া ব্রিজের মতোই কলকাতার আরেক ঐতিহ্য। কলকাতার এই বিখ্যাত ইয়েলো ক্যাবে করে হাওড়া ব্রিজ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা অনেকদিন মনে রাখার মতো। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল দেখা শেষ করে ১০০ টাকায় একটি ইয়েলো ক্যাব ভাড়া করে হাওড়া ব্রিজ দেখতে চলে যেতে পারেন।

ট্রামে করে কলকাতা ভ্রমণ

কলকাতা যাবেন আর ট্রামে চড়বেন না তা কী হয়? কলকাতার ঐতিহ্যবাহী ট্রাম চলা শুরু করে ১৮৭৩ সালে। ১৯০০ সালে প্রথম ট্রামগুলো বিদ্যুতায়িত হয়। ১৯০২ সাল থেকে কলকাতার রাস্তায় নিয়মিত বিদ্যুৎচালিত ট্রাম চলতে দেখা যায়। এশিয়ার মধ্যে কলকাতাই একমাত্র শহর যেখানে এখনো ট্রাম চলে। ট্রামের মূল সুবিধা এগুলো পরিবেশ-বান্ধব – প্রকৃতির ক্ষতি করে না।

যদিও ধীরগতির কারণে লোকালদের মধ্যে ট্রামের জনপ্রিয়তা দিন দিন হ্রাস পেতে শুরু করেছে, পর্যটকেরা কিন্তু কলকাতা এলে একবার হলেও ট্রামে চড়ে যান। পর্যটকদের কথা ভেবেই ট্রামগুলো শীতাতপনিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে। পাশাপাশি পুরোনোদিনের ট্রামও কয়েকটি আছে। নন-এসি ট্রামের ভাড়া ১০ রুপি আর এসি ট্রামের ভাড়া ২০ রুপি। আপনার কলকাতা ভ্রমণ খরচ অনেক কমে যাবে যদি আপনি ট্রামে করে দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরতে যান। 

মল্লিক ঘাট ফুলের বাজার ভ্রমণ, ছবি তোলা ও ফুল কেনা

কলকাতা ভ্রমণ গাইডে আমাদের পরবর্তী সংযোজন মল্লিক ঘাট ফুলের বাজার। হাওড়া ব্রিজের ঠিক নীচে হুগলী নদীর পাশেই মল্লিক ঘাট অবস্থিত। ১৩০ বছর পুরোনো মল্লিক ঘাটের ফুল বাজার থেকে পুরো ভারতে এমনকি ইউরোপেও ফুল আমদানি হয়। ২,০০০ এর ওপর বিক্রেতা প্রতিদিন এখানে ফুল বিক্রি করতে আসেন।

সকাল ৭টার মধ্যে আসলে আপনি এই জায়গার আসল সৌন্দর্য দেখতে পাবেন। সকালবেলা তাজা ফুলের সৌরভে বিমোহিত হয়ে যায় চারপাশ। আশেপাশের এলাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মন্দিরগুলো থেকে সাতসকালেই লোক এসে পূজার ফুল নিয়ে যায়। ফটোগ্রাফারদের জন্য বিষয় এর কোন অভাব নেই এখানে। ইন্সটাগ্রামাররাও নির্দ্বিধায় চলে আসতে পারেন আর ভরিয়ে ফেলতে পারেন আপনার ইন্সটাগ্রাম সুন্দর সুন্দর ফুলের ছবিতে।

 অবসর সময়ে কলেজ স্ট্রিটে গিয়ে বই এর পাতা উল্টানো

কলকাতার কলেজ স্ট্রিট এর “বই পাড়া” বিশ্বের সবচেয়ে বড় বই এর বাজার। দেড় কিলোমিটার জায়গা নিয়ে অবস্থিত এই বাজারে পাওয়া যায় না এমন কোন বই নেই। বাজারটি মূলত রাস্তার পাশে ভাসমান বই এর দোকান নিয়ে গঠিত। এছাড়া বড় বড় পাবলিশিং কোম্পানীর আউটলেট ও আছে এখানে।

দেশ বিদেশের হাজার হাজার বই এর বাসস্থান এই বই পাড়া। এখানে নামমাত্র মূল্যে বই পাওয়া যায়।বই পাড়ার এক একটি দোকানে ২০,০০০ – ৩০,০০০ করে বই আছে। অবসর সময়ে অনেকেই এখানে বই পড়তে চলে আসেন। কথিত আছে, নোবেল প্রাইজ প্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন ছাত্রাবস্থায় কলেজ স্ট্রিটে বইয়ের দোকানে বসে বই পড়তেন।

ঢুঁ মেরে আসুন কফি হাউজে

কলেজ স্ট্রীট বই পাড়ার কাছেই ইন্ডিয়ান কফি হাউজ অবস্থিত। মান্না দে’র “কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই” গানটি শোনেননি এমন কোন বাঙালি নেই। ধারণা করা হয় মান্না দে এই কফি হাউজ নিয়েই গেয়েছেন গানটি। ১৯৪১-৪২ সালের দিকে কফি হাউজের জন্ম। এরপর থেকেই কলকাতার তাবৎ শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদদের আতুড়ঘর। কলকাতার ইতিহাসের সাথে কফি হাউজ ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজের অপরদিকে উল্টোদিকের কফি হাউজে নিয়মিত বাঙালি বুদ্ধিজীবী গোষ্ঠীর একটি বড় অংশ আড্ডা বসতো যার মধ্যমণি ছিলো প্রেসিডেন্সি কলেজে্র শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও কফি হাউজের আড্ডায় প্রায়ই দেখা যেত দিগ্বিজয়ী ব্যক্তিত্ব নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সত্যজিৎ রায়, জগদীশ চন্দ্র বোস, অমর্ত্য সেন, ঋত্বিক ঘটক, অপর্ণা সেন, প্রমুখকে। 

তাই এই স্বনামধন্য কফি হাউজে বসে এক কাপ চা খেতে খেতে চারপাশের পরিবেশ উপভোগ করার সুযোগ মিস করতে না চাইলে আপনিও চলে যান কফি হাউজে।   

ইতিহাসের খোঁজে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে

জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির বর্ণনা ছাড়া আমাদের কলকাতা ভ্রমণ গাইড অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে। ঠাকুরবাড়ির নাম শোনেন নি এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া যাবে না। ঠাকুরাড়ি নিয়ে সাধারন মানুষের কৌতূহলের কমতি ছিলো না কখনো। এই পরিবারেই জন্ম দ্বারকানাথ ঠাকুরের মতো তুখোড় উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীর, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো দার্শনিক ও ধর্মপ্রচারকের, এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো কালজয়ী কবি ও সাহিত্যিকের। এদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যিনি প্রথম এশীয় হিসেবে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। 

কলকাতার উচ্চবিত্ত পরিবারগুলোর মধ্যে ঠাকুর পরিবার ছিলো অন্যতম। প্রতিদিন সন্ধ্যায় জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে বসতো কলকাতার নামিদামী ব্যক্তিবর্গের মেলা। শুধু কলকাতাই নয়, পুরো ভারত থেকে এমনকি ব্রিটিশ সরকারের প্রতিনিধিরাও ঠাকুরবাড়িতে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে আসতেন। সাহিত্যিক, শিল্পী, বুদ্ধিজীবী, চিন্তাবিদ ও রাজনীতিবিদদের নিয়মিত আনাগোনায় মুখর থাকতো ঠাকুরবাড়ির আঙ্গিনা।

বর্তমানে বাড়িটি রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভেতর অবস্থিত। বাড়ির ভেতর প্রবেশের জন্য জনসাধারণকে টিকেট কেটে ঢুকতে হয়। ভেতরে ঢুকলে দেখতে পাবেন ঠাকুরবাড়ির সদস্যদের নানারকম ছবি, প্রতিকৃতি, বাবহৃত জিনিস ও আসাবপত্র ইত্যাদি।

মনোমুগ্ধকর মার্বেল প্যালেস ভ্রমণ

চিত্তরঞ্জন এভিনিউতে অবস্থিত রাজা রাজেন্দ্র মল্লিক এর প্রাসাদতুল্য জমিদার বাড়ি মার্বেল প্যালেস। এটি জোড়াসাঁকো থেকে মাত্র ১০ মিনিটের দূরত্বে অবস্থিত। ১২৬ রকমের শ্বেতপাথরে তৈরি বিলাসবহুল মার্বেল প্যালেসের পরতে পরতে সৌন্দর্য আর ঐশ্বর্য।

রাজা রাজেন্দ্র মল্লিক শিল্পর সমঝদার ও সংগ্রহক ছিলেন। তার সংগ্রহে ছিলো মার্বেল প্যালেসে বিশ্বের আনাচ কানাচ থেকে আনা বিখ্যাত শিল্পকর্ম যেমন বিখ্যাত চিত্রকর রুবেন্স এর দুটি ও সেবাস্তিয়ানের আঁকা দুটি চিত্রকর্ম, কাঠের ও মার্বেলের ভাস্কর্য, অলংকৃত ফরাসি ঘড়ি, বেলজিয়ামের আয়না, কাঁচের প্রাচীন আসবাবপত্র ও মর্মর মূর্তি রয়েছে। 

প্রাসাদ প্রাঙ্গণে একটি জগন্নাথের মন্দির রয়েছে যা শুধু মল্লিক পরিবারের সদস্যগণ এর জন্য খোলা। এছাড়াও মার্বেল প্যালেসে রয়েছে কলকাতার একমাত্র ব্যক্তিগত মালিকানাধীন চিড়িয়াখানা। এককালে এখানে অনেক ধরণের বন্য প্রানী ছিলো। কালের বিবর্তনে চিড়িয়াখানায় শুধু কয়েক প্রজাতির পাখিই রয়ে গেছে। 

মার্বেল প্যালেস ব্যক্তিগত মালিকানাধীন যার কারণে এখানে সব ধরণের ফটোগ্রাফি নিষিদ্ধ। রাজেন্দ্র মল্লিকের বংশধরেরা এখনো এই বাড়িতে অবস্থান করছেন। তাদের অনুমতি সাপেক্ষে প্রাসাদটি বিনামূল্যে নির্দিষ্ট কিছু সময়ের জন্য ঘুরে দেখার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সেজন্য কমপক্ষে ২৪ ঘন্টা আগে পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন তথ্য ব্যুরো’র কাছ থেকে অনুমতিপত্র গ্রহণ করা লাগে।

রাতের পার্ক স্ট্রিট উপভোগ

পার্ক স্ট্রিট কলকাতার একটি ঐতিহাসিক রাস্তা যেখানে গুরুত্বপূর্ণ কিছু দালানকাঠামো রয়েছে যার মধ্যে অন্যতম সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ, লরেটো কলেজ, এশিয়াটিক সোসাইটি, সাউথ পার্ক স্ট্রিট সেমিট্রি, আলিয়জ ফ্রাঁসেজ দ্যু বেঙ্গলদ্যা পার্ক হোটেল

এর মধ্যে সাউথ পার্ক স্ট্রিট গোরস্থান পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয় কারণ এখানে প্রচুর বিখ্যাত ব্রিটিশ ও ইউরোপিয়ান ব্যক্তির নামফলক খচিত কবর রয়েছে। গোরস্থানটি ভারতের অন্যতম ভুতুড়ে জায়গা হিসেবেও পরিচিত। তাই অনেকেই এখানে কৌতূহল নিবারণ ও ভূত-প্রেত দেখার আশা নিয়ে এসে থাকেন।

রাতের পার্ক স্ট্রিটের সৌন্দর্যই আলাদা। সেই ব্রিটিশদের সময় থেকেই রাতেরবেলা পার্ক স্ট্রিটে বসে বিনোদনের পসরা। কলকাতার সবচেয়ে বিখ্যাত কিছু রেস্টুরেন্ট ও নাইটক্লাব পার্ক স্ট্রিট আলো করে থাকে। তাই রাতের ডিনার করার জন্য ভালো জায়গা খুঁজলে চলে যান তৃনকা, পিটার ক্যাট, ওলি পাব, মোক্যাম্বো, ব্লু ফক্স, অথবা মওলিন রোজ এ। বিশেষ দিনগুলোতে যেমন ক্রিসমাস, দিপাবলি ও নিউ ইয়ার ইভ এ পার্ক স্ট্রিট ঝলমলে রুপে হাজির হয়।

প্রিন্সেপ ঘাটে একটি সন্ধ্যা

কলকাতা ভ্রমণ গাইডের দর্শনীয় স্থানের তালিকায় আমাদের সর্বশেষ সংযোজন প্রিন্সেপ ঘাট। ১৮৪১ সালে ব্রিটিশ রাজের সময়কালীন বিশিষ্ট পন্ডিত ও বুদ্ধিজীবী জেমস প্রিন্সেপ এর স্মৃতিতে তৈরি প্রিন্সেপ ঘাট মেমোরিয়ালটি হুগলি নদীর পাড়ে অবস্থিত। প্যালাডিয়ান পোর্চ ধাঁচে তৈরি প্রিন্সেপ ঘাটে সন্ধ্যেবেলা সুন্দর বাতি জ্বলে যা এর সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দেয়।

ব্যস্ততম শহর কলকাতায় প্রিন্সেপ ঘাট যেন এক টুকরো স্বস্তির হাওয়া বইয়ে দেয়। এটি কলকাতার অনেক পুরোনো একটি বিনোদনের জায়গা যেখানে মানুষ একটু শান্তির খোঁজে আসে। এখানে এসে আপনি নদীর ধারে বসে একটু জিরিয়ে নিতে পারেন বা পাড় ঘেষে হাঁটতে পারেন। চাইলে বোটে করে নদীর মাঝখান থেকে ঘুরেও আসতে পারেন।

কলকাতার বিখ্যাত খাবার কি কি?

খাবারের ব্যপারে কলকাতা অনেক বৈচিত্র্যপূর্ণ। কলকাতার সবচেয়ে পরিচিত খাবার থালিতে করে ভাতের সাথে নানান পদের সমাহার। এই পদগুলোর মধ্যে বিরিয়ানি, মাছের ঝোল, লুচি-আলুর দম, সুক্তো, কাবাব, মোচার ঘন্ট, ইত্যাদি অন্যতম। কলকাতার বিরিয়ানি রেস্টুরেন্টগুলোর মধ্যে আমিনিয়া বিরিয়ানি সবচেয়ে বিখ্যাত। সুযোগ পেলে এখানকার বিরিয়ানির স্বাদ নিতে ভুলবেন না।

কলকাতা বিখ্যাত স্ট্রিট ফুডের জন্য। আমাদের দেশের মতোই ফুচকা আর পানিপুরি কলকাতার ইয়াং জেনারেশনের সবচেয়ে প্রিয় স্ট্রিট ফুড। তাছাড়া মোমো, ডামপ্লিং, তেলেভাজা, ঘুগনি চাট, ডিমের ডেভিল, দুধ ছোলা, ঝালমুড়ি ও জালেবি এখানকার অন্যতম স্ট্রিট ফুড। সন্ধায় ঘুরতে বের হলে এই মজার মজার খাবারগুলো ট্রাই করে দেখবেন।

কলকাতা ভ্রমণ টিপসঃ কলকাতা ভ্রমণের সেরা সময় কখন?

শীতকাল কলকাতা ভ্রমণের সেরা সময়। অক্টোবর থেকে মার্চের মধ্যে কলকাতা ভ্রমণ করলে শুষ্ক, নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া পাবেন। গরমকালে কলকাতার আবহাওয়া খুবই গরম থাকে এবং আবহাওয়ায়

জলীয় বাষ্প অনেক বেশি থাকে। অত্যধিক তাপমাত্রার কারনে দর্শনীয় স্থানগুলোতে ঘোরা যায় না। তাই গরমকালটা অ্যাভয়েড করার চেষ্টা করবেন।

কলকাতা ভ্রমণ টিপসঃ কলকাতা ভ্রমণে কোথায় থাকবেন?

বাংলাদেশী পর্যটকেরা কলকাতা গেলে সাধারণত নিউ মার্কেটের আশেপাশে থাকতে পছন্দ করেন। নিউ মার্কেটের আশেপাশের এলাকায় পর্যটকদের জন্য অসংখ্য হোটেল রয়েছে। কম খরচে কলকাতা ভ্রমণ করতে চাইলে ১০০০-২০০০ রুপীর মধ্যে মোটামুটি ভালো রুম পাওয়া যায়। আরেকটু ভালো হোটেলে থাকতে চাইলে আপনাকে খরচ করতে হবে ৩,০০০-৫০০০ টাকা। 

নিউ মার্কেট এসে আশেপাশে একটু খুঁজলেই দামাদামি করে ভালো হোটেল পাওয়া যায়। তবে সবচেয়ে ভালো হয় আগে থেকে বুকিং দিয়ে রাখতে পারলে। একটু সময় নিয়ে নেটে সার্চ দিয়ে বেশ কয়েকটা হোটেলের রিভিউ দেখে ও বাজেট মিলিয়ে হোটেল সিলেক্ট করবেন। কলকাতা পৌছানোর কমপক্ষে এক সপ্তাহ আগে হোটেল বুকিং দিয়ে রাখলে পৌঁছানোর পর অহেতুক ভোগান্তি পোহাতে হয় না।

কলকাতা ভ্রমণ টিপসঃ কলকাতা যাবেন কিভাবে?

কলকাতা ভ্রমণ গাইডের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সবসময়ই– “কলকাতা কিভাবে যাবো?”

প্রধানত ৩ উপায়ে কলকাতা যাওয়া যায়। ট্রেন, বাস ও প্লেন। নিম্নে ৩টি উপায় বর্ণনা করা হলোঃ

মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন

আন্তর্জাতিক মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন ঢাকা থেকে কলকাতা ভ্রমণ অনেক সহজ ও সাশ্রয়ী করে দিয়েছে। এটি প্রতি শুক্র ও রবিবার ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে কলকাতার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ট্রেনে করে কলকাতা পৌঁছাতে লাগে প্রায় ৩৪ ঘন্টা। ট্রাভেল ট্যাক্স সহ ভাড়াঃ

এসি চেয়ার কার ৩,৫০০ টাকা থেকে শুরু

এসি কেবিন ২,৫০০ টাকা থেকে শুরু

বাসে করে ঢাকা – কলকাতা

ঢাকা থেকে কলকাতার দূরত্ব সড়কপথে ৩৩৩.৮ কিলোমিটার। বাসে করে কলকাতা যেতে সময় লাগে প্রায় ১০-১২ ঘন্টা। বাসে করে কলকাতা যেতে চাইলে আপনাকে আগেভাগে টিকেট কাটতে হবে। আপনি চাইলে সহজ অ্যাপ ইউজ করে কলকাতার টিকেট কাটতে পারেন অথবা সরাসরি শ্যামলী পরিবহন, সোহাগ পরিবহন, গ্রীন লাইন পরিবহন, রয়্যাল কোচ, দেশ ট্রাভেলস, বা সৌদিয়া কোচ সার্ভিসের কাউন্টারে গিয়েও টিকেট কেটে আসতে পারেন।

টিকেট মূল্য ৮৭০ – ১,৯০০ টাকার মধ্যে পড়বে।

ঢাকা – কলকাতা ফ্লাইট

কলকাতা ট্যুরে আপনি যদি আপনার মূল্যবান সময় ও শ্রম বাঁচাতে চান আর সেইসাথে আরামদায়ক ভ্রমণ নিশ্চিত করতে চান তবে সবচেয়ে ভালো উপায় প্লেনে করে যাওয়া। প্লেনে করে কলকাতা যেতে মাত্র ১ ঘন্টার মতো লাগে। প্রতি সপ্তাহে বিমান বাংলাদেশ, নভো এয়ার, ও ইউ এস বাংলার ৩৮টি ফ্লাইট ঢাকা – কলকাতা যাওয়া আসা করে। ফ্লাইট এক্সপার্ট দিচ্ছে সবচেয়ে সাশ্রয়ী মূল্যে ঢাকা – কলকাতা ফ্লাইট। প্লেনের টিকেট যত আগে করবেন তত কম ভাড়া পড়বে। তাই দেরী না করে এখনই প্লেনের টিকেটটা করে ফেলুন ফ্লাইট এক্সপার্ট এর সাথে। 

ঢাকা – কলকাতা প্লেন ভাড়া শুরু হয় ৬,৭০০ টাকা থেকে (ইকোনমি ক্লাসের)।

শেষ কথা

আশা করি কলকাতা ভ্রমণ গাইডে আমরা কলকাতা ভ্রমণ সম্পর্কিত সব তথ্য দিতে পেরেছি। ঢাকা থেকে কলকাতা বিমান ভাড়া কত জানতে কল করুন +৮৮-০৯৬১৭-১১১-৮৮৮ নাম্বারে বা ভিজিট করুন flightexpert.com। ইন্ডিয়ান ভিসা ও হোটল বুকিং সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে উপরোক্ত নাম্বারে কল করুন অথবা ইমেইলে যোগাযোগ করুন

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com