রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৫ অপরাহ্ন

ভিসা ছাড়াই যেতে পারবেন ভুটান

  • আপডেট সময় শনিবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৩

দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তিপ্রিয় দেশ হিসেবে ভুটানের খুব সুনাম রয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশে হিমালয় পর্বতমালার পূর্বাংশে উত্তরে চীনের তিব্বত অঞ্চল ও তিন দিকে ভারত পরিবেষ্টিত এ দেশটিতে ভিসা ছাড়াই বাংলাদেশিরা যেতে পরেন। অনেক কম খরচেই ঘুরে আসা যায় হিমালয়ের কোল ঘেঁষা দেশটি থেকে। 

ভিসা না লাগলেও ভুটানে ঢুকতে আপনার এন্ট্রি পারমিটের প্রয়োজন পড়বে। এই পারমিটই ভিসার কাজ করে। আকাশ পথে ভুটান গেলে, দেশটিতে অবতরণের পরপরই অন এরাইভাল ভিসায় শুধুমাত্র থিম্পু, ফুয়েন্টশোলিং এবং পারো শহর যাওয়া যায়। অন্য শহরে যেতে চাইলে নতুন করে পারমিটের প্রয়োজন হয়। তবে বাংলাদেশিদের ভুটানে প্রবেশ ফি র্পূবে প্রযোজ্য না হলেও এখন ১০৫ ডলারের বেশি ফি দিতে হয়। সেখানে অন্য দেশের নাগরিকদের জন্য প্রতিদিন ২৫০ ডলারের বেশি ফি দিতে হয়।

ভুটানের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ কেন্দ্র ‘টাইগার্স নেস্ট’- সংগৃহীত

ভুটানের শহর আর পথঘাট মুগ্ধ করার মতো। উঁচু-নিচু পথ, দু’ধারে প্রাচীন রীতির বাড়ি। একে পরিচ্ছন্ন তাতে যানজট নেই। ট্রাফিক পুলিশ ১০০ বছর আগের মতো হাতের ইশারায় নিয়ন্ত্রণ করে যানবাহন। নেই কোন হর্নের শব্দ, নেই কোলাহল। ছবির পোস্টকার্ডের মতো ছিমছাম এই দেশে যাওয়ার উদ্দেশ্য শুধু মাত্র তার নৈসর্গিক দৃশ্য উপভোগ করা নয়। জিএনপি-তে (গ্রস ন্যাশনাল প্রডাক্ট) নয়, ভুটান মনে প্রাণে বিশ্বাস করে জিএনএইচ-এ (গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস)। দেশের রাজা থেকে সাধারণ মানুষ, সকলের একটাই উদ্দেশ্য। তা হল আনন্দে থাকা, সুখে থাকা। এই ছোট্ট দেশটার কাছে মহাদেশগুলো হেরে গিয়েছে দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের দৌড়ে।

ভারত ও চীনের মাঝে থাকার কারণে ভুটানের গুরুত্বও বেশ। ভারতে আসার পর ডিউক এবং ডাচেস অব ক্যামব্রিজ ভুটানে ঘুরতে যান। হিমালয়ের এই ছোট রাজ্যটি সম্পর্কে বিশ্ববাসী খুব কমই যানেন।

পারো বিমানবন্দর- সংগৃহীত

ভুটান সম্পর্কে বলতে গেলে, এটা বহির্বিশ্ব থেকে অন্যদের তুলনায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। ব্রিটেনের সঙ্গে এর কোনো আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। নিজেদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের লালনে এরা বহির্বিশ্ব থেকে আলাদা রাখতেই পছন্দ করে। ১৯৯৯ সালে প্রথম দেশটিতে ইন্টারনেট ও টেলিভিশনের অনুমতি দেওয়া হয়। ১৯৭০-এর দশকে প্রথমবার বিদেশ পর্যটকদের প্রবেশে অনুমতি দেওয়া হয়।

দেশটির রাজধানী থিম্পুতে স্মার্টফোন ও কারাওকে বারের সংখ্যা দ্রুত হারে বাড়ছে। তরুণ প্রজন্ম এবং জনসংখ্যার অধিকাংশ সোশাল মিডিয়া ব্যাপকভাবে গ্রহণ করেছেন। এতে চলাফেরা ও ফ্যাশন ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। রাজনীতি নিয়ে অনেক খোলামেলা আলোচনাও হয়ে থাকে। বিছিন্ন মনোভাব থাকলেও কিছু আন্তর্জাতিক ইস্যুতে তারা যথেষ্ট এগিয়ে। যেমন- ১৯৯৯ সাল থেকে পলিথিন নিষিদ্ধ করা হয়। তা ছাড়া তামাক সেখানে পুরোপুরি অবৈধ। দেশটির ৬০ শতাংশজুড়ে বনভূমি।

এর জনসংখ্যা সাড়ে সাত লাখ। ভূখণ্ড ৩৮ হাজার ৩৬৪ বর্গ কিলোমিটার। প্রধান ভাষা জঙ্ঘা। রাষ্ট্রধর্ম বৌদ্ধ। এ ছাড়া হিন্দু ধর্মও রয়েছে। গড় আয়ু পুরুষের ৬৬ বছর এবং নারীর ৭০ বছর। রপ্তানিযোগ্য পণ্য হলো হাইড্রোলিক পাওয়ারের মাধ্যমে ভারতে বিদ্যুৎ সরবরাহ, কাঠ, সিমেন্ট, কৃষিপণ্য এবং হস্তশিল্প।

ছাগল-জাতীয় ‘টাকিন’ নামক এ প্রাণীটি ভুটানের জাতীয় পশু- সংগৃহীত

তবে সবাই সুখী নন। ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত দাসপ্রথা প্রচলিত ছিল। তিব্বতীয় সংস্কৃতির সংখ্যগরিষ্ঠ ভুটানিদের সঙ্গে সংখ্যালঘু নেপালিদের সংঘর্ষ ঘটে ১৯৯০ সালের দিকে। নেপালিদের হাজার হাজার মানুষ নেপালের রিফুজি ক্যাম্পে ছুটে যান।

জনগণ দেশের রাজাকে দারুণ ভালোবাসে। ২০০৬ সালে ক্ষমতায় আসেন রাজা জিগমে খেসার ওয়াংচুক। তার সময় থেকে রাজনীতিতে নাটকীয় পরিবর্তনা আসতে থাকে। এ পরিবর্তন তার বাবার সময় থেকে শুরু হয়। যখন ১৯৫৮ সালে তিনি তার গুরুত্বপূর্ণ কিছু ক্ষমতা ত্যাগ করেন। বর্তমানে সরকারের সব অংশে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২০০৮ সালে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দুটো দল অংশ নেয়। রাজ পরিবার সংশ্লিষ্ট ভুটান পিস অ্যান্ড প্রোসপারিটি পার্টি (ডিপিটি) এতে জয়লাভ করে। ২০১৩ সালের দ্বিতীয় নির্বাচনে জয় পায় বিরোধী দল পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডিপি)।

বর্তমান রাজা আমেরিকা ও ব্রিটেনে লেখাপড়া করেছেন। ২০১১ সালে তিনি বিয়ে করেছেন। ভুটানের বর্তমান রানি জেটসান পেমা। এই দুজন মানুষ গোটা ভুটানে সবার ভালোবাসার পাত্র। ভুটানবাসী প্রচুর গাছ লাগাতে পছন্দ করেন। রাজা-রানির প্রথম সন্তানের জন্ম জনগণ পালন করে ১ লাখ ৮ হাজার গাছ লাগিয়ে। গাছ তাদের কাছে দীর্ঘ জীবন, সৌন্দর্য এবং সহমর্মিতার প্রতীক। ২০১৫ সালে মাত্র ১ ঘণ্টায় ৫০ হাজার গাছের চারা লাগিয়ে ভুটান গিনেস রেকর্ড বুকে স্থান করে নেয়।

বাহারি পাতা- সংগৃহীত

প্রশাসনিক তৎপরতা বেশ ভালো। করোনার এ মহামারীতেও প্রশংসা কুড়াছে দেশটির সরকার। টানা তিন মাসের বেশি সময় ধরে করোনা প্রতিরোধ লড়াইতে চমক দিয়েছে ভুটান। এখনও পর্যন্ত কোনও মৃত্যুর পরিসংখ্যান আসেনি। এমনই করোনায় মৃত্যুহীন দেশে চলতি মাসের মাঝামাঝিতে দেশ জুড়ে লকডাউন শুরু হয়েছে। কড়া নিয়মের দেশ ভুটান করোনা প্রতিরোধ লড়াইতে বিশ্বজুড়ে চাঞ্চল্য ফেলেছে আগেই। ওয়ার্ল্ডোমিটার এবং রয়্যাল ভুটান স্বাস্থ্য মন্ত্রকের হিসেবে ২১ আগস্ট পর্যন্ত দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত ১৫৩ জন। সুস্থ হয়েছেন ১০৮ জন। সুস্থতা ৯০ শতাংশ। এমনই বড় সফলতার পরও বাড়তি সর্তকতার জন্য লকডাউন করা হয়েছে দেশটি।

পৌরাণিক কাহিনিতে ঠাসা ভুটানের শুরুর ইতিহাস। ধারণা করা হয়, খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ বছর আগেও এর অস্থিত্ব ছিল। কেউ কেউ বলেন, কুচবিহারের রাজা সঙ্গলদ্বীপ ৭ম শতাব্দিতে রাজত্ব চালান। তবে এ ধারণাটা স্পষ্ট নয়। বিশেষ করে ৯ম শতাব্দিতে তিব্বতী বৌদ্ধ সন্ন্যাসিরা পালিয়ে আসার আগে এমনটি অস্বচ্ছ ধারণা ছিল। ভুটানে বৌদ্ধধর্মালম্বীদের একছত্র আধিপাত্য। দেশটির ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ইতিহাস অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। ভুটান কখনো বাইরের কোনো রাষ্ট্র দ্বারা শাসিত হয়নি। ভুটান জাতিসংঘের সদস্য পদ লাভ করে ১৯৭১ সালে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com