বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০২১ সালের জন্য সারাদেশ থেকে তিনটি ক্যাটাগরিতে মোট ৮৫ জন প্রবাসী বাংলাদেশিকে সিআইপি (বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি) নির্বাচিত করেছে সরকার। যেখানে ৩১ জনই সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী। তারা যেমন বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে এই স্বীকৃতি অর্জন করেছেন, তেমনি নিজেদের প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রেরণে অনুপ্রেণিত করছেন।
৮৫ জনের মধ্যে ‘বাংলাদেশে শিল্পক্ষেত্রে সরাসরি বিনিয়োগকারী অনিবাসী বাংলাদেশি’ ক্যাটাগরিতে একজন, ‘বাংলাদেশে বৈধ চ্যানেলে সর্বাধিক বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণকারী অনাবাসী বাংলাদেশি’ ক্যাটাগরিতে (৭৪) জন ও ‘বিদেশে বাংলাদেশি পণ্যের আমদানিকারক অনাবাসী বাংলাদেশি’ ক্যাটাগরিতে ১০ জনকে বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা সিআইপি নির্বাচিত করা হয়েছে।
সিআইপিরা বলছেন, এ তালিকা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করা গেলে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রেরণে প্রতিযোগিতা বাড়বে। অন্তত এ সংখ্যা এক হাজারে উন্নীত করার দাবি করেন তারা।
নির্বাচিত সিআইপিরা দেশটিতে নানা ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। তাদের অধীনে কাজ করছেন দেশি-বিদেশি শত শত শ্রমিক। নিজেদের প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদেরও বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রেরণের জন্য উৎসাহিত করছেন তারা।
তারা হলেন– মোহাম্মদ মাহতাবুর রহমান, মোহাম্মদ অলিউল রহমান, আব্দুল করিম, মোহাম্মদ আব্দুন নূর কাউছার, মোহাম্মদ এমাদুর রহমান, রিপন দত্ত, আব্দুল গনি চৌধুরী, বায়জুন নাহার চৌধুরী, মো. মনির হোসেন, কোরবান আলী, মোহাম্মদ আবু জাফর চৌধুরী, মোহাম্মদ এহসানুর রহমান, মোহাম্মদ মঈনুদ্দীন চৌধুরী, মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, মো. সোহেল রানা, মোহাম্মদ বদরুল ইসলাম, আবুল কালাম, মোহাম্মদ ফরিদ আহমেদ, মো. শফি, মোহাম্মদ নাজিম, মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, ফাহিম ফয়সাল, ফারিহা নওশিন, মোহাম্মদ সানাউল্লাহ চৌধুরী, মোহাম্মদ আশফাকুর রহমান, মোহাম্মদ মাহাবুব আলম, আব্দুল মোতালেব, মো. আনিস উদ্দীন, মোসাম্মাৎ জেসমিন আক্তার, মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন ও মোহাম্মদ সেলিম।
সরকারিভাবে বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবস্থা ও বিমানবন্দরে বিড়ম্বনা কমানোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী মাহাবুব আলম মানিক সিআইপি বলেন, এ পর্যন্ত আমরা দুই-তিনশ লোক বারবার সিআইপি হয়েছি। সরকারের কাছে আমাদের একটা দাবি আছে। আমরা অল্প সময়ের জন্য দেশে যাই। সরকার আমাদের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করলে ভালো হতো। সিআইপিদের সম্মানিত করলে সরকারই লাভবান হবে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী মোহাম্মদ আনিস উদ্দীন সিআইপি বলেন, আমিরাতে আমাদের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আমরা নিয়মিত দেশে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছি। এবার আমি দ্বিতীয়বারের মতো সিআইপি নির্বাচিত হয়েছি। মনে করি, এটা সরকারের পক্ষ থেকে আমার একটি প্রাপ্তি।
তিনি বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানে বেশিরভাগ কর্মী বাংলাদেশি, আমরা তাদের বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত করি।
বাংলাদেশ কনস্যুলেট দুবাই ও উত্তর আমিরাতের কনসাল জেনারেল বিএম জামাল হোসেন বলেন, এটা আমাদের জন্য আনন্দের সংবাদ যে পুরো পৃথিবী থেকে সর্বোচ্চ নির্বাচিত হয়েছে এই অঞ্চল থেকে। এটি প্রবাসীদের জন্য একটি সম্মানজনক উপাধি। তারা এখান থেকে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর স্বীকৃতি পেয়েছেন, আমি তাদের অভিনন্দন জানাই।
এদিকে চলতি বছরের অক্টোবরে প্রবাসীদের রেমিট্যান্সের রেকর্ড অল্পের জন্যে ২০০ কোটি ডলারের মাইলফলক ছুঁতে পারেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের দেশভিত্তিক রেমিট্যান্সের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, গত অক্টোবরে শুধু আমিরাত থেকে ৩২ কোটি ৯৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। অক্টোবরে প্রায় প্রতিটি দেশ থেকেই প্রবাসী আয় পেয়েছে বাংলাদেশ।