1. [email protected] : চলো যাই : cholojaai.net
সুন্দরবনের অলংকার বঙ্গবন্ধু দ্বীপ
বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ০১:৪২ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
সস্তায় বিদেশ ভ্রমণ: স্বপ্নকে সত্যি করার বিজ্ঞানসম্মত গাইড ব্রিটেনে ভিসা বদল, বাংলাদেশিদের জন্য কী পরিবর্তন ক্রিপটিক গর্ভাবস্থা – যখন নিজেই জানেন না আপনি গর্ভবতী পর্যটন ভিসায় বিদেশ গিয়ে কাজ করলে কী কী শাস্তি হতে পারে স্পা থেকে সিনেপ্লেক্স , যা যা আছে বিশ্বের সবচেয়ে বিলাসবহুল বিমানবন্দরে তিন বছরে পাঁচ লাখ কর্মী নেবে ইটালি, সুযোগ পেতে পারেন বাংলাদেশিরাও চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ইইউতে অভিবাসী কমেছে ২০ ভাগ, শীর্ষে বাংলাদেশিরা মালয়েশিয়ায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য সুখবর সমুদ্রপথে অবৈধভাবে ইউরোপ প্রবেশে শীর্ষে বাংলাদেশ ভারতের এই গ্রামে মেয়েদেরকে কাপড় ছাড়াই থাকতে হয়

সুন্দরবনের অলংকার বঙ্গবন্ধু দ্বীপ

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২৩

রায় মঙ্গল, মালঞ্চ, আড়পাঙ্গাসিয়া, মামুদ, বেতনা ইত্যাদি অসম্ভব সুন্দর নামের নদ-নদী যে বনের ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে, সেটি সুন্দর না হয়ে পারে! বিশাল এই বনের গাছপালা, জীবজন্তু— সবই সুন্দর বলেই হয়তো এর নাম সুন্দরবন।

নজরকাড়া প্রকৃতি, সুন্দর নদ-নদী নাকি নদী ও সাগরমোহনায় ভেসে থাকা অলংকারের মতো ছোট ছোট দ্বীপ— কোন কারণে যে এর নাম সুন্দরবন, সেটা নিয়ে বিতর্ক চলতেই থাকবে। সেই বিতর্ক চলুক। আমরা সুন্দরবনের এক রূপসী দ্বীপের গল্প বলি বরং, যার নাম বঙ্গবন্ধু দ্বীপ। এর আদি নাম বেহালা। অবশ্য মানুষ পুটনী দ্বীপ নামেও ডাকে।

নৌপথে গহিন অরণ্য পেরিয়ে গেলে দেখা মিলবে পুটনী দ্বীপের। এক-দুই মাইল নয়। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের সবশেষ উপজেলা সাতক্ষীরার শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জ থেকে পাক্কা এক শ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগর এবং আড়পাঙ্গাসিয়া নদীর মোহনায় জেগে আছে বঙ্গবন্ধু দ্বীপ।

শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জ এলাকাটি সুন্দরবনের কোলঘেঁষা। সাতক্ষীরা থেকে সুন্দরবনে যেতে হলে শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনী ফরেস্ট অফিস থেকে অনুমোদন নিতে হয়।
গহিন সুন্দরবনে বেশ কবার গিয়েছি। সাগরতীরে দুবলার চরে গিয়েছি ছয় বছর বয়সে। তবে সাতক্ষীরার শেষপ্রান্তে সুন্দরবন থেকে বঙ্গোপসাগর আগে দেখা হয়নি। সেই সুযোগ মিলে যায় এই মাসের ২ তারিখ।

আগের দিন ১ নভেম্বর, বুধবার রাতে মুন্সিগঞ্জ থেকে ছোট ট্রলারে চেপে সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়ায় রওনা হই। সঙ্গে জনা বিশেক মানুষ। সবাই শ্যামনগরের বাসিন্দা। আমাদের ট্রলারটিকে ছোটখাটো লঞ্চও বলা যেতে পারে। তাতে অতি ছোট কেবিন ছিল ছয়টি। কেবিন মানে আলাদা করে ঘেরা একটি খাট। কোনোমতে ওই খাটে দুজন ঘুমাতে পারবে। তিনটি খোপের মতো জানালা প্রতিটি কেবিনে। জানালার ধারে বসে আরাম করে নদীর বাতাস খেতে খেতে সুন্দরবন যাওয়া যায়।

রাত ১০টায় রওনা দিয়ে পরদিন ভোর ৬টায় পৌঁছাই মান্দারবাড়িয়ার কাছাকাছি। বুড়িগোয়ালিনী থেকে খোলেপটুয়া নদী হয়ে মালঞ্চ নদী, মামুদা নদী হয়ে জল ঘাট পেরিয়ে আড়পাঙ্গাসিয়া নদী হয়ে কালীরচরের পাশ দিয়ে মান্দারবাড়িয়া বন অফিসের ঘাটে পৌঁছে দেখলাম সকাল ৮টা বেজে গেছে!

মান্দারবাড়িয়া ফরেস্ট স্টেশন কার্যালয়টি বেশ সুন্দর। পাকা দোতলা বাড়ির মতো। তবে দোতলা নয়। নিচের দিকে ফাঁকা, পিলার দিয়ে উঁচু করা। ভরা বর্ষায় জোয়ারের পানিতে ডুবে যায়। তাই প্রায় ৮ ফুটের বেশ কটি পিলার উঁচু করে ভবনটি তৈরি হয়েছে। শ্যামনগর থেকে ৯৬ কিলোমিটার দূরে গহিন বনে এমন ভবন ভাবা যায়! ভবনের সামনে বড় নদী। তিন দিকে গহিন বন। সারা দিনেও জনা পাঁচেক মানুষ দেখা যায় কি না, সন্দেহ।

মান্দারবাড়িয়া ফরেস্ট স্টেশনে বন বিভাগের ছোট একটি পুকুর আছে। তাতে বৃষ্টির পানি জমে থাকে। মানুষ-বাঘ-হরিণ-বানর এই পুকুরের পানি খায়। এর একপাশ বেষ্টনী দিয়ে ঘেরা। অন্যপাশে বিকেল থেকে হরিণেরা দলবল নিয়ে পানি খেতে আসে। হরিণের সঙ্গে বানরও আসে। হরিণ-বানরের পিছু নিয়ে বাঘও মাঝে মাঝে আসে এখানে। পানি পান করে সময়-সুযোগ পেলে হরিণ আর বানরের ওপর হামলে পড়ে।

বঙ্গবন্ধু দ্বীপ। tছবি: সংগৃহীত

বঙ্গবন্ধু দ্বীপ। ছবি: সংগৃহীত

আশপাশে ট্রলারে চেপে ঘোরাঘুরি করে বিকেলে চলে যাই আরও দক্ষিণে। মান্দারবাড়িয়া স্টেশন থেকে আধা ঘণ্টার নৌপথ পেরোনোর পর দূর থেকে দেখলাম একটি দ্বীপ। কেউ বললেন এটি পুটনীর দ্বীপ। কেউ বললেন বেহালা।

দ্বীপের সামনের দিকে বড় সৈকত। এর পর সারি সারি গাওয়াগাছ প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়ে আছে। সৈকতের আরেক পাশে কাশফুল ফুটে আছে। আমাদের ট্রলারটি সুবিধামতো নোঙর ফেলল। তখন সূর্য পশ্চিম আকাশে ডুবে যেতে ব্যস্ত। আমিও তাই অপেক্ষা করলাম না। শেষ বিকেলের এই কনে দেখা আলোয় পুটনী দ্বীপের যতটা পারা যায় দেখব বলে সৈকতে পা দিয়েই ছুটতে লাগলাম।

সৈকতের বালুর মধ্যে অসংখ্য মরা গাছ আটকে আছে। ওদের বনের ভেতরও ঠাঁই হচ্ছে না, সাগরও কাছে টানছে না। সৈকতে যখন ঘুরে বেড়াচ্ছি দেখলাম একদল হরিণ পাতা খেতে এসেছে। আমি থেমে গেলেও সঙ্গীদের এগিয়ে আসা দেখে হরিণেরা লুকিয়ে গেল বনের ভেতর। মনে হলো, হরিণ যেহেতু আছে, বাঘও তো থাকতে পারে কাছে-পিঠে। ভাবতেই গা-ছমছম করতে লাগল।

সৈকতে বেশ কিছু কেয়াগাছ দেখতে পেলাম, যেমন দেখা যায় সেন্ট মার্টিনে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল বলে পুরো পুটনী দ্বীপ ঘুরে বেড়ানো হলো না। আমাদের ট্রলারটি যদি রাতভর পুটনী দ্বীপে থাকত! সেটি আর সম্ভব হলো না। তবে ট্রলারে ফিরে এলেও জোয়ারের অপেক্ষা করতে হলো। জোয়ারের পানির ছোঁয়া পেয়ে সন্ধ্যা ৭টার দিকে মেটের খালের দিকে রওনা দিলাম।

পুটনী দ্বীপ নিয়ে আগ্রহ বাড়তেই লাগল। রাতে না থাকার কারণও জানলাম। প্রায় ৮ বর্গমাইলের এই দ্বীপে বাঘ শুমারিতে চারটি বাঘের সন্ধান মিলেছে বলে জানালেন সুন্দরবনের অনেক বনজীবী। হরিণ আছে প্রচুর। সঙ্গে ঝাঁকে ঝাঁকে বানর। সাগর-নদীর মোহনায় পুটনী দ্বীপ থেকে প্রচুর মাছ ধরা যায়। তাই সাগর থেকে দুই মিটার উঁচু এই দ্বীপে মাছ শিকার করতে বহুদূর থেকে আসেন জেলেরা।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Developed By ThemesBazar.Com