রঙ তুলিতে আঁকা বর্ণিল সাজে সেজে আছে ইন্দোনেশিয়ার একটি গ্রাম। গ্রামের নাম রেইনবো ভিলেজ বা রংধনু গ্রাম। এক সময় গ্রামটি ছিল বেশ জরাজীর্ণ এবং নোংরা। মলিন সেই গ্রামটি আজ হয়ে উঠেছে লাখো পর্যটকদের আকর্ষণের মূল কারণ।
গ্রামটি খুব বিষণ্ণতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। গ্রামবাসীরা ছিল বিপন্ন। আর্থিক অস্বচ্ছলতায় ভুগছিল সকলে। বিষণ্ণতা থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজে বের করলেন সেই গ্রামের ৫৪ বছর বয়সী একজন শিক্ষক। নাম তাঁর স্ল্যামেট উইডোডো।
গ্রামটিকে ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইন্দোনেশিয়া সরকার। কিন্তু শিক্ষক নিজেদেরকে আরেকটি সুযোগ দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। তাঁর সেই একটি প্রচেষ্টায় বিবর্ণ এবং মলিন একটি গ্রাম হয়ে ওঠে বর্ণিল। শিক্ষার্থীদের নিয়ে উদ্যোগ নেন পুরো গ্রামকে রঙ করার। গ্রামের শৈল্পিক মানুষদের এক জোট করে রঙ তুলি কিনে শুরু করে দেন পুরো গ্রাম রঙ তুলিতে আঁকা।
রাস্তাঘাট, ঘর বাড়ি, বাড়ির দেয়াল, ছাদ, সিঁড়ি সব কিছু ফুটে উঠে নতুন রঙের ছোঁয়ায়। এক মাসের মধ্যে রঙ করা হয়ে যায় পুরো গ্রাম। রঙ তুলিতে আঁকা হয় বেশ কিছু কার্টুন চরিত্রও। বদলে যায় গ্রামের পুরো নকশা। নকশার সাথে বদলে যায় তাঁদের জীবন যাপন।
রাস্তাঘাট সাজানো হয় রঙিন ছাতা দিয়ে। দূর থেকে দেখতে রংধনুর মত রঙিন এই গ্রামটিকে তাই বলা হয় রংধনু গ্রাম বা রেইনবো ভিলেজ। গ্রামে বাড়ি রয়েছে প্রায় ২৩২টি। বিপন্ন গ্রামবাসী ফিরে পায় তাঁদের বাঁচার অস্তিত্ব। শুরু করেন নতুনভাবে জীবন যাপন।
এর পেছনের মূল কারণ পর্যটকদের আকর্ষণ। পর্যটকদের সমাগম প্রাণবন্ত করে তুলেছে গ্রামটিকে। প্রাণ ফিরিয়ে দিয়েছে গ্রামের মানুষদের। ফলে গ্রামের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি সাধন হয়েছে। পর্যটকরা রঙিন দেয়ালগুলোর সাথে ছবি তোলে। কিনে গ্রামবাসীদের নিজেদের তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র।
পর্যটকদের জন্য গ্রামের প্রবেশ মূল্য মাত্র ৫০ সেন্ট বা ৪২-৪৩ টাকা। আবার টিকিটের সাথে পর্যটকদের দেয়া হয় বিভিন্ন চাবির রিং বা নিজেদের হাতের তৈরি সামান্য কিছু উপহারও। এককালের উচ্ছেদপ্রায় গ্রামটি আজ বিশ্ববাসীর আকর্ষণের বিষয় হয়ে উঠেছে।
লামিয়া আলম